ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

তোলারাম কলেজ শিক্ষার্থীদের ভাষা ভাবনা

মাসুম পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০০, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৩:১৯, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১
তোলারাম কলেজ শিক্ষার্থীদের ভাষা ভাবনা

ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতির আত্মত্যাগের মাস। শ্রদ্ধা আর অহঙ্কারের মাস। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর চাপিয়ে দেওয়া উর্দু ভাষাকে উপেক্ষা করে প্রাণ উৎসর্গ করেছিলেন সূর্যসন্তানরা। তাদের তাজা রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি প্রিয় মাতৃভাষা বাংলা। বিশ্বে বাঙালিই একমাত্র জাতি, যারা ভাষার জন্য জীবনকে উৎসর্গ করেছেন অকাতরে। 

একুশ শেখায় কারো কাছে মাথানত না করা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা ও আত্মমর্যাদা রক্ষায় ত্যাগ স্বীকার করা। ৫২’র ভাষা আন্দোলনে প্রেরণা পান এ দেশের আপামর জনসাধারণ, বিশেষ করে তরুণরা। মহান এ ভাষার মাসে বাংলা ভাষাকে নিয়ে সরকারি তোলারাম কলেজের কয়েকজন তরুণ শিক্ষার্থীর ভাবনা, মতামত ও প্রত্যাশা তুলে ধরেছেন একই কলেজের শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক মাসুম পারভেজ।

নিরব রায়হান

‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’৷ আমরা এটা কেবল বলিই কিন্তু সোনার বাংলাকে আদতে ভালোবাসতে কজন শিখেছি! কজন শিখেছি বাংলার মুক্তির হাতিয়ার বাংলা ভাষাটাকে হৃদয়ে আগলে ধরতে। হ্যাঁ আমি বাংলা ভাষাকে বাংলার প্রধান হাতিয়ার হিসেবেই ধরেছি। কেননা এই বাংলার মুক্তি, বাংলা ভাষা থেকেই এসেছে। যে বাঙালি বীরেরা মুখের ভাষাকে বিলীন হতে দেয়নি, সে বীরেরা কী করে দেশের মাটিকে বিলীন হতে দেয়? আমরা পেয়েছি সোনার বাংলা, পেয়েছি মায়ের ভাষা বাংলা। 

এসেছে একুশ থেকে একাত্তর। আর একাত্তর থেকে আজকের আমরা স্বাধীন বাঙালি। যে ভাষার জন্য আমরা আমাদের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছি, সে ভাষায় চলছে অহরহ অপব্যবহার। সংস্কৃতির নামে অপসংস্কৃতি দিয়ে বাংলা ভাষা এখন রাজর্ষির মতো। ঐতিহ্যের এই বাংলা ভাষার ঐতিহ্যকে আমরা বিনষ্ট করছি৷ রফিক, জব্বারের সেই আত্মত্যাগ আমাদের স্পর্শ করে না। স্পর্শ করে না ৫২’র সেই প্রথম শহীদ মিনার। হৃদয়ে মিছিল উঠে না বাংলা প্রেমের৷

বিথী ইয়াসমিন

আমার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যেত না, আজ যদি এই প্রাণের ভাষায় কথা বলতে না পারতাম। হ্যাঁ, আমি বাংলা ভাষার কথাই বলছি। ভাষা শব্দটি মুখ ফুটে বের হতেই আমার শরীরের সমস্ত রক্তের মধ্যে একটা শিহরণে শিহরিত হয়ে ওঠে। যদিও সারাক্ষণ খুব স্বাচ্ছন্দ্যেই এই প্রাণের ভাষাই ব্যবহার করে আসছি, তবুও ভাষার কথা বা ভাষার মাস আসলেই ভয়ঙ্কর এক অনুভূতিতে গা ছমছমিয়ে ওঠে। যেদিনের পর থেকে এই ভাষাতে পেয়েছিলাম কথা বলার পূর্ণ তৃপ্তি।

শ্রাবণ আহমেদ আলিম

আমরা যে ভাষায় কথা বলি, সে ভাষা হলো আমাদের মায়ের ভাষা। এই ভাষাতে ছোটবেলা থেকে কথা বলতে শিখেছি। এ মাতৃভাষায় মানুষ তার মনের ভাব সবার কাছে সুন্দরভাবে প্রকাশ করতে পারে। অফিস-আদালত, মিল-কারখানা, সব জায়গাতে দেখি ইংলিশ, বা বাংলিশভাবে ভাষাকে ব্যবহার করা হচ্ছে। আমরা নিজেরা কি একটু নিজের ভাষাতে সবকিছু লিখতে, পড়তে পারি না? 

ইংরেজি ভাষা জানতে হবে, কারণ এটা একটি আর্ন্তজাতিক ভাষা, তাই বলে আমার ভাষার চাইতে দামি না। চায়নাকে দেখো, জাপানকে দেখো, বা অন্য দেশকে দেখো সবকিছুতেই ওদের মাতৃভাষা ব্যবহার করে, তবে আমরা কেন বাংলা না বলে কথায় কথায় ইংলিশ বলি। কেন? পৃথিবীর বুকে যদি কোনো ভাষাতে সহজভাবে মনের ভাব প্রকাশ করা যায়, সেটা আমার বাংলা ভাষা। 

শাহরিয়ার শাকিল

ভাষা শুধু মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যম নয়, ভাষা বাংলার মানুষের সত্তা, অস্তিত্ব, অনুভূতি। এই ভাষা আমাদের হৃদয়ের প্রেম, ভালোবাসা, আবেগগুলো আমাদের প্রিয় মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যম। ভাষা আমাদের বেঁচে থাকার একমাত্র আশা, আমাদের শক্তি। একমাত্র আমরা বাঙালিরা আমাদের ভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছি এবং কখনো আমাদের ভাষার সম্মান নিয়ে প্রশ্ন উঠলে জীবন দিয়ে রক্ষা করবো তার সম্মান। 

আফরাসীম আহমেদ

মায়ের মুখে শেখা ভাষাই মাতৃভাষা। একটা শিশু যখন আধো আধো কথা বলতে শেখে, তখন থেকেই মায়ের ভাষা তার ভাব প্রকাশের অবলম্বন হয়ে ওঠে। প্রতিটি জাতিরই মাতৃভাষা আছে। আমাদের মাতৃভাষার নাম বাংলা। যে নামের সাথে জড়িয়ে আছে অনেক সংগ্রাম, ত্যাগ তিতিক্ষা ভালোবাসা। ১৯৫২ সালের ২১ এ ফেব্রুয়ারি ঢাকার রাজপথে বুকের রক্ত দিয়ে মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষা করে বাংলার দামাল ছেলেরা। রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি পায় বাংলা, অবশেষে দেশ কাল ছাপিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি জায়গা করে নেয় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে, ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করা হয়। সেদিন স্বীকৃতি পায় বাংলা ভাষা আর একটি ভাষা দিবস পায় গোটা বিশ্ব। 

মায়ের ভাষায় কথা বলতে পারাটা আনন্দের আর এ ভাষা অর্জনের পেছনে যদি এমন গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস থাকে, তা নিঃসন্দেহে গর্বের এবং অহঙ্কারের বিষয়। আমাদের দেশের ৬৪ জেলায় বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষা রয়েছে, দেখা যায় অনেকেই বাইরের লোকের সামনে তাদের নিজস্ব আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতে ইতস্তত বোধ করেন। কিন্তু আমি মনে করি, তাদের সগৌরবে নিজের ভাষায় কথা বলা উচিৎ। 

ইমরান হোসাইন ইমু

আপনি যদি গুগলে "Most Sweetest Language In The World" লিখে সার্চ করেন, তাহলে দেখবেন, ইউনেস্কোর সার্ভে অনুযায়ী বাংলা ভাষাকেই তারা পৃথিবীর 'Sweetest' ভাষা বলে অভিহিত করেছে। বাংলা ভাষার গণ্ডি বাংলাদেশ বা পশ্চিমবঙ্গ ছাপিয়েও বিশ্বের দরবারে পৌঁছে গেছে অনেক আগেই। অনেক বিদেশিও বাংলার চর্চা করছেন। তাদের মধ্যে একজন হলেন জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হান্স হার্ডার। 

তিনি বাঙালির মতো বাংলায় কথা বলতে পারেন এবং বাংলা ভাষা নিয়ে গবেষণা করছেন। আমার মতে, ভাষার সমৃদ্ধি তখনই আসে, যখন সে দেশের শিল্পের স্বাধীনতা পরিপূর্ণতা পায়। শিল্প ছাড়া ভাষা অচল। আবার ভাষা ছাড়া শিল্পের বহিঃপ্রকাশ অসম্ভব। সাহিত্য, চারুকলা, সিনেমা হতে শিল্পের সব শাখায় যদি  শিল্পীরা স্বাধীনচেতা হয়ে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারেন, তাহলেই বাংলা ভাষা বিশ্ব দরবারে সমাদৃত হবে।

ঢাকা/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়