ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

পথের ধারে তরুণীদের পাঠাগার

শেখ নাসির উদ্দিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৩৪, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১  
পথের ধারে তরুণীদের পাঠাগার

কুমুদিনী সরকারি কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী তাসমিয়া রাফা। সে এক বছর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পথচারী পাঠাগারের একটা ছবি দেখতে পায়। বইপ্রেমী এই মানুষটির মনে ইচ্ছে জাগে সেও পথচারী লাইব্রেরি করবে। কিন্তু সময় আর সুযোগ মেলাতে পারেনি এক বছরেও। শেষে নিজের পরিকল্পনার কথা কাছের বন্ধুদের জানান। বন্ধুর এমন আলো ছড়ানো উদ্যোগে কি নিশ্চুপ থাকতে পারে বন্ধুরা! তারাও রাফার এই উদ্যোগে সাড়া দিলো। 

জানানো হলো অন্য বন্ধুদেরও কিন্তু তাদের বেশির ভাগের নেতিবাচক মন্তব্য। তবুও দমে যায়নি বরং আরো জেদ চেপে যায় রাফার বন্ধুদের। সেই বন্ধুরা মিলেই ছোট একটা বক্স দিয়ে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার দেওপাড়া রোডের পাশে ছয় বন্ধু মিলে আলোয় ভরাবো ভুবন স্লোগানে আর্দ্রা পথচারী পাঠাগার গড়ে তোলে। পাঠাগার থেকে ই-মেইল মাধ্যমে যোগাযোগ করা হয়েছিল জনপ্রিয় লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবালের সঙ্গে। ফিরতি ই-মেইলে জাফর ইকবাল তাদের সাধুবাদ জানান এবং ঠিকানা দিতে বলেন। এরপর তার পক্ষ থেকে তার লেখা ৩০টি বই উপহার পাঠান পাঠাগারের জন্য।

আর্দ্রা পথচারী পাঠাগারের প্রধান উদ্যোগক্তা তাসমিয়া রাফা বলেন, বইয়ের প্রতি ভালোবাসা অনেক দিনের। লাইব্রেরি করার আইডিয়া ফেসবুকে পেয়েছি। কিছুতেই সব ঠিক ঠাক করে এগিয়ে যাওয়া হচ্ছিল না। তারপর কাছের বন্ধুদের যখন বলি, ওরা ইতিবাচক সাড়া দেয়। এরপর অন্য বন্ধুদেরও বলেছি, তার বিপরীতে তারা বলে, টেকসই হবে না, বই হারিয়ে যাবে, মানুষ চুরি করবে, ঝড় বৃষ্টি, রৌদে বই নষ্ট হয়ে যাবে। বন্ধুদের এমন কথা মাথায় আরো জেদ চেপে গেলো। যখন কেউ বলত বই চুরি হবে, তখন তাদের বলতাম, বই চুরি করে নিয়ে তো আর ফেলে রাখবে না, পড়বে। তাহলে আমাদের সমস্যা নাই। 

নিজেরাই একটা বক্স তৈরি করি। আমি দুইটা বই দেই। তিতুমীর কলজের মুমিন ভাইয়া চারটা বই ও সুইটি আক্তারের দুইটি বইসহ মোট আট বই নিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু। পরের দিনেই পাঠাগারে বই দ্বিগুণ হয়ে যায়। পরিবার থেকে আমাকে খুব সাপোর্ট করে, সেজন্য পাঠাগারের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারছি। সামনে পরীক্ষা, তাই পড়াশোনার চাপ বেশি, তবুও পাশাপাশি পাঠাগারের জন্য একটু একটু সময় দিয়ে এগিয়ে নিচ্ছি।

তাসমিয়া রাফা আরো বলেন, রোদ-বৃষ্টিতে বইয়ের যেন কোনো ক্ষতি না হয়, এমন বক্স বানানো হবে। এমন আরো কিছু বক্সের সংখ্যা বাড়াতে চাই। যেহেতু আজকের শিশু আগামীর ভবিষ্যত, তাই শিশুদের গুরুত্ব দিয়ে একটা প্রাইমারি স্কুলে লাইব্রেরি করার ইচ্ছা। লাইব্রেরিতে নিয়মিত পাঠকদের রিভিউ নেওয়ার ব্যবস্থা করবো।

তাসমিয়া রাফা ছাড়াও পাঠাগার তৈরিতে সহযোগিতা করছেন কালিহাতী শাজাহান সিরাজ কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আকলিমা আক্তার আখি, একই কলেজের আরেক শিক্ষার্থী বুশরা আক্তার, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের যুইয়্যিনা ফাতেমা, মাইলস্টোন কলেজের হোমায়রা বিনতে হারুন হিমি এবং ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি, সিলেট ফার্মেসি অনুষদের ১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সুইটি আক্তার।

আকলিমা আক্তার বলেন, রাফা পাঠাগার তৈরির আইডিয়া গ্রুপে জানায়। নিজেদের মধ্যে আলোচনা হয় ও আমরাও আগ্রহ প্রকাশ করি। কিন্তু পাঠাগারটি উন্মুক্ত ধরনের বলে বেশির ভাগ মানুষই পিছিয়ে যায়। সবার এক কথা- বই চুরি হয়ে যাবে। এত বই কে দেবে? সবাই মুখ ফিরিয়ে নিলেও আমরা হাল ছাড়িনি। নেতিবাচক চিন্তা ধারার মানুষ বাদ দিয়ে আমরা এগিয়ে যাই। আমাদের কিছু বই দিয়ে পাঠাগারটি শুরু করি। তারপর আস্তে আস্তে বেশ পরিচিতি লাভ করে। অনেক বই আসে আবার অনেকে পড়তে নেয়। এরপর মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের কাছ থেকে কিছু বই পাই। এখন আমাদের পাঠাগারটি খুব ভালোভাবেই চলছে। অনেকেই নানাভাবে সাহায্য করছে। 

অনেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাইব্রেরি তৈরির জন্য আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। এভাবে চলতে থাকলে আমরা আশা করতে পারি, দেশের প্রতিটি রাস্তায় এমন লাইব্রেরি থাকবে। দেশটা সুন্দর হবে। লাইব্রেরি তৈরির কাজটা এতটা বড় না হলেও দেশের মানুষের জন্য কিছু করতে পেরেছি এটাই আনন্দের। বই পড়ে যদি একজন মানুষের মাঝেও পরিবর্তন আসে, তাহলেই আমরা সফল। কারণ দেশের উন্নতির জন্য প্রয়োজন উন্নত মানসিকতাসম্পন্ন জনগণ। যা বই পড়ার মাধ্যমেই সৃষ্টি হয়।

চাইলে যোগাযোগ করে বই পাঠাতে পারেন-

https://www.facebook.com/%E0%A6%86%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE-%E0%A6%AA%E0%A6%A5%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%80-%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%A0%E0%A6%BE%E0%A6%97%E0%A6%BE%E0%A6%B0-107315184644358/

লেখক: সদ্য এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থী, ছাফদার আলী কলেজ।

টাঙ্গাইল/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়