ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

শিমুল বাগানের ফুলকন্যা মনিরা-চামেলি

আশরাফ আহমেদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০২, ৪ মার্চ ২০২১  
শিমুল বাগানের ফুলকন্যা মনিরা-চামেলি

ছবি তুলতে যাব, এমন সময় দৌড়ে আসে শিমুল বাগানের দুই ফুলকন্যা। ‘ভাইজান একটা মালা নিয়া ছবি তুলেন ভালা লাগব’। মালা দিয়ে ছবি তুললে ভালো লাগে বুঝি? ‘হ ভালা লাগে’। আচ্ছা তাহলে দাও। ছবি তুলে শিমুল ফুলের মালাটা পুনরায় তার হাতে দিয়ে বললাম, কত দেবো ভাইয়া? ‘১০ টাকা দিয়া দেন’। ২০ টাকার একটা নোট হাতে ধরিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করি, তোমাদের নাম কী? মুচকি একটা হাসি দিয়ে ফুলকন্যারা উত্তর দেয় মনিরা, চামেলি। তারপর খানিকক্ষণের গল্প।

মনিরা বেগম এবং চামেলি আক্তার। দুজনের বয়সই সমান। ৮ বছরের এই মেয়ে দুটির বাড়ি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের মানিগাঁও গ্রামে। দেশের সর্ববৃহৎ শিমুল বাগান থেকে ১০ মিনিট হাঁটলেই পৌঁছা যাবে মনিরা-চামেলিদের বাড়িতে।

তাহিরপুরের বাদাঘাট ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান প্রয়াত জয়নাল আবেদীন জাদুকাটা নদীর তীরে প্রায় ৩৩ একর জায়গাজুড়ে রোপণ করেছিলেন তিন হাজারের মতো শিমুল গাছ। ২০০২ সালে তৈরি করা প্রকৃতি প্রেমী জয়নাল আবেদীনের এই বাগানে এখন লাল টকটকা শিমুল ফুল ফোটে। ওপারে ভারতের মেঘালয় পাহাড়, মাঝে যাদুকাটা নদী, আর এপারে শিমুল বাগান। 

দূর থেকে রক্তের আভার মতো দেখতে এই শিমুল ফুলের বাগানটি মুগ্ধ করে সবাইকে। সুনামগঞ্জ শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে ঋতুরাজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাসন্তী সাজে সেজেছে জাদুকাটা নদীর বালুময় এই জায়গাটি। শিমুল ফুলের এই যৌবন দেখতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে হাজারো পর্যটক ছুটে আসছেন জাদুকাটার তীরে।

শিমুল বাগানকে কেন্দ্র করে এই এলাকার অনেক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। কেউ ফুলের মালা বিক্রি করেন, কেউ ছবি তুলেন, কেউ আবার ঘোড়া নিয়ে আসেন। অর্থাৎ নানাভাবে শিমুল বাগানে আসা পর্যটকদের বিভিন্ন ধরনের বিনোদনের খোরাক দিচ্ছেন এলাকার মানুষজন। তাদেরই দুজন মনিরা ও চামেলি। উভয়ই স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলে ৩য় শ্রেণিতে পড়ে। সেইসঙ্গে ভালো বন্ধুও। মনিরা ও চামেলির মা জাদুকাটা নদীতে বালু উত্তোলনের কাজ করেন। আর এদিকে সকাল-সন্ধ্যা দুই বান্ধবী ঘুরে বেড়ায় শিমুল বাগানের ৩৩ একরে। সীমান্তঘেঁষা এলাকায় খুবই দুর্বিসহ জীবন তাদের।

মনিরা বলে, স্কুল বন্ধর লাগি সকালে ২০ টেখা (টাকা) দিয়া বাগানে ঢুকি। পরে বাগানের ফুল তুকাইয়া (কুঁড়িয়ে) মালা বানাই। এই ফুলের মালা মাথায় দিয়া মানুষে ছবি তুলে এর বিনিময়ে আমাদের ১০ টেখা দেয়। এভাবে সারাদিনে ১৫০-২০০ টাকা ইনকাম হয়। বাড়ি ফিরে সব টেখা মার কাছে দিয়া দেই’। 

চামেলি বলে, ফুলের মালা বানাই দেখে অনেকে আমাগো ফুলকন্যা বইলা (বলে) ডাকে। কথাগুলো বলেই খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে তারা।

ভুবন জুড়ানো সেই হাসিটা অসম্ভব রকমের সুন্দর। যেন প্রকৃতির অনবদ্য কাব্য শিমুল বাগানের সঙ্গে খেলা করছিল মনিরা-চামেলির দাঁত কেলিয়ে খিলখিলানিটা। সকাল সন্ধ্যা পর্যটকদের বিনোদনের খোরাক যুগিয়ে সংসার চালায় শিমুল বাগানের মনিরা ও চামেলি। লাল টকটকে শিমুলের রক্তিম আভার সঙ্গে সারাটা দিন এভাবেই মিশে থাকে বাদাঘাটের এই ফুল কন্যারা।  

লেখক: শিক্ষার্থী, দর্শন বিভাগ, এমসি কলেজ সিলেট ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক।

সিলেট/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়