তারুণ্যের আদর্শ বঙ্গবন্ধু
মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ || রাইজিংবিডি.কম
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই অগ্রসর জাতিকে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র দিয়ে গেছেন। ২৫ মার্চ থেকে শুরু করে ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে ৩০ লাখ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হল স্বপ্নের স্বাধীনতা। এর মধ্য দিয়ে শেখ মুজিব হয়ে উঠলেন স্বাধীন বাংলাদেশের পিতা। মহান এ মানুষটিকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা বর্তমান প্রজন্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। বঙ্গবন্ধুর ১০১তম জন্মদিন ছিল গতকাল।
এ উপলক্ষে মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া কয়েকজন তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর ভাবনা ও মতামত তুলে ধরেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ।
তারুণ্যের অনুপ্রেরণায় সদা জাগ্রত বঙ্গবন্ধু
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মুশফিকুর রহমান ইমন। তিনি বলেন, বাঙালি ও বাংলাদেশ শব্দ দুটি উচ্চারণ করতে গেলেই অবধারিতভাবেই উচ্চারিত হয় বাংলার স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামটি। এদেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধিকার আন্দোলনের ইতিহাসের পাতায় ধ্রুবতারার মতো জ্বলজ্বল করা এক নক্ষত্র বঙ্গবন্ধু।
২৩ বছরের গোলামীর শৃঙ্খল ভেঙে যার একটি ডাকেই ঘরে ঘরে গড়ে উঠেছিল দূর্গ, তিনিই হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাই বঙ্গবন্ধু নামটি শুধুই একটি নাম নয়, বঙ্গবন্ধু মানেই ইতিহাস। বাঙালির চিন্তার জগতে, ভাবনার ভুবনে, মেধার উৎকর্ষে কিংবা ভরসার আশ্রয়স্থল হিসেবে সবস্থানে খুঁজে পাওয়া যায় বঙ্গবন্ধুর বিশাল ব্যক্তিত্বকে। তরুণ প্রজন্মের কাছে তিনি যেন এক অপার সাহসীকতার মূর্ত প্রতীক, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বীর!
জাতির পিতা আমাদের শিখিয়ে গেছেন, কীভাবে মাথা উঁচু করে সামনের দিকে এগিয়ে চলতে হয়, অধিকার আদায় করে নিতে হয়, নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করতে হয়। আমাদের চলার পথ কখনোই মসৃণ নয়। পথ যতই বন্ধুর হোক না কেন, হৃদয়ে যদি থাকে দেশপ্রেম আর চিত্তে থাকে সাহস, তাহলে দেশের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়া যায় এই মহান শিক্ষা বঙ্গবন্ধু আমাদের দিয়ে গেছেন। এ শিক্ষাকে ধারণ করেই তারুণ্যের চেতনায় ও অনুপ্রেরণায় বঙ্গবন্ধু যুগে যুগে আদর্শ, ন্যায়পরায়ণতা, সাহসিকতা ও দেশপ্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়েই থাকবেন।
বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে হোক দেশপ্রেমের শিক্ষা
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদা টুম্পা। তিনি বলেন, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের ইতিহাসে যার নামটি উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো দীপ্যমান, তিনি হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার দূরদর্শী, বিচক্ষণ ও সঠিক নেতৃত্বেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। তরুণ প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধু নিঃসন্দেহে একজন সেরা দেশপ্রেমিক। বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবন থেকে তরুণ প্রজন্ম অসীম সাহসিকতায় পথ পাড়ি দিতে, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে, মানবতার সেবা করতে, মাথা নত না করে ন্যায়ের পথে চলতে আর আত্মবিশ্বাসী ও আত্মপ্রত্যয়ী হতে শিখে। তরুণ প্রজন্মের প্রতি বঙ্গবন্ধুর চোখ ছিল সবসময় কোমল। কারণ তিনি জানতেন তরুণরাই তাদের সৃষ্টিশীল মেধা ও প্রচেষ্টাকে কাজে লাগিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম।
আমি চোখ বন্ধ করে বঙ্গবন্ধুর নাম নিলেই মনের অকপটে ভেসে ওঠে স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্রের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর এক টুকরো হাসি। কানে যেন শুনতে পাই বঙ্গবন্ধুর সেই বজ্রধ্বনি ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ বঙ্গবন্ধু তরুণদের কাছে চিরকালই সততা, ন্যায়, কল্যাণ ও আদর্শের প্রতীক। যিনি নিজের স্বার্থকে কখনোই প্রাধান্য দেননি, জাতির কল্যাণের কথা ভেবেছেন সবসময়। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও বিশ্বাস মনের মধ্যে আঁকড়ে ধরে রাখলে তরুণ প্রজন্ম কখনোই বিপথে যাবে না- এমনটাই প্রত্যাশা।
স্বাধীন বাংলায় অমলীন থাকুক বঙ্গবন্ধুর অস্তিত্ব
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফারহানা ইয়াসমিন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার অস্তিত্বে বঙ্গবন্ধু আছে বলে আজও নদীর বুকে পদ্ম ভাসে, বাংলার ঘরে প্রদীপ জ্বলে, হৃদয়ের মন্দিরে ভালোবাসা জন্মে এবং চেতনার জোয়ারে লাল-সবুজের পতাকা উড়ে। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ছিল অসম ও বৈষম্যমূলক সমাজব্যবস্থার পরিবর্তনে মানবতাবাদী, শোষণহীন ও সমতামূলক সামগ্রিক সমাজব্যবস্থার দিকনির্দেশন। মূলত, কাঠামোগত পরিবর্তনের মূল নিয়ামক হলো দৃঢ় প্রত্যয় ও স্বাধীনতার স্বাদ আস্বাদন। যেগুলো বঙ্গবন্ধুর আদর্শে এখনো জ্বল জ্বল করছে। এখনই তরুণ সমাজের উচিত তার আদর্শের আলোতে নিজেদের আলোকিত করা।
তাছাড়াও যখন অত্যাচারের জাতাকলে পিষে শেষ হয়ে যাচ্ছিল একটি জাতির প্রাণ তখনই মুক্তির কান্ডারি হয়ে হাজির হলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের সময় অত্যাচারি পাকিস্তান গোষ্ঠীর মতো অস্ত্র, প্রশিক্ষণ আমাদের ছিল না, কিন্তু আমাদের মগজে ছিল বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, হৃদয়ে ছিল বঙ্গবন্ধুর প্রখরতা। এজন্য স্বাধীনতার ৫০ বছর পর আজও তারুণ্যের কাছে বঙ্গবন্ধু মানে শুধুমাত্র একটি নাম না, বঙ্গবন্ধু মানে এক আত্নবিশ্বাসের ছোঁয়া, গৌরবের উষ্ণতা, ভালোবাসা।
তারুণ্যের আদর্শ হোক বঙ্গবন্ধু
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মোস্তাকিম খন্দকার মঈন। তিনি বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত এই নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি আমাদের দিয়েছেন স্বাধীনতা, দিয়েছেন একটা জাতীয় পতাকা আর একটা মানচিত্র। তিনি বাংলার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত ছুটে বেড়িয়ে বাঙালির কাছে পৌঁছে দেন পরাধীনতার শিকল ভাঙার মন্ত্র। সে মন্ত্রে বলীয়ান হয়ে স্বাধীন দেশে পরিণত হওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ আজ বিশ্বে রোল মডেল।
শৈশব থেকে তৎকালীন সমাজজীবনে তিনি জমিদার, তালুকদার ও মহাজনদের অত্যাচার, শোষণ ও প্রজা পীড়ন দেখে চরমভাবে ব্যথিত হতেন। গ্রামের হিন্দু, মুসলমানদের সম্মিলিত সম্প্রীতির সামাজিক আবহে তিনি দীক্ষা পান অসাম্প্রদায়িক চেতনার। তরুণদের কাছে বঙ্গবন্ধু এক আদর্শের নাম। বঙ্গবন্ধুর আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব, তার বাগ্মিতা, মানুষের প্রতি নিঃস্বার্থহীন ভালোবাসা, সাহসিকতা প্রভৃতি গুণাবলী তরুণদের সহজেই আকৃষ্ট করে।
হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাঙ্ক্ষিত সোনার বাংলাদেশ গড়তে তরুণরা সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। বাংলা ও বাঙালি যত দিন থাকবে, এ পৃথিবী যত দিন থাকবে, পৃথিবীর ইতিহাস যত দিন থাকবে, শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসায় এ মহাপুরুষকে চিরকাল স্মরণ করবে।
লেখক: শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
জবি/মাহি
আরো পড়ুন