ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

দেশ-বিদেশে ভালোবাসা দিবস উদযাপন

মো. মঈন ঊদ্দিন সাব্বির || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০৩, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১১:০৭, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১
দেশ-বিদেশে ভালোবাসা দিবস উদযাপন

এমনকি কোনো মানুষ রয়েছে যে ভালোবাসা চায় না? খুঁজে একজনও হয়তো পাওয়া যাবে না। ভালোবাসা এমনই এক বিষয়, যা শিশু থেকে শুরু করে আবালবৃদ্ধবনিতা সবার চায়। পানির অভাবে যেমন গাছ শুকিয়ে হয় চৌচির, তেমনি ভালোবাসার অভাবে মানব হৃদয় হয় মরুভূমি। ভালোবাসা হচ্ছে আনন্দ নিয়ে বেঁচে থাকার অন্যতম মানবিক নিয়ামক।  

আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘বিশ্ব ভালোবাসা দিবস’। শুধু তরুণ-তরুণী নয়, নানা বয়সের, নানা সম্পর্কে থাকা মানুষের ভালোবাসার বহুমাত্রিক রূপ প্রকাশের আনুষ্ঠানিক দিন এটি। এ দিবস যেমন মা-বাবার এবং সন্তানের একে-অপরের, ভাইবোন, স্বামী-স্ত্রীর, প্রেমিক-প্রেমিকার, বন্ধুর প্রতি বন্ধুর, মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসার জয়গানে আপ্লুত হওয়ার দিন। চলবে উপহার দেওয়া-নেওয়া। কিন্তু শুধু একটি দিন ভালোবাসার জন্য কেন? এ প্রশ্নে কবি নির্মলেন্দ গুণের ছোট জবাব, ‘ভালোবাসা শুধু একটি বিশেষ দিনের জন্য নয়। সারাবছর, সারাদিন ভালোবাসার’।

ভালোবাসা দিবসের নামকরণ ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ হওয়ার ক্ষেত্রে রোমানদের ভূমিকা রয়েছে। ২৭০ সালের কোনো এক সময় রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্লদিয়াস সাম্রাজ্যের তরুণদের বিয়ে না করার নির্দেশ দেন। কিন্তু সম্রাটের আদেশ অমান্য করে ভালোবাসার বাণী প্রচার শুরু করেন ভ্যালেন্টাইন নামে এক সাধু। সম্রাটের নির্দেশ অমান্যের শাস্তিস্বরূপ সাধু ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। পঞ্চম শতাব্দীর মাঝামাঝি, পোপ গেলাসিয়াস রোমানদের বর্বর উৎসবের ইতি টানা এবং সাধু ভ্যালেন্টাইনের আত্মত্যাগকে স্মরণীয় করার উদ্দেশ্যেই ফেব্রুয়ারি মাসের ১৪ তারিখকে ভালোবাসা দিবস ঘোষণা করেন। 

বিশ্বব্যাপী খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের মধ্যে যা দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। অবশ্য বর্তমান যুগে ভালোবাসা দিবসকে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার কৃতিত্বটা শুভেচ্ছা কার্ড তৈরিকারী প্রতিষ্ঠান হলমার্কের। ১৯১৩ সাল থেকে হলমার্ক যখন ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে হাজার হাজার কার্ড তৈরি শুরু করে, মূলত তখন থেকেই দিবসটির কথা ব্যাপকভাবে প্রচার পায় এবং ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের প্রতিটি দেশে।

বাংলাদেশে তারুণ্যের অনাবিল আনন্দ আর বিশুদ্ধ উচ্ছ্বাসে ভালোবাসা দিবস পালিত হয়। ভালোবাসার উৎসবে মুখর হয় রাজধানী। এ উৎসবের ছোঁয়া লাগে গ্রাম-বাংলার জনজীবনেও। মুঠোফোনের মেসেজ, ই-মেইল অথবা অনলাইনের চ্যাটিংয়ে প্রেম-ভালবাসার আবহে হয় পল্লবিত। চকলেট, পারফিউম, গ্রিটিংস কার্ড, হীরার আংটি, প্রিয় পোশাক অথবা বইসহ ইত্যাদি শৌখিন উপঢৌকন উপহার দেওয়া হয় প্রিয়জনকে। সাথে থাকে ছোট্ট চিরকুট আর তাতে দু’ছত্র গদ্য অথবা পদ্য হয়ে উঠতে পারে উপহারের অনুষঙ্গ। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবং বিভিন্ন পাবলিক প্লেসে আয়োজন করা হয় অনুষ্ঠান এবং গানের কনসার্ট। তরুণরা সেজে ওঠেন বাসন্তী সাজে। বয়স্করা নিরিবিলিতে সময় কাটাতে পছন্দ করেন তাদের প্রিয়জন নিয়ে। পাঞ্জাবি, শাড়ি, ফুল কিংবা বই উপহার হিসেবে দেন একে-অপরকে। চলে পুরনো দিনের স্মৃতিচারণ। এই মাসে বইমেলা এবং বসন্ত উৎসব থাকার কারণে মেলার সঙ্গে ঘটে প্রাণের মেলবন্ধন।

বাইরের দেশ ডেনমার্কে ১৯৯০ সাল থেকে এই দিনটিকে উৎযাপন করে সরকারি হলিডে হিসেবে। ফুল, চকলেট, কার্ড দেওয়া বাদেও ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে সাদা শুভ্র স্নো-ফলস নামের ফুল দেওয়া হয় একে-অপরকে। তাছাড়া আরেকটি জনপ্রিয় ঐতিহ্য হচ্ছে লাভার্স কার্ড আদান-প্রদান। এটি একটি স্বচ্ছ শুভেচ্ছা কার্ড, যেখানে প্রদানকারীর ছবি এবং ভালোবাসার অনুভূতির কথা লেখা থাকে।

ফ্রান্সকে বিশ্বের অন্যতম রোমান্টিক শহর হিসেবে গণ্য করা হয়। ফুল, উপহার, কার্ড দিয়ে ভালোবাসা প্রকাশ করাসহ এই দেশের একটি আলাদা ঐতিহ্য হচ্ছে ‘loterie d'amour কিংবা  "drawing for love। একটি বড় ঘরে তরুণ তরুণীরা এসে জমায়েত হয় এবং সেখান থেকে তারা তাদের পছন্দসই মানুষ বেঁছে নেয়। তাছাড়া তাদের আরেকটি ঐতিহ্য হচ্ছে Bonfire যেখানে ভাঙা হৃদয়ের মানুষেরা তাদের পুরনো সঙ্গীর ছবি প্রজ্জলিত আগুনে ছুড়ে ফেলে নতুনভাবে বাঁচার শপথ নেয়। এই প্রথা এতই বেশি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে যে, ফ্রান্স সরকার কর্তৃক এটিকে নিষিদ্ধ করতে বাধ্য হয়।

দক্ষিণ কোরিয়াতে ভালোবাসা দিবস তরুণদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় দিবস। বিভিন্ন ব্যতিক্রমী আয়োজনের মধ্য দিয়ে ২ মাসব্যাপী চলে এই আবহ, যা শুরু হয় ১৪ ফেব্রুয়ারি দিয়ে আর শেষ হয় ১৪ এপ্রিল। উদযাপন শুরু হয় ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে বিভিন্ন দিনে নারীদের তাদের পছন্দের পুরুষদের প্রতি অনুভূতি জানানো, উপহার, ফুল, চকলেট দিয়ে মুগ্ধ করার মাধ্যমে। ১৪ মার্চ থেকে শুরু হয় পুরুষদের থেকে নারীদের প্রতি উপহার দিয়ে ভালোবাসার জানান দিয়ে মুগ্ধ করা। আর যারা সিঙ্গেল থাকেন, তাদের জন্য রয়েছে ১৪ এপিল, যা তারা ব্ল্যাক-ডে হিসেবে একা থাকার শোকপালন করেন।

ফিলিপাইনে ভালবাসা দিবস উৎযাপন করা হয় পশ্চিমা দেশগুলোর মতই । তবে বিগত কয়েক বছরে তাদের সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে এই দিনে হাজারের উপর দম্পতির বিয়ে করার। শপিংমল কিংবা বড় কোনো জায়গায় জমায়েত হয়ে ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ এবং বিয়ে করা যেন তাদের উৎসবের নতুন এক মাত্রা।

ইতালিতে ভালোবাসা দিবস উদযাপন করা হয় বসন্তের উৎসব হিসেবে। বাইরের কোথাও একত্রে ক্যান্ডেল লাইট ডিনার করা বিশেষ করে সবুজ পরিবেশের কাছাকাছি, নিরিবিলিতে বসে কবিতা পাঠ কিংবা পছন্দের গানশোনা, একে-অপরের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ করা চলে এই দিনে। তাছাড়া দম্পতিদের একে-অপরকে উপহার বিনিময় তো রয়েছেই।

ব্রাজিলে ১৪ ফেব্রুয়ারি এর পরিবর্তে ১২ জুনে লাভার্স ডে হিসেবে পালন করা হয়। এদিন উপহার এবং চকলেট দেওয়া-নেওয়া, বন্ধুবান্ধব এবং ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে ডিনার করা, গানবাজনা বাজিয়ে দেশব্যাপী উদযাপন করা হয়।

দক্ষিণ আফ্রিকাতে ভালোবাসা দিবসের সংস্কৃতি কিছুটা ভিন্ন। উপহার, চকলেট, একত্রে রোমান্টিক ডিনার ডেটের পাশাপাশি তারা এদিন তাদের জামার হাতায় হার্টশেপের লকেট এবং ভালোবাসার মানুষের নাম পিন দিয়ে আটকে রাখে, এটা প্রাচীন রোমাণ সংস্কৃতির একটি অংশ যা Lupercalia নামে পরিচিত। এতে করে আফ্রিকান পুরুষেরা তাদের গোপণে ভালোবাসা নারীর ব্যাপারে জানতে পারে।

ধর্মীয় রীতিনীতি কঠোরভাবে মানার কারণে ইরান, ইন্দোনেশিয়া, সৌদিআরব, মালয়েশিয়া, পাকিস্থানসহ আরব দেশগুলোতে রয়েছে ভালোবাসা দিবস উদযাপনে নিষেদ্ধাজ্ঞা বিশ্বজুড়ে যে যেভাবেই ভালোবাসা দিবস উদযাপন করুক না কেন, পাশ্চাত্যের সঙ্গে এশিয়ান মহাদেশগুলোতেও যে এটি দিন দিন বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে, আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় তা বলা বাহুল্য।

ঢাকা/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়