ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ক্যাম্পাস বন্ধে বিলীন সানসেট ভ্যালি ও বাবুই চত্বর

জুবায়ের রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২০, ৩ মার্চ ২০২১   আপডেট: ১৩:১৫, ৩ মার্চ ২০২১
ক্যাম্পাস বন্ধে বিলীন সানসেট ভ্যালি ও বাবুই চত্বর

সময়ের স্রোতে চোখের সামনে দিয়ে কতকিছুর বিলুপ্তি ঘটে, তা গুণেগুণে বলা হয়তো মুশকিল। অযত্ন, অবহেলায় হারিয়ে যায় কত সৃষ্টিকর্ম, তা চাক্ষুষ উপলদ্ধি করা গেলেও করার থাকে না কিছুই। ঠিক তেমনি সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে অযত্ন, অবহেলায় আজ বিলীন কুবির সানসেট ভ্যালি, জীর্ণশীর্ণ হয়ে পড়ে রয়েছে বাবুই চত্বর। মৃত্যু যন্ত্রণায় যেন ছটফট করছে কুবির সৃষ্টিকর্মগুলো। 

লালমাটির সবুজ চাদরে আবৃত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব সৌন্দর্য লালমাটির সবুজ পাহাড়। ছোট পাহাড়ের পাদদেশকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ ভবন। সেই সঙ্গে গড়ে উঠেছে শহীদ মিনার, বাবুই চত্বর, সানসেট ভ্যালি, চন্দ্রবিলাস, লালন চত্বরের মতো বিভিন্ন অবসরযাপন কেন্দ্র। তবে সেইসবের সৌন্দর্য আজ বিলীন হতে চলেছে অযত্ন আর অবহেলায়। যেমন করে মানুষ ভেঙে পড়ে তার প্রিয় মানুষের অবহলায়। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশদ্বারে নান্দনিকতার ছোঁয়া না থাকলেও প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে একটি চত্বর। সেটি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নান্দনিক শিল্প বাবুই চত্বর। যার ব্যতিক্রমী নামই দিয়েছে অনন্য উচ্চতা। বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের প্রচেষ্টায় গড়ে উঠা বাবুই চত্বর ছিল খাতা-কলমে মোড়ানো জীবনের প্রশান্তির নীড়। 

বাবুই চত্বর যে শুধু নামেই নান্দনিক তা কিন্তু নয়। এর ছিল নিজস্ব মৌলিকতা। দূর থেকে দেখলে মনে হতো যেন পাহাড়কে সাজানো হয়েছে নববধূর সাজে, নোলক পরে কেউ যেন ঘোমটা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে লাজুকভাবে। 

বাবুই চত্বরের সেই স্মৃতি মনে করতে গিয়ে বাংলা বিভাগের শিক্ষক নাহিদা নাহিদ বলেন, ‘আমার শিক্ষার্থীরা এই চত্বরে বাবুই পাখির মতো করে এখানে জমিয়ে আড্ডা দেবে, খোলা কণ্ঠে গানের সুর তুলবে, জন্মদিন উদযাপন করে ক্যাম্পাস মুখরিত করে রাখবে, ভরদুপুরে দোলনায় দোল খাবে; সেই চিন্তা থেকে ক্যাম্পাসের সম্মুখে অত্যন্ত নিরাপদ একটি স্থানে এই শিল্পকর্মটি আমার সহকর্মী ও শিক্ষার্থীদের প্রচেষ্টায় গড়ে তুলি। সেই বাবুই চত্বরে যখন দেখতাম আমার সন্তানদের ভিড়, তখন কোন শিক্ষকের ভালো লাগবে না বলো? বাবুই চত্বরের দোলনায় দোল খাওয়া ও হাঁড়ির ছবি যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শেয়ার দিত, তখন আমার ভীষণ ভালো লাগা কাজ করতো।’

বাবুই চত্বরকে পুরনো রূপে ফিরিয়ে নিয়ে আসার ভাবনা থেকে তিনি বলেন, ‘আজ শিক্ষার্থী বিহীন অবস্থায় জীর্ণশীর্ণ বাবুই চত্বর পড়ে রয়েছে অনাদরে। আবারো ক্যাম্পাসে ফিরে প্রশাসনের সর্বোচ্চ সহযোগিতায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে তার পুরনো নান্দনিক রূপ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবো। এক্ষেত্রে আমি সর্বোচ্চ আশাবাদী।’

সূর্যাস্তের সঙ্গে বিলীন হওয়া সানসেট ভ্যালি ছিল পরিসংখ্যান বিভাগের নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি আরেক নান্দনিক শিল্প। শেষ বিকেলে নরম রোদের আঁচে বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীদের শেষ আড্ডাস্থল। সানসেট ভ্যালির উদ্বোধন কালে তার শিল্পকর্মে মুগ্ধ হয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বলেছিলেন, ‘সত্যিই সুন্দর শিল্পকর্ম, যা কুবির জন্য নতুন করে বিশাল প্রাপ্তি।’ আর আজ সেই বিশাল প্রাপ্তি অযত্ন অবহেলায় একেবারেই বিলীন। সন্ধ্যে নামার মুখে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠায় ওই স্থানটির নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় ছিল, যা এখনো বিদ্যমান। তবে সৃষ্টিকর্মগুলো অযত্নে হারিয়ে যাওয়ায় ব্যথাতুর কুবির প্রতিটি শিল্পকর্ম। 

তবে সব শিল্পকর্মই নতুন করে ফিরে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন নাহিদা নাহিদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বর্ধক কমিটি এসব ব্যাপারে সোচ্চার বলে দাবি তার।

কুবি/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়