ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

করোনাকালে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য 

মো. মঈন ঊদ্দিন সাব্বির || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২৭, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৩:৫০, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১
করোনাকালে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য 

চলমান অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে মানুষের দুশ্চিন্তা। শিক্ষার্থীরাও রয়েছেন এই সারিতে। সুস্থ মানসিক অবস্থা এবং সঠিক গাইডলাইনের অভাবে জীবনে অগ্রসর হতে তৈরি হচ্ছে হতাশা, ভয় ও উদ্বেগ।

ক্লাস খোলা, ক্লাস বন্ধ, অনলাইনে ক্লাস এমন বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। আদৌ কবে প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা হবে ও স্বাভাবিক অবস্থায় সবাই ফেরত যাবেন এ ব্যাপারে কেউ নিশ্চিত নন। কোর্স সম্পন্ন করতে অন্য শিক্ষার্থীদের তুলনায় বেশ লম্বা সময় প্রাপ্তি এবং ভিন্ন পরিবেশের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছেন সবাই। শিক্ষাব্যবস্থায় চলে এসেছে পরিবর্তন, এর প্রভাব পড়েছে শিক্ষার প্রতিটি স্তরের স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে। 

Dr. Sadie Hollins কাজ করছেন থাইল্যান্ডের ব্রিটিশ আন্তর্জাতিক স্কুলের Head of sixth form হিসেবে। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের মাঝে মানসিক অবস্থার পরিবর্তন শুরু হয় যখন সে তার জীবনের এক ধাপ থেকে আরেক ধাপে পদার্পণ করে। নতুন পরিবেশ এবং অপরিচিত মানুষের মাঝে খাপ খাইয়ে নেওয়া, নিজেকে প্রস্তুত করা এসব বিষয়গুলো একটি শিক্ষার্থীকে গভীরভাবে ভাবিয়ে তোলে। 

বিশেষ করে যারা উচ্চশিক্ষা গ্রহণে নিজ দেশের বাইরে যান, তারা নিজের সাথে অনেকটা সংগ্রাম করে থাকেন। করোনা পরিস্থিতি ছাড়াও এটা স্বাভাবিক সময়েও দেখা যায়। তাল মেলাতে না পেরে অনেকে দেশে ফেরত যান, কেউ কেউ এক বছর পর্যন্ত কোর্স ড্রপ রাখেন। 

প্রতিবছর যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডসহ ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদনের হিরিক পড়লেও এবছর এর পরিমাণ কমে এসেছে। তবে আশার কথা হচ্ছে শিক্ষার্থীরা আবেদন করছেন এবং অতি শিগগিরই এর সংখ্যা বাড়বে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর এক্ষেত্রে বহু করণীয় রয়েছে। ভর্তিসংক্রান্ত অফারের পাশাপাশি তারা মানসিক স্বাস্থ্য উন্নতি এবং উৎসাহ বিষয়ক কর্মশালার আয়োজন করতে পারেন।

তিনি আরো জানান, প্রতিষ্ঠানগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ কাউন্সিলর না থাকায় শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনের সময়ে পরামর্শ এবং সহযোগিতা পান না। বিষয়টি আরো বেশি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যখন যুক্তরাজ্যের চিলড্রেন কমিশনার Anne longfield বলেছেন, এই মুহূর্তে আমরা শিক্ষার্থীদের মানবিক চাহিদাগুলো পূরণে পুরোপুরি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারছি না। আমাদের মতো অন্যান্য দেশের পাবলিক হেলথ্ অবস্থাও এই মুহূর্তে ভঙ্গুর। তাই আমরা বেশ কিছু সীমাবদ্ধতার সম্মুখীন হচ্ছি।

Forbes-Mewett and Sawyer এর ২০১৬ সালের গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে, ভাষা এবং সংস্কৃতিগত ভিন্নতার কারণে বহু শিক্ষার্থী পাবলিক হেলথ্ ডেভেলপমেন্ট কেয়ারে কাউন্সেলিং নেওয়া থেকে বিরত থাকেন। এতে যেমন মানসিক অস্থিরতা এবং হতাশা বাড়তে থাকে, তেমনি সম্ভাবনাময় অনেক মেধাবীরা সামনে অগ্রসর হতে পারছেন না। কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মেডিক্যাল সার্ভিস থাকলেও মানসিক্ স্বাস্থ্যবিষয়ক কার্যক্রম দেখতে পাওয়া যায় না।

প্রতিষ্ঠানগুলো বৃহৎ পরিসরে থাকার কারণে স্টাফ এবং শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের মুখ চিনলেও তাদের নাম  জানেন না। এটা সত্যিই অবাক করা বিষয়। Dr. Sadie Hollins বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আরো বেশি সচেতনভাবে তাদের কার্যক্রম বাড়ানো প্রয়োজন। তাদের সৃজনশীল হতে হবে, যাতে অনিচ্ছুক এবং গুমরে থাকা শিক্ষার্থীরাও নিজ থেকেই এগিয়ে আসে। 

বিশেষ করে নজর দিতে হবে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের প্রতি, যাতে তারা পরিবার-পরিজন থেকে দূরে থেকেও ভেঙে না পড়েন এবং আনন্দ সহকারে শিক্ষাগ্রহণে আগ্রহী হন। সংশ্লিষ্ট পরিকল্পনা এবং সেই মোতাবেক প্রয়োগ এখনি শুরু করা উচিত।

ঢাকা/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়