ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

মানবতা ও মনুষ্যত্ব শব্দ দুটির ব্যবহার কোথায়?

আজহার মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪৬, ২ মার্চ ২০২১  
মানবতা ও মনুষ্যত্ব শব্দ দুটির ব্যবহার কোথায়?

মানুষের দাবি, তারা সৃষ্টির সেরা জীব। তাদের আচার-আচরণ শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার। তবে, শ্রেষ্ঠত্বের দাবি নিয়েও পৃথিবীতে তাদের ক্ষণিকের অবস্থান। যেন ভ্রমণ করতে আসা এখানে। আর এই ভ্রমণের পরিসমাপ্তি হয় মৃত্যু বা প্রস্থান দিয়ে। অথচ এই সহজ সরল সত্যকে আমরা সহজভাবে নিতে জানি না। 

আমরা আজ হিংসা, অহঙ্কার আর স্বার্থ নিয়ে বেঁচে থাকতেই বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করি। সত্যি বলতে আমাদের এখন ‘আমরা’ বিষয়টা নেই। আমরা প্রত্যেকেই আমিত্ব নিয়ে বেঁচে আছি। কেউ কষ্ট পাচ্ছেন, কেউ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন, কেউ বা রাস্থায় পড়ে আছেন মুমূর্ষু অবস্থায়। কিন্তু এতে আমার আপনার কী? হ্যাঁ আমাদের এখন এই প্রবণতা কাজ করে। এটা সত্যি, একদম পবিত্র গ্রন্থের বাণীর মতো সত্য না হলেও আমাদের দু’চোখে দেখা বাস্তব দৃশ্য। 

আমরা পথে কেউ এক্সিডেন্ট করলে এগিয়ে যাই না, পালিয়ে যাই। কেউ কাউকে কুপিয়ে মারলে আমরা এগিয়ে যাই না, পালিয়ে যাই। তবে হ্যাঁ, পালিয়ে না গিয়ে একটা মহৎ কাজ করতে পারি! ভাবছেন সেটা কী? সেটা হচ্ছে লোকটার অসহায়ত্ব ভিডিও করা, অথবা নিজের দু’চোখ দিয়ে উপভোগ করা। আমরা সিনেমা, নাটক, টেলিফিল্ম দেখতে দেখতে আসলেই এখন বিভোর। তাই এখন আমরা বাস্তবে এমন কিছু দেখতে উৎসাহী। 

ভাবছেন এমনটা সত্য নয়। এটা আমার নিজের কথা। তাহলে ওইযে বনানীতে আগুন লাগার দৃশ্য! সেই কথা কি মনে আছে? অসহায় মানুষ পাগলের মতো করছে। অথচ, আমরা নির্লজ্জের মতো তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছি। শুধু দেখেছি বললে ভুল হবে, আমরা ভিডিও করেছি। উফ্, এটাও কম হয়ে গেলো। আমরা ভিডিও করে সেটা আবার ফেসবুকেও দিয়েছি। এতে অনেক অনেক লাইক, শেয়ার এবং কমেন্ট হয়েছে। দিন শেষে আপনি নায়ক সেজে গেলেন ফেসবুকে।

হ্যাঁ, এমন ফেসবুকের নায়ক এ সমাজে অহরহ রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে মানুষের উপকার করে, মানুষের কষ্ট দেখলে এগিয়ে যায় এদের সংখ্যা খুবই কম। এরা সংখ্যালঘুদের চাইতেও সংখ্যালঘু। আজ আমরা সবাই তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে পছন্দ করি। এই স্বভাবটা কখন থেকে আমাদের প্রথা হিসেবে দাঁড়িয়েছে, সেটা আমার জানা নেই। তবে আমি নিত্য দিন এমন দৃশ্য দেখতে পাই, যেখানে মানুষ গোল হয়ে দাঁড়িয়ে অন্যের কষ্টের দৃশ্য দেখছে।

এইতো সেদিনের ঘটনা, অফিসে যাচ্ছিলাম সিএনজিতে বসে। চট্টগ্রামের ঝাউতলা রেলগেট পার হয়ে যাচ্ছি, এমন সময় রাস্তায় দেখি মানুষ জড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি অবশ্য দাঁড়াতে পারিনি। কারণ গাড়ির ড্রাইভার চলছে তার আপন গতিতে। পরে খবর নিয়ে জানলাম, সেই স্থানে এক মোটরসাইকেল আরোহী এক্সিডেন্ট করেছে। মানুষ তাকেই গোল হয়ে দেখছে। আমি তাজ্জব হয়ে গেলাম। ভাবছি এ কেমন মনুষ্যত্ব! কিন্তু সত্য এটাই।

আমাদের ভেতর এখন না আছে মানবতা, না আছে মনুষ্যত্ব। আমরা বাইরে শুধু মানুষের রূপ নিয়ে চলছি। আমার কেন জানি মানবতা আর মনুষ্যত্ব শব্দগুলোর জন্য মায়া হয়। বোধহয় এই শব্দ দুটোও রোজ আফসোস করে। কারণ, এদের এখন সবাই অবহেলা করে। আমরা এখন নিজের জন্য এই শব্দ দুটোকে বাঁচিয়ে রাখি। অন্যের জন্য এই শব্দ দুটো আজীবন মৃত। এদের ব্যবহার শুধু অভিধানে, গল্পে ও করিতায়, মাঝে মাঝে সভা-সেমিনার ও রাজতৈকি মঞ্চে। 

কিন্তু এভাবে আর কত? মানুষ তো মানুষের জন্য। আপনি অন্যের জন্য মানবতা, মনুষ্যত্ব না দেখালে আপনার জন্যও কেউ দেখাবে, এমনটা আশা করতেই পারেন না। আর তাকিয়ে তাকিয়ে দেখার প্রবণতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। এই স্বভাব মুছে ফেলে এগিয়ে যেতে হবে মানুষের বিপদে।

নিজের চিন্তা নয়, অন্যের চিন্তা যে করেন, তার চিন্তা স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা করবেন। তাই আসুন মানুষের পাশে দাঁড়াই। মানুষকে সহযোগিতা করি। তাকিয়ে তাকিয়ে দেখার স্বভাব বন্ধ করি।

লেখক: শিক্ষার্থী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

চট্টগ্রাম/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়