ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ইতিহাসের প্রতিনিধিত্ব করে যে শহীদ মিনার

ইমন ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫৮, ৩ মার্চ ২০২১   আপডেট: ১২:০০, ৩ মার্চ ২০২১
ইতিহাসের প্রতিনিধিত্ব করে যে শহীদ মিনার

বাংলাদেশের একমাত্র আবাসিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনন্য লীলাভূমি খ্যাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং উঁচু শহীদ মিনার এই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই অবস্থিত। প্রায় ৫২ ফুট ব্যাস ও ৭১ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু শহীদ মিনারটি তৈরি করেন স্থপতি রবিউল হুসাইন। 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরবর্তী সময়ে স্থপতি রবিউল হুসাইনের তত্ত্বাবধানে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা অনুষদের সম্মুখভাগে দেশসেরা এই বিশাল আকৃতির শহীদ মিনারটি স্থাপন করা হয়। ১৯৫২ সালে মাতৃভাষার জন্য জীবন দেওয়া ভাষা শহীদদের স্মরণে এবং ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রতীক হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে দেশের সর্বোচ্চ শহীদ মিনারটি। 

শহীদ মিনারটিতে তিনটি স্তম্ভ ও ৮টি সিঁড়ি রয়েছে। ত্রিভুজ আকৃতির তিনটি স্তম্ভ দিয়ে বাংলাদেশের প্রতিটি স্বাধীনতা সংগ্রামে শহীদ হওয়া শহীদদের ত্যাগের মহিমা প্রকাশিত হয়েছে। তিনটি স্তম্ভের একটি বাংলা ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি, মাটি ও মানুষ এবং স্বাধীনতা-স্বার্বভৌমত্ব-অর্থনৈতিক মুক্তি-গণতান্ত্রিক চেতনার প্রতিনিধিত্ব করে।

শহীদ মিনারের পাদদেশে নির্মিত ৮ সিঁড়ি দিয়ে দেশের গৌরবউজ্জ্বল ইতিহাসের ৮ বছর (১৯৫২, ১৯৫৪, ১৯৬২, ১৯৬৬, ১৯৬৯, ১৯৭০, ১৯৭১) বছরগুলোকে স্মরণ করা হয়েছে।

এই অদ্ভুত আকৃতির শহীদ মিনারটি মন কেড়েছে জাবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রতিটি সদস্যদের। শহীদ মিনার চত্বরে রয়েছে হরেক রকমের ফুল গাছ। যে ফুল গাছে ফোঁটা ফুলগুলো শহীদ মিনারের সৌন্দর্যকে করেছে আরো ভরপুর। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছে তাই শহীদ মিনারের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। শহীদ মিনারের পাদদেশ সবসময় শিক্ষার্থীদের হাসি তামাশা, সেলফি ওঠানো গ্রুপ স্ট্যাডিসহ গান বাজনায় মেতে থাকে। লাল ইটের বিশাল আকৃতির শহীদ মিনারটি যেন প্রকৃতির বুকে নিজের অস্তিত্বের প্রমাণ দিচ্ছে। শহীদ মিনারের লম্বা লম্বা সিঁড়িগুলো শিক্ষার্থীদের বসার উপযুক্ত হওয়ায় অবসর টাইমে তাই শিক্ষার্থীরা এখানে বসে থেকেই সময় কাটায়। দূর থেকে দেখলে মনে হবে খোলা আসমান থেকে নীল আকাশের লাল-নীল আভার আচ্ছাদনে নতুন রূপ ধারণ করেছে শহীদ মিনারটি।

বাংলাদেশের আর কোথাও এমন বিশাল উচ্চতার শহীদ মিনার খুঁজে পাবেন না। শহীদ মিনারটি একদিকে যেমন ইতিহাস ও ঐতিহ্যের মূর্ত প্রতীক, ঠিক তেমনি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ধারকও বটে। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই এই বিশাল শহীদ মিনারের সৌন্দর্যে মুগ্ধ নয় বরং দেশের প্রতিটি মানুষ জাবির শহীদ মিনারের সৌন্দর্যে পঞ্চমুখ। শহীদ মিনারটি দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা ক্যাম্পাসে ভিড় জমাচ্ছেন। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী এই শহীদ মিনারটি প্রতিটি শিক্ষার্থী তথা মানুষকে বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস জানতে ও বুঝতে অনুপ্রাণিত করে। 

আকাশচুম্বী বিশাল এই শহীদ মিনার ভাষা শহীদদের মূর্ত প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে বর্তমান প্রজন্মকে শত্রুর মোকাবিলা করার উপযুক্ত শিক্ষা দিচ্ছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থী একদিকে যেমন সংস্কৃতিমনা, ঠিক অন্যদিকে সৌন্দর্য প্রেমীও বটে। ইতিহাস ও ঐতিহ্য চেতনায় তাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনেক অগ্রগামী। প্রতি বছরের মতো এবছরেও এসেছে ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। ১৯৫২ সালের এই ফেব্রুয়ারি মাসেই অত্যাচারী পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাংলা মায়ের বুক থেকে মাতৃভাষা বাংলাকে ছিনিয়ে নিতে চেয়েছিল, কিন্তু বাংলার সাহসী, সংগ্রামী দামাল ছেলেরা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে মাতৃভাষা বাংলাকে জয় করেছিল। আর সেই শহীদদের স্মরণ করতে দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হয়তো সরাসরি ভাষা আন্দোলনে অংশ নিতে পারেনি, তবে তারা ভাষা শহীদদের অমর সংগ্রামী চেতনা ও সাহসী মনোভাব বুকে লালন করতে শিখেছে। ফলে অদূর ভবিষ্যতে মাতৃভাষার উপর কোনো থাবা আসলে সাহসী ও সংগ্রামী চিত্তে বীরের বেশে শত্রুর থাবার মোকাবিলা করতে পারে।

লেখক: শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

জাবি/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়