ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

সুবর্ণজয়ন্তীতে মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মের প্রত্যাশা

মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৩৭, ২৫ মার্চ ২০২১   আপডেট: ১৫:৪৫, ২৫ মার্চ ২০২১
সুবর্ণজয়ন্তীতে মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মের প্রত্যাশা

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের মধ্যে দিয়ে বিশ্বের মানচিত্রে নতুন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল একটি ভূখণ্ডের, নাম বাংলাদেশ। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের আছে নানা অর্জন, নানা চ্যালেঞ্জ। 

বঙ্গবন্ধু ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অর্জিত বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫০ বছরে পদার্পণ করেছে। সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনীদের একমাত্র সংগঠন বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিষদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্যদের প্রত্যাশা ও আকাঙ্ক্ষা তুলে ধরেছেন এই শাখার চেয়ারম্যান মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ। 

সৈয়দ সিয়াম আহমেদ

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষার্থী সৈয়দ সিয়াম আহমেদ। তিনি বলেন, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। বাঙালির হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল, গোলামীর জিঞ্জির ভেঙে স্বাধীনতার লাল সূর্যের রঙের সঙ্গে মিশে আছে ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত, দুই লাখ মা বোনের সম্ভ্রম হারানোর বেদনা এবং বিপুল সম্পদ ক্ষতির মাশুল। 

বিশ্বের অন্য কোনো জাতি, অন্য কোনো দেশের স্বাধীনতা অর্জনে এত ত্যাগের নজির ইতিহাসে বিরল। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এসেও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, দুর্নীতিসহ নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন এখনো দেখতে পাইনি। অর্জন করতে পারিনি স্বাধীনতার মূল উদ্দেশ্য। আমাদের স্বাধীনতা লাভ সেদিনই পূর্ণ হবে, যেদিন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কাজে লাগিয়ে সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে এগিয়ে যাবে দেশ। 

মালিহা আফরিন

বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মালিহা আফরিন। তিনি বলেন,  স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হলেও সেই একই হারে দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের আর্থ-সামাজিক উন্নতি ঘটেনি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী সামনে রেখে আজকে শুধু সাফল্যের দিকে নয়, আমাদের ব্যর্থতার দিকেও প্রথম ফিরে তাকাতে হবে। যথাযথ পদক্ষেপ ও ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমেই সব ক্ষেত্রে বিরাজমান ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে হবে। 

দুর্নীতি, লুটপাট, সামাজিক অপরাধ ও অন্যান্য ক্ষেত্রে বিরাজমান ব্যর্থতা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। আমাদের দেশ ও জাতিকে আরও গৌরবোজ্জ্বল করতে দেশে পূর্ণাঙ্গ গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। স্বাধীন দেশের উত্তরসূরী হয়ে আমরা যেন পূর্বসূরীদের আত্মত্যাগ ভুলে না যাই। তা যথাযথভাবে যেন পরের প্রজন্মে স্থানান্তরিত করতে পারি, সেই প্রত্যাশা রইল।

স্মিতা জান্নাত 

বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী স্মিতা জান্নাত। তিনি বলেন, হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি স্বাধীনতার লাল সূর্য। গোলামীর জিঞ্জিরা ভাঙতে ত্রিশ লাখ মানুষ রক্ত দিয়ে শহীদ হয়েছেন, দুই লাখ মা-বোন দিয়েছেন সম্ভ্রম। বিশ্বের অন্য কোনো জাতির স্বাধীনতা অর্জনের এই ইতিহাস বিরল। 

মুক্তি প্রজন্ম হিসেবে স্বাধীনতার মাহাত্ম্যকে নতুনভাবে উপলব্ধি করাতে হবে। শহীদের ত্যাগের মনোভব এবং দেশের জন্য সর্বোচ্চ উন্নতি কামোনার দৃষ্টান্ত দেখাতে চাই জাতিকে। এবারের স্বাধীনতা অর্জনের ৫০তম বছরে এসে দেশের জন্য লড়াই করা যোদ্ধাদের বিনম্র চিত্তে স্মরণ করছি। 

আহনাফ তাহমিদ ফাইয়াজ

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষার্থী আহনাফ তাহমিদ ফাইয়াজ। তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে রয়েছে নানা অসামঞ্জস্য, অক্ষমতা। সেইসঙ্গে রয়েছে অনেক প্রাপ্তি, অনেক শক্তি আর অনেক অর্জন। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে বঙ্গবন্ধু ও বীর সন্তানদের কাঙ্ক্ষিত সোনার বাংলার অগ্রযাত্রা অনেকটাই এগিয়ে গেছে। তবে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানরা অসাম্প্রদায়িক চেতনার, বৈষম্যহীন একটি দেশ গড়ার প্রত্যয়ে হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছিল কিন্তু সে স্বপ্ন এখনো পূরণ হয়নি। 

সাম্প্রদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে কিছু গোষ্ঠী এখনো দেশে মাথাচারা দিয়ে উঠে। এটাই হয়ত আমাদের ব্যর্থতা। সব অক্ষমতাকে জয় করে, দেশ ও দেশের মানুষকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা তৈরি করতে হবে। মুক্তিযোদ্ধার প্রজন্ম হিসেবে চাওয়া থাকবে যে, বাংলার মা-মাটিকে ভালোবেসে আমাদের পূর্ব প্রজন্ম জীবন বাজি রেখেছিলেন, সেই অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে সাম্য-ভ্রাতৃত্বকে কাজে লাগিয়ে সবাই মিলে দেশটাকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরিত করবো, এমনটাই প্রত্যাশা।

খায়রুল হাসান আকাশ

বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের শিক্ষার্থী খায়রুল হাসান আকাশ। তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির পাশাপাশি সবচেয়ে আনন্দের বিষয়টি হলো মানুষটার তর্জনীর জোরে ভরসা পেয়ে মুক্তিকামী মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশকে স্বাধীন করেছিল, এ বছরেই সেই জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন হচ্ছে। আমরা বিজয় দেখিনি, কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান হিসেবে শুনেছি এবং জেনেছি সেই রণাঙ্গনের কঠিন দুঃসময়ের দিনগুলোর কথা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আগামী ১০ বছর পর হয়তো একজন মুক্তিযোদ্ধা খুঁজে পাওয়াও বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। 

সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে আমাদের লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হবে অনুপ্রেরণা। এজন্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি আজীবন স্মরণ রাখতে হবে। তাই মুক্তিযোদ্ধার প্রজন্ম হিসেবে আমি মনে করি, যথাযথ প্রশাসনের ও উচিত মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিচারণগুলো ডিজিটাল ভার্সনে সংরক্ষণ করা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে পড়ুক প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে এই প্রত্যাশাই রইলো।

আসমা উল হুসনা অর্থী

বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থী আসমা উল হুসনা অর্থী। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে এই স্বাধীন ভূখণ্ডটি অনেক কিছু পেয়েছে আবার অনেক কিছুই হারিয়েছে। যে প্রত্যাশা নিয়ে লাখ লাখ মানুষ অকাতরে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, তার অনেকটাই আবার বাস্তবায়িত হয়েছে। তবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে এখনো ঘাটতি রয়েছে। তাই তো স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরেও আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারিনি। 

ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারবো সোনার বাংলাদেশ। চলমান রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রেখে উন্নত রাষ্ট্র বিনির্মাণে আমাদের আরও অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তবেই কেবল প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ আস্বাদন করতে পারবে। পৃথিবীর মানচিত্রে লাল-সবুজের বাংলাদেশ হবে নবজাগরণে উদ্দীপ্ত।

ঢাকা/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়