ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

হংকংয়ে পিএইচডি অর্জনের আদ্যোপান্ত

মেহেদী হাসান চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪৩, ১৫ মার্চ ২০২১   আপডেট: ১৬:১৯, ১৫ মার্চ ২০২১
হংকংয়ে পিএইচডি অর্জনের আদ্যোপান্ত

জ্ঞান অর্জন অসীম একটি বিষয়। পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে জ্ঞানের অমূল্য ভাণ্ডার। যে যত বেশি এই ভাণ্ডার থেকে আহরণ করবে, ততই বিকশিত হবে তার মন; আলোকিত হবে মানবহৃদয়। তাই শিক্ষা অর্জনে মানুষ ছুটে যায় দেশ থেকে দেশান্তরে। 

রাইজিংবিডির আজকের পর্বে রয়েছে তেমনি এক জ্ঞান পিপাসু শিক্ষার্থীর কথা, যিনি নিজেও দেশের নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষক। নিজ শিক্ষাজীবনে নতুন মাত্রা যোগ করতে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জনে চলে গিয়েছিলেন হংকংয়ে। হংকংয়ের বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে তার মূল্যবান কথাবার্তা ও পরামর্শ পাঠক সমাজের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো।

হংকং চায়নার দক্ষিণে অবস্থিত একটি ছোট্ট স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। আয়তনে আমাদের চট্টগ্রাম জেলার পাঁচভাগের একভাগের চেয়েও কম। এখানে মাত্র ৮টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, যার মধ্যে পাঁচটিই বেশ কয়েক বছর ধরে কিউএস- র‌্যাংর্কিং অনুযায়ী টপ-১০০ এর মধ্যে রয়েছে। স্টেট অব দি আর্ট গবেষণায় প্রচুর বিনিয়োগের ফলে প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানেই রয়েছে বিশ্বমানের রিসার্চ ল্যাব  ও নামকরা অধ্যাপক। আর আছে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রচুর ফান্ডিং। প্রধানত পিএইচডির জন্য। মাস্টার্সের ফান্ড খুব কম, তবে কিছু রিসার্চ এক্সপেরিয়েন্স থাকলে ব্যাচেলর থেকে সরাসরি পিএইচডিতে আসা সম্ভব। আমি খুব সংক্ষেপে এখানকার ফান্ডিং নিয়ে লিখছি, তবে আগ্রহী হলে অনলাইনে সহজেই বিস্তারিত পাওয়া যাবে।

হংকংয়ে পিএইচডির জন্য মূলত দুই প্রকার ফান্ডিং রয়েছে, ফেলোশিপ ও স্কলারশিপ। টপ-স্টুডেন্টদের এখানে পড়তে উদ্বুদ্ধ করতে সরকারিভাবে ফেলোশিপ দেওয়া হয়। এটার পরিমাণ মাসে ৩৩০০ ডলারের মতো। পয়সার হিসেবে সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পিএইচডি ফান্ডগুলোর একটি ও খুব সম্মানজনক অ্যাওয়ার্ড। এটা ভালোই প্রতিযোগিতামূলক, সবগুলো ইউনিভার্সিটির অ্যাপ্লিকেন্ট থেকে হংকংয়ের ইউজিসি প্রতি বছর মাত্র ২৫০ জন ফেলো বাছাই করে থাকে। 

ফান্ডিংয়ের দ্বিতীয় অপশন হলো স্কলারশিপ। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে, পরিমাণ মাসে ২২০০ ডলারের মতো। প্রতি ইউনিভার্সিটি বছরে ৫০০-১০০০ স্কলারশিপ অফার করে থাকে। স্কলারশিপগুলো মূলত অধ্যাপকদের উপর নির্ভর করে। সুপারভাইজার ম্যানেজ করতে পারলে স্কলারশিপ মোটামুটি কনফার্ম। কারণ কোনো ইউনিভার্সিটিতেই ফান্ড ছাড়া পিএইচডির জন্য এনরোল করা হয় না। এখানে একটা কথা বলে রাখা ভালো, হংকং বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহরগুলোর একটি। তবে, ফেলোশিপ অথবা স্কলারশিপ দুটোতেই ফান্ডিং পরিমাণ (অ্যামাউন্ট) এখানে থাকার জন্য যথেষ্ট। 

আবেদন প্রক্রিয়া সহজ। সাধারণত, প্রতিবছর ১ সেপ্টেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আবেদনের সময় থাকে। দুই ধাপের আবেদন- অনলাইনেই সবকিছু। প্রথমে এইচকেপিএফএস (ফেলোশিপ)-এর জন্য অ্যাপ্লাই করতে হয়। সেখান থেকে একটা রেফারেন্স নম্বর নিয়ে ইউনিভার্সিটির অ্যাপ্লিকেশন কমপ্লিট করতে হয়। যতটুকু জানি, প্রতি বছর সর্বোচ্চ দুই জায়গায় আবেদন করা সম্ভব। 

ফেলোশিপের আবেদন অটোমেটিক স্কলারশিপের জন্য বিবেচনা করা হয়। অ্যাপ্লিকেশন শুরু করার আগেই সুপারভাইজার কনফার্ম করা জরুরি। কারণ, আবেদনের এক ধাপে পটেনশিয়াল সুপারভাইজারের নাম আর রিসার্চ প্রপোজাল দিতে হয়। কাজেই অ্যাপ্লিকেশন ডেডলাইনের বেশ আগে থেকেই প্রফেসরদের ই-মেইল দেওয়া উচিত। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায়-

১. হংকংয়ে ফেলোশিপ বা স্কলারশিপের জন্য তিনটি ফ্যাক্টর দেখা হয়; রেজাল্ট, রিসার্চ এক্সপেরিয়েন্স (পাবলিকেশন) আর এক্সট্রা-কারিকুলার এক্টিভিটি।

২. পাবলিকেশনের জন্য কোয়ান্টিটি জরুরি নয়। ব্যাচেলর ডিগ্রিধারী ছাত্র/ছাত্রী থেকে কোনো অধ্যাপকই ভালো দুই/একটা পেপারের বেশি আশা করেন না। অনেক হাই কোয়ালিটি কাজ থাকলে অবশ্যই ভালো, তবে কোয়ান্টিটির দিকে নজর দিতে গিয়ে একটি দুর্বল কাজের সঙ্গে নিজের নাম জড়িয়ে ফেলা বোকামি।

৩. সাধারণত জুন-জুলাই-অগাস্ট সময়টায় অনেক সুপারভাইজার পরবর্তী বছরের জন্য ছাত্র ঠিক করে ফেলেন, কাজেই এই সময়টা অধ্যাপদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য সবচেয়ে ভালো।

৪. একই ইউনিভার্সিটির একাধিক অধ্যাপককে একসঙ্গে ই-মেইল দেওয়া যাবে না। এখানে অধ্যাপকরা নিজেদের মধ্যে রিসার্চ/পটেনশিয়াল স্টুডেন্টস নিয়ে আলোচনা করেন। আর, অবশ্যই জেনেরিক ই-মেইল থেকে রিপ্লাই আশা করা ভুল। অধ্যাপকের পারসোনাল আর গুগল স্কলার প্রোফাইল স্ট্যাডি করে ই-মেইল দিলে পজিটিভ রিপ্লাই পাওয়া সহজ হবে। 

অর্থাৎ অন্য সবজায়গার মতো এখানেও পিএইচডির জন্য অসম্ভব পরিশ্রম করতে হবে। তবে লেগে থাকতে পারলে পৃথিবীর সব ভালো জায়গায়ই এখানকার ডিগ্রিকে খুব মূল্যায়ন করা হয়।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, ইইই, চুয়েট ও পিএইচডি শিক্ষার্থী (এইচকেপিএফএস ফেলো ১৮) সিটি ইউনিভার্সিটি অব হংকং, চীন।

সাব্বির/মাহি  

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়