ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে আবদুল্লাহ ফাহিমের পথচলা 

মো. মঈন উদ্দিন সাব্বির || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২৮, ৪ মার্চ ২০২১   আপডেট: ১৬:৫০, ৪ মার্চ ২০২১
আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে আবদুল্লাহ ফাহিমের পথচলা 

উচ্চশিক্ষা অর্জনে ইউরোপ শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় বিশেষ স্থানে। উন্নত পরিবেশ, আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা, জ্ঞান ও মানসিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্কলারশিপ প্রাপ্তি, আয়ের সুযোগ, শিক্ষা পরবর্তী ক্যারিয়ারসহ সব মিলিয়ে ইউরোপিয়ান দেশগুলোর প্রতি শিক্ষার্থীদের রয়েছে আলাদা আকর্ষণ। দীর্ঘ দিনের লালিত আশা পূরণ হয় যখন সব বাধা পেরিয়ে স্বপ্নের গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়।

মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ফাহিম রয়েছেন আয়ারল্যান্ডে, পড়ছেন ডাবলিন বিজনেস স্কুলে। ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন উচ্চশিক্ষা অর্জনে একদিন পাড়ি জমাবেন প্রবাসে, পড়বেন বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো একটিতে, অর্জন করবেন জ্ঞান এবং একরাশ অভিজ্ঞতা। ফাহিম রয়েছেন তার সেই স্বপ্নের যাত্রায়। রাইজিংবিডির প্রতিবেদকের সঙ্গে শেয়ার করেছেন তার গল্প। পাঠকদের উদ্দেশ্যে তার সাক্ষাৎকারের অংশটুকু তুলে ধরা হলো-

রাইজিংবিডি: কেমন আছেন?

ফাহিম- পৃথিবীর ক্রান্তিকাল চলছে, তবুও ভালো আছি।

রাইজিংবিডি: কেমন কাটছে করোনার সময়গুলো?

ফাহিম: প্রথম দিকে খারাপ লাগত। সারাক্ষণ অনিশ্চয়তা আর দুশ্চিন্তা ঘিরে থাকতো। এখন অনেকটা কাটিয়ে উঠেছি সময়ের সঙ্গে। 

রাইজিংবিডি: আচ্ছা, আপনিতো এখন ডাবলিনে আছেন, আপনার যাত্রা কীভাবে শুরু হলো, যদি শেয়ার করতেন আমাদের সঙ্গে?

ফাহিম: আমি ২০১৬ সালে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের উপর ব্যাচেলর ডিগ্রি সম্পন্ন করি। মাঝে এদিক-সেদিক করতে করতে দুই বছরের মতো সময় চলে যায়। এরই মাঝে আইএলটিএসের প্রস্তুতি নিলাম, পরীক্ষা দিলাম, স্কোরও এলো ৬.৫। পাশাপাশি বাইরের দেশগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নজর রাখতে থাকি। আমি চাচ্ছিলাম কানাডার কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে, কিন্তু হয়ে উঠছিল না। পরবর্তী সময়ে আয়ারল্যান্ডের সুযোগ দেখতে পেলাম, এপ্লাই করে ফেললাম।

রাইজিংবিডি: এরপর?

ফাহিম: আমি সরাসরি মাস্টার্সে ভর্তির সুযোগ পাইনি। আইরিশ ন্যাশনাল ফ্রেমওয়ার্ক অব কোয়ালিফিকেশন (NFQ) অনুযায়ী একাডেমিক লেভেল রয়েছে। ব্যাচেলর ডিগ্রির ক্ষেত্রে এখানে লেভেল ৭ এবং ৮ সম্পন্ন করতে হয়। লেভেল ৭ অনুযায়ী ব্যাচেলর কোর্স ৩ বছর মেয়াদি এবং লেভেল ৮ হচ্ছে ১ বছর মেয়াদি। দেশে থাকাকালীন IUB থেকে ৪ বছর মেয়াদি স্নাতক সম্পন্ন করার পরও আইরিশ কর্তৃপক্ষ সেটাকে শুধু লেভেল ৭ হিসেবেই গণ্য করলো। আমাকে বলা হলো লেভেল ৮ সম্পন্ন করার জন্য। অগত্যা আয়ারল্যান্ডে এসে ব্যাচেলরে আরো ১ বছর পড়তে হলো আমায়।

রাইজিংবিডি: কেমন ছিল আপনার অভিজ্ঞতা?

ফাহিম: আমি নিঃসন্দেহে বলতে পারি, লেভেল ৮ এর এই ১ বছরের অভিজ্ঞতা অনেক বেশি সমৃদ্ধ। আমার জ্ঞানের পরিধি বেড়েছে, অনেক কিছুতে দক্ষ হয়েছি। নিজের উপর আত্মবিশ্বাস বেড়েছে অনেকখানি। টিচাররা বেশ কোয়ালিফাইড এবং তাদের পড়ানোর ধরনও বেশ কানেক্টেড। এখানে আসার কিছু দিন পর থেকেই করোনা পরিস্থিতি শুরু হয়। সেই অর্থে আমার সরাসরি ক্যাম্পাসে গিয়ে ক্লাস করার অভিজ্ঞতা কম। ক্লাসরুম এবং অনলাইন উভয় মিলিয়েই আমাকে পড়ালেখা করতে হয়েছে। তবে ক্যাম্পাসটা সুন্দর, ক্লাসরুমগুলোও গোছানো, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত। 

রাইজিংবিডি: আবাসন নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়নি, আবহাওয়াতে খাপ খাওয়ালেন কীভাবে?

ফাহিম: দুটোতেই তেমন সমস্যায় পড়িনি। আমার আত্মীয় থাকেন আয়ারল্যান্ডে, ভেবেছিলাম উনার বাড়িতেই উঠবো। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এক বন্ধুর বড় ভাইয়ের বাড়িতে উঠেছি। উনি এখানে আছেন বেশ অনেক বছর হলো। উনিই আমাকে সবকিছুর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। আর আয়ারল্যান্ড ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতোই শীতপ্রধান দেশ। বেশিরভাগ সময়ই এখানে ঠাণ্ডা থাকে, বছরের ২ মাস থাকে গরমকাল। আমি এটা উপভোগই করি। 

রাইজিংবিডি: আবাসন এবং খাবারের পেছনে মাসিক খরচ কেমন হয়?

ফাহিম: ডাবলিনে বাঙালি খাবার থেকে শুরু করে সব ধরনের খাবারের রেস্তোরাঁ রয়েছে। বাইরে খাওয়া হয় মাঝেমধ্যে। তবে আমি বাড়ির রান্না খেতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। আলাদা কোথাও আর উঠিনি, ভাইয়ের সঙ্গেই একি বাসায় ভাড়া ও খরচ শেয়ার করি। রান্নার ব্যবস্থা আছে এখানে, তাই আলাদা ভাবতে হয় না। মাসপ্রতি ৭০০-৭৫০ ইউরো খরচ হয়।

রাইজিংবিডি: খরচ কি পরিবার থেকেই দেয়, নাকি আয় করেন?

ফাহিম: টিউশন ফি পরিবার থেকেই দেয়, বাকি খরচগুলো আমিই বহন করি। আয়ারল্যান্ডে শিক্ষার্থীদের আয়ের অনেক সুযোগ রয়েছে। এখানে এসে প্রথমেই চাকরির সন্ধান করতে থাকি। ভাগ্য সহায়ক ছিল যে ২ মাসের মধ্যেই একটি চাকরি পেয়ে যাই। বর্তমানে Tesco নামক একটি রেটেইল শপে কর্মরত আছি। ঘণ্টা প্রতি ১০-১৫ ইউরো আয় হয়, তা দিয়েই বেশ চলে যাচ্ছে। 

রাইজিংবিডি: প্রবাসে সময় কীভাবে কাটছে?

ফাহিম: ক্যাম্পাসে কম সময় কাটানোতে ওভাবে বন্ধু বানানো হয়ে উঠেনি। তবে চেষ্টা করেছি এখানের মানুষের সঙ্গে মিশতে। যেহেতু প্রথম থেকেই লক্ষ্য ঠিক করে রেখেছিলাম পড়ালেখার পাশাপাশি উপার্জন করতে হবে। তাই এগুলোর প্রতিই মনোযোগী বেশি ছিলাম। বর্তমানে দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যে ৭টা পর্যন্ত ডিউটি করি। তারপর বাসায় ফিরে বিশ্রাম নিয়ে পড়ালেখা করি। ভাইয়ের বন্ধুদের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। অবসর সময়ে উনাদের সঙ্গে আড্ডা দেই। সময়মত ধর্মীয় ব্যাপারগুলোতে অংশগ্রহণ করি।

রাইজিংবিডি: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

ফাহিম: কিছু দিন হলো লেভেল ৮ সম্পন্ন করলাম। লেভেল ৯ তে মাস্টার্সের জন্য অফার লেটার পেয়েছি। আয়ারল্যান্ডকে আইটি হাব বলা হয়। এখানে আইটি সেক্টরে কর্মীদের বেশ চাহিদা রয়েছে। তাই চিন্তা করেছি ডাটা অ্যানালিটিক্সের উপর পরবর্তী ডিগ্রিটা করবো। কাজ এবং বিশ্রামের সময় বাদে যতটুকু সময় পাচ্ছি প্রোগ্রামিং, কোডিং শেখা ও প্র্যাকটিসের পেছনেই ব্যয় করি। ইচ্ছা আছে এখানেই কোনো আইটি প্রতিষ্ঠানে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার। 

রাইজিংবিডি: যারা আয়ারল্যান্ড আসতে আগ্রহী, তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী? 

ফাহিম: নতুনদের জন্য নিজ অভিজ্ঞতা থেকে কিছু টিপস দিতে পারি। যারা আসতে চাচ্ছেন, তারা আইটি বিষয়ে যতটুকু পারা যায় শিখে নেবেন। ইংরেজিতে যত বেশি যোগাযোগ দক্ষতা তৈরি করতে পারবেন আপনার জন্য তত বেশি সহজ হবে সবকিছু। প্রবাসে থাকতে হলে ঘুরেফিরে সময় নষ্ট না করে কাজ করার মানসিকতা থাকাটা জরুরি, যেটা আপনাকে পরিজন থেকে খারাপ লাগা বোধ হওয়া থেকে দূরে রাখবে। 

রাইজিংবিডি: ধন্যবাদ আপনাকে।

ফাহিম: আপনাকেও ধন্যবাদ এবং রাইজিংবিডির জন্য শুভকামনা।

ঢাকা/মাহি 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়