ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

পতাকা মুক্তি ও স্বাধীনতার সর্বোচ্চ অহঙ্কার

অনন্য প্রতীক রাউত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:১৭, ২ মার্চ ২০২১   আপডেট: ১৫:২৬, ৮ মার্চ ২০২১
পতাকা মুক্তি ও স্বাধীনতার সর্বোচ্চ অহঙ্কার

কোনো জাতির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয় জাতীয় পতাকা। ঐতিহাসিক সমৃদ্ধ জনপদ বাংলাদেশেরও রয়েছে সার্বভৌমত্বের ধারক লাল-সবুজের সমুজ্জ্বল পতাকা। নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ ৭৬ হাজার মা-বোনের সম্ভ্রমের প্রতীক হিসেবে নীল আকাশে অবিরাম উড়ে চলেছে জাতীয় পতাকা। ১৯৭১ সালের ২ মার্চ যা প্রথম উত্তোলিত হয় দেশাত্মবোধের বাহক হিসেবে, স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে।

গৌরবোজ্জ্বল সেই ইতিহাস; পতাকা মুক্তি ও স্বাধীনতার সর্বোচ্চ অহঙ্কার। ২ মার্চ স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা প্রাণঙ্গে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা আ স ম আব্দুর রব। এর আগে ১ মার্চ ছাত্ররা গঠন করেন ‘স্বাধীন বাংলা সংগ্রাম পরিষদ’। এর সদস্য ছিলেন আ স মা আব্দুর রব ছাড়াও রুহুল কুদ্দুস মাখন ও শাহজাহান সিরাজ।

সকাল ১১টায় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সারারাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে ইকবাল হলের (বর্তমান শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) ১০৬ নম্বর রুমে পতাকার ডিজাইন করেন শিবনারায়ণ দাস, যিনি তৎকালীন কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা ও পাক সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রামী ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে ২ মার্চের পতাকা উত্তোলন ছিল অভূতপূর্ব এক অর্জন। যা বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনকে ত্বরান্বিত এবং স্বাধীন জাতিরাস্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।

আমাদের প্রত্যাশা ও বাস্তবতা; পতাকা দেশান্তবোধ, জাতীয়তা বোধের অর্জিত চিহ্ন। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যা বাঙালি জাতি ছিনিয়ে এনেছে। তাই পতাকা অহঙ্কার, বাঙালিত্বের প্রতীক নিঃসন্দেহে। তবে, দুভার্গ্যবশত আমরা কথাগুলো বলার স্বার্থেই বলি। স্বাধীন দেশে পতাকা খামচে ধরা শকুনদের ষড়যন্ত্র বা উপস্থিতি অন্তত সেটি প্রমাণ করে। স্বাধীনতা অর্জিত হলেও থেমে নেই তাদের লালসাময় কর্মকাণ্ড। ৭৫ এ জাতির জনককে হত্যার মধ্য দিয়ে তাদের নীল-নকশার সূচনা। 

লজ্জাজনক হলেও সত্যি দেশের সপক্ষে থাকা অনেক সুযোগ সন্ধানী প্রভাব পতিপত্তি কিংবা ক্ষমতার লোভে হাত মিলিয়েছে তাদের সাথে। জাতির পিতার হত্যাকারীদের করেছে পুরস্কৃত, ইনডেমনিটির মতো কালো আইন দিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে পবিত্র সংবিধানকে। ধ্বংস করেছে বাঙালি সংস্কৃতিকে, নির্বিচারে হত্যা করেছে রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। যুদ্ধাপরাধীদের সুকৌশলে করা হয়েছে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত। নিজ অস্তিত্ব রক্ষার্থে দেশের কোটি জনতাকে রক্ষাকারী সেনাবাহিনীর ‘চেইন অব কমান্ড’ করেছে ধ্বংস। গোলাম আযমের মতো দেশদ্রোহীদের দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রীয় সন্মান, গাড়িতে তুলে দেওয়া হয়েছে লাখো শহীদের কষ্টার্জিত পতাকা। ঠিক সেখানেই এক প্রকার বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে জাতীয় পতাকা তথা জাতির সাথে। আখের গোছানোর সংস্কৃতি আর প্রতিহিংসামূলক বিচার কাঠামো নানা লড়াইয়ের আড়ালে প্রতিনিয়ত ছিঁড়ে খাচ্ছে জাতির পতাকাকে। 

ঐক্যবদ্ধ নেই বলেই গ্রামের মোড়ল কালু মিয়ারা হুক্কা বা সিগারেট টানার আঁকেবাঁকে মেরে দিচ্ছেন অন্যের সহায় সম্পত্তি। কখনো প্রভাবশালীর চক্করে সর্বস্ব হারাতে হচ্ছে হারাধন বাবুদের বা রিকশাচালক রশিদ মিয়াদের। প্রতিটি মানুষ যখন পাবে বাঁচার অধিকার, পাবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, থাকবে জীবনের নিরাপত্তা, তখনই তৈরি হবে জাতীয় পতাকার সত্যিকারের স্বকীয়তা। অন্যথায় দৃশ্যপট আলোচ্য মতামতের সাথে হুবুহু এক সূত্রে গাঁথা বলেই মনে হওয়া খুব স্বাভাবিক।

প্রকৃতপক্ষে, ভাঙা কিংবা গড়ার মাধ্যমেই এগোবে প্রতিটি স্বাধীন রাষ্ট্র। দুভার্গ্যক্রমে, বাংলাদেশের অবস্থা হয়েছিল অস্বাভাবিকতায় আলোশূন্য অন্ধকার ঘরের মতো। তাইতো, সংগীতশিল্পী হায়দার হোসেনের কণ্ঠ রূপ নেয় বাস্তবের মাটিতে, ‘কী শোনার কথা ছিল, কী শুনছি, কী দেখার কথা ছিল, কী দেখছি, কী ভাবার কথা ছিল, কী ভাবছি!’ সর্বোপরি, অগ্নিযাত্রায় সফল হয়ে শত্রুর মুখে ছাঁই দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ, এগিয়ে যাবেই বাংলাদেশ। পতাকা হবে সমুন্মত, মর্যাদা থাকবে অক্ষুণ্ন, এটাই একজন বাঙালির গর্ভে জন্ম নেওয়া তরুণের চির প্রত্যাশা।

লেখক: শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

জবি/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

ঘটনাপ্রবাহ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়