ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ভাষার প্রতি সব অবহেলার অবসান ঘটুক

সানাউল্লাহ আল ফাহাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩৬, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১  
ভাষার প্রতি সব অবহেলার অবসান ঘটুক

বাংলাদেশের ইতিহাসে ফেব্রুয়ারি মাস অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রাণ দিয়েছিল এ দেশের তরুণ ছাত্রসমাজ ও জনতা। তাদের বুকের তাজা রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল ঢাকার রাজপথ। বাঙালি জাতির কাছে বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে প্রেরণার মাস ফেব্রুয়ারি। প্রাণের ভাষাকে তরুণ প্রজন্ম আজও ভালোবাসে, অনুভব করে মন থেকে। ভাষার মাসে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের ভাবনা ও প্রত্যাশা তুলে ধরেছেন সানাউল্লাহ আল ফাহাদ।

নাঈম রাজ, নাট্যকলা বিভাগ, চতুর্থ বর্ষ

ভাষা একটা জাতিসত্তার বহিঃপ্রকাশ। বাংলা ভাষা শুধু আমাদের মাতৃভাষাই নয়, এটি আমাদের অস্তিত্বের মেরুদণ্ড। প্রতিটি ভাষায় চলমান স্রোতের মতোই খরস্রোতা হলেও ভাষার একটা নিজস্ব তাল, লয়, ছন্দ থাকে। যেগুলো সচেতনভাবে ব্যবহার না করলে এবং যত্ম করা না হলে ভাষার আসল সত্তার গন্ধ কালের মালা বদলে বিলীন হয়ে যাবে। এত রক্ত, এত সংগ্রাম, এত ত্যাগের বিনিময়ে অর্জন করা আমাদের মাতৃভাষা আজ সীমান্তরেখা পেরিয়ে পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে যার সুবাস ছড়িয়ে পড়েছে, সে তো অমূল্য রতন! অহঙ্কারের বসন। ভাষার মাসে আমার এতটুকুই আহ্বান আসুন বাংলা ভাষার সঠিক চর্চা ও ব্যবহার করি।

জয়ন্তী জয়া, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, দ্বিতীয় বর্ষ 

প্রতিবছর ভাষা আন্দোলনের বেদনা বিধুর স্মৃতি ও সংগ্রামী চেতনার অমিয় ধারাকে বহন করে গৌরবোজ্বল একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের দ্বারে ফিরে আসে। ভাষা আন্দোলনের মতো বিশেষ ঘটনা ও ভাষার জন্যে সালাম, জব্বার, রফিক, জব্বারদের আত্মত্যাগ সুদূর প্রসারী তাৎপর্য বহন করে আমাদের জীবনে। এই তাৎপর্য কোনো নির্দিষ্ট জাতি কিংবা ভাষা গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং তা সব সীমানা পেরিয়ে আজ সাংস্কৃতিক বিশ্বায়ন। বাংলা শুধু একটি ভাষা নয়, বাংলা জুড়ে আছে আমাদের আবেগ, অনূভূতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য আর সংগ্রাম। বর্তমান আধুনিক সভ্যতা আর পশ্চিমা সংস্কৃতির করাল গ্রাসে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে বাংলা ভাষার মর্যাদা। আমাদের ভাষা শহীদরা যে চেতনা বুকে ধারণ করে ভাষা আন্দোলনে আত্মত্যাগ করেছিল, তার কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে, সঙ্গত কারণেই এ প্রশ্ন আজ জাতির কাছে।

জুনায়েদ সাব্বির, রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগ, চতুর্থ বর্ষ

ফেব্রুয়ারি নিঃসন্দেহে বাঙালি জাতির এক গৌরবময় ও ঐতিহ্যের মাস। আমাদের জাতীয় জীবনে সকল চেতনার উৎস এই মাসটি। প্রতি বছরই আমরা গেয়ে থাকি 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী' বাঙালিই এক মাত্র জাতি যারা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে। এটি আমাদের বাঙালি জাতির অত্যন্ত গর্বের ও আনন্দের। বাঙালির রক্তঝরা এই একুশে ফেব্রুয়ারি বর্তমানে সারাবিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করেছে। তবে এটিও বলার অপেক্ষা রাখে না যে, রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই বাংলা ভাষার প্রতি অবমাননা দিন দিন বেড়েই চলেছে আমাদের দেশে। 

পাঠ্যপুস্তক থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে, ব্যানারে মানা হচ্ছে না বানানরীতি। তাছাড়া অনেক ক্ষেত্রে বাংলার পরিবর্তে ইংরেজিকেই দেওয়া হয় অধিক গুরুত্ব। একজন বাঙালি নাগরিক হিসেবে আমার প্রত্যাশা বাংলা ভাষার প্রতি সব অবহেলার অবসান ঘটুক।

ঋতু সাহা, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, দ্বিতীয় বর্ষ

ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। ১৯৫২ সালে একুশে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ঢাকার রাজপথে জীবন উৎসর্গ করা স্মৃতি বাঙালির মনে এই মাসে সবচেয়ে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ ঘোষণা করে। এর মধ্যে দিয়ে একুশে ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হয়। তাই এত কিছুর মধ্যে আমরা যেই ভাষা পেয়েছি, আমাদের সেই ভাষাকে তা সঠিক মর্যাদা দেওয়া উচিত।

মো. শাহারিয়ার, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, দ্বিতীয় বর্ষ

বাংলা আমার মায়ের ভাষা। ২১ ফেব্রুয়ারি আমাদের গৌরবের, এটা আমাদের প্রত্যয় ও প্রত্যাশার। তদানীন্তন পাকিস্তানের অধিকাংশ মানুষের মুখের ভাষা বাংলাকেও উর্দুর সাথে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে বিশেষ করে ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ পর্যন্ত ভাষা আন্দোলন হয়েছিল। এরপর গৌরবময় ৬৮টি বছর পেরিয়ে গেছে। রাজনৈতিক বহু পটপরিবর্তন হলেও একুশের শিক্ষা আজও আমাদের জন্য প্রাসঙ্গিক ও কার্যকর। 

একুশকে আমরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরতে আবারো সদা সচেষ্ট থাকবো। বাংলা ভাষা এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। এখানে আর রাষ্ট্রভাষা নিয়ে সমস্যার প্রশ্নই ওঠে না। তবু আজ প্রত্যেকে নিজের মনকে জিজ্ঞাসা করেন ভাষা আন্দোলনের লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে কতটুকু? সর্বস্তরে বাংলার প্রচলন তো নেই, বরং অবস্থা দেখে আশঙ্কা হয়, ইংরেজি ভাষার দাপটে স্বদেশেই বাংলা ভাষার কী হবে। তাই এখনই আমাদের সবাইকে একুশের পথ ধরে আমাদের নিজস্ব ধারায় বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিকাশ ঘটাতে হবে এবং শুদ্ধ বাংলা ভাষার চর্চা করতে হবে।

নাদিয়া সুলতানা, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, প্রথম বর্ষ 

পৃথিবীতে ভাষার লড়াইয়ে এমন রক্তক্ষরণের ইতিহাস রচনাকারী মাতৃভাষার অধিকার লড়াইয়ের বিপ্লবী জাতি হলাম একমাত্র আমরা। তবে এত কষ্টের অর্জিত এই রত্নসম মাতৃভাষার যথার্থ সম্মান দিতে আমরা বেশিরভাগ বাঙালিই অক্ষম। আজকাল আমাদের মধ্যে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি-প্রেমের পাশাপাশি পাশ্চাত্য ভাষার প্রতিও মোহ প্রবলভাবে লক্ষণীয়। তরুণ প্রজন্ম ইংরেজিতে কথা বলাটাকেই একমাত্র তথাকথিত ‘স্মার্টনেস’ বলে জ্ঞান করছে আর বাংলায় কথা বললে ভাবছে সেটা তথাকথিত ‘ক্ষ্যাত’ মানসিকতার পরিচায়ক, যা বাংলা ভাষার পক্ষে যথেষ্ট অপমানজনক এবং দুঃখজনক বলে মনে করি।

জবি/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়