ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

সাইকেলে সারাদেশ ঘুরে এলেন আশিষ কুমার

তাসনীমুল হাসান মুবিন  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৩০, ২৮ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৫:৪১, ২৮ জানুয়ারি ২০২১
সাইকেলে সারাদেশ ঘুরে এলেন আশিষ কুমার

ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়, এই কথার জ্বলন্ত উদাহরণ ময়মনসিংহের ‘কমিউনিটি বেজড মেডিক্যাল কলেজ বাংলাদেশ (CBMCB)’ থেকে সদ্য পাস করা শিক্ষার্থী আশিষ কুমার মোদক। তিনি দুই চাকার সাইকেলে ছুটে চলেছেন দেশের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে।

গত ২৬ জানুয়ারি তিনি ৬৪ জেলা তথা সারা বাংলাদেশ ভ্রমণ শেষ করে নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে একটি পোস্ট করেন এবং সেখানে বর্ণনা করেন ৬৪ জেলার ভ্রমণ কাহিনী।

তিনি লিখেন- আমি ডা. আশিষ কুমার মোদক, ‘কমিউনিটি বেজড মেডিক্যাল কলেজ, বাংলাদেশ (CBMCB, Mymensingh)’ থেকে এমবিবিএস শেষ করি। থার্ড প্রফের পর থেকে আমি সাইক্লিং শুরু করি। তারপর আমার সারা বাংলাদেশ সাইকেলে ঘোরার একটা স্বপ্ন পেয়ে বসে।

ফাইনাল প্রফ পরীক্ষার পর ৬৪ জেলা ঘুরে শেষ করার একটা পরিকল্পনা অনেক আগে থেকেই করা ছিল। আমার ভ্রমণের উদ্দেশ্য দেশকে জানা, দেশের প্রতিটি জেলার দর্শনীয় স্থানগুলো দেখা, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে মেশা। আমার অবস্থান থেকে যথেষ্ট পরিমাণ সময় নিয়ে ভ্রমণ করার চেষ্টা করেছি।

কতদিন লাগবে এটার চেয়ে, কতটা বেশি সময় নিয়ে দেশকে দেখবো সেটাকেই গুরুত্ব দিয়েছি।খুলনা থাকতে আমার এমবিবিএস এর রেজাল্ট দিয়েছিলো,এর আগে যথেষ্ট পরিমাণ সময় নিয়ে প্রায় সবগুলো জেলার দর্শনীয় স্থানে যাওয়ার চেষ্টা করেছি।

আমার এই ৬৪ জেলার ভ্রমণের প্রধান স্লোগান ছিল ‘গাছ লাগান, পৃথিবী বাঁচান’ এমন স্লোগান নিয়ে অনেকে গেলেও সময় সুযোগের অভাবে গাছ লাগাতে পারে না।

তবে আমি নিজ খরচে ৫০ জেলায় ২০০ এর বেশি গাছ লাগিয়েছি। গাছগুলো লাগিয়েছি স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি, মেডিকেল কলেজ, দর্শনীয় স্থান, মাদ্রাসা ও মসজিদে। এমন স্থানে গাছ লাগিয়েছি, যেন গাছগুলো নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। আশা করি সব গাছই যথেষ্ট পরিচর্চা পাবে।

এভাবে সাইকেলে ট্রাভেলিং করে আবার গাছ লাগানো একটা বাড়তি ঝামেলা মনে হতে পারে। তবে আমি এই ঝামেলাটাকে খুবই উপভোগ করেছি, সবার কাছে ভালোবাসা এবং দোয়া পেয়েছি। কাজটার প্রসংশা করেছেন সব বয়সের, সব পেশার মানুষ। এটাই আমার এবারের ভ্রমণের সবচেয়ে বড় অর্জন।

আমি দেশ ভ্রমণ করেছি দেশের অদেখা সৌন্দর্যগুলো দেখার জন্য, অজানা কিছু জানার উদ্দেশ্যে। এই ভ্রমণে আমি আমার পরিবার থেকে যথেষ্ট সাপোর্ট পেয়েছি, আমার পরিবারের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।

সারাদেশে সবার কাছে অনেক সাপোর্ট, উৎসাহ এবং সহযোগিতা পেয়েছি। সবাইকে হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আর যার কাছে সবচেয়ে বেশি সাপোর্ট, উৎসাহ এবং সহযোগিতা পেয়েছি আমার বন্ধু Mohammad Sabbir Hossain (উল্লেখ্য, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সাব্বির হোসেনও সাইকেলে সারাদেশ ভ্রমণ সম্পন্ন করেছে)।

যেহেতু মেডিক্যালে পড়তাম, তাই একাডেমিক ছুটি একটু কম হওয়ায় ঈদ এবং পূজার ছুটিতে সিলেট বিভাগ এবং উত্তরবঙ্গের কিছু জেলাসহ ২২টি জেলা আগে ঘুরে রাখছিলাম। এবার ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষা ২৫ নভেম্বর শেষ হওয়ার পর একদিন বিশ্রাম নিয়ে ২৭ নভেম্বর আমার দ্বিচক্রযানটি নিয়ে বেরিয়ে পড়ি দেশ দেখার নেশায়।

আজ ২৬ জানুয়ারি কক্সবাজারের মাধ্যমে আমার ৬৪ জেলা ঘোরা শেষ হলো। হ্যাঁ, আমি পেরেছি, সুস্থভাবে এবং কোনোরকম দুর্ঘটনা ছাড়া আমার মিশন শেষ হয়েছে। দেশ সফর শেষ, এবার শুরু হবে পেশাগত সফর।

আমি ডাক্তার হয়েছি, সবাই দোয়া করবেন, যেন পেশাগত সফরে সফলতা অর্জন করতে পারি। বড় ডাক্তার হতে পারি আর না পারি, ভালো ডাক্তার যেন হতে পারি। দোয়া করবেন, আমি যেন আমার জীবনে প্রতিটি রোগীকে নিজের পরিবারের মতো মনে করে সেবা করতে পারি এবং প্রতিটি রোগীই যেন আমার কাছে চিকিৎসা নেওয়া শেষে আমাকে উনাদের পরিবারের মানুষ মনে করেন।

আমার জন্য, আমার বাবা-মায়ের জন্য সবাই দোয়া করবেন। আমার ভ্রমণের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল- গাছ লাগান, পৃথিবী বাঁচান, করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে, সতর্ক হোন।

লেখক: সদ্য বিদায়ী শিক্ষার্থী, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজ।

ময়মনসিংহ/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়