ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

জার্মানিতে পড়তে যাওয়ার আগে যা জানতে হবে 

মো. মঈন উদ্দিন সাব্বির  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:১০, ৩০ মার্চ ২০২১   আপডেট: ১৬:১২, ৩০ মার্চ ২০২১
জার্মানিতে পড়তে যাওয়ার আগে যা জানতে হবে 

প্রতিবছর বাংলাদেশসহ বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা নিতে জার্মানিতে যাচ্ছেন। উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা ও স্বল্প খরচে ডিগ্রিপ্রাপ্তির সুবিধার জন্য শিক্ষার্থীরা জার্মানির প্রতি বেশ আগ্রহী। তবে, জার্মানির উদ্দেশ্যে বিমানে চড়ার আগে শিক্ষার্থীদের বেশ কিছু বিষয় জেনে রাখা প্রয়োজন, যা তাদের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক হবে৷ 

ভিসা জটিলতা

জার্মানিতে যেতে আগ্রহী শিক্ষার্থীকে ঢাকায় অবস্থিত জার্মান দূতাবাসে ভিসার জন্য আবেদন করতে হয়। ভিসার আবেদনপত্র দূতাবাস থেকে সংগ্রহ করতে হয়। ফরম পুর্ণাঙ্গভাবে পূরণে খেয়াল রাখতে হবে, নয়ত তা বাতিল হয়ে যেতে পারে। স্টাডি ভিসার জন্য যেসব কাগজপত্র প্রয়োজন-

১. দুটি যথাযথভাবে পূরণকৃত আবেদনপত্র ও প্রয়োজনীয় ডিক্লারেশন লেটারের অনুলিপি।

২. দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি

৩. মূল পাসপোর্ট ও ফটোকপি

৪. যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়তে যাবেন, সেখান থেকে ইস্যুকৃত ‘Letter of Acceptance’

৫. ব্যাংক স্টেটমেন্ট কপি (যা প্রমাণ করবে জার্মানিতে অবস্থানকালীন সময়ে আপনি আর্থিকভাবে স্বচ্ছল অবস্থানে থাকবেন)।

দূতাবাস কর্তৃপক্ষ ভিসার ক্যাটাগরি অনুযায়ী যাচাই-বাছাই করার জন্য সে দেশের নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেয়। যদি সে দেশের কর্তৃপক্ষ আবেদনপত্রটি অনুমোদন করে, তবে দূতাবাস প্রার্থীকে ভিসা দেয়। উন্নয়নশীল দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে জার্মানির ভিসা পাওয়া একটু কঠিন৷ ৬-৭ সপ্তাহ সময় হাতে রেখে ভিসার জন্যে আবেদন করতে হবে, ধৈর্য ধরে থাকতে হবে প্রতি ক্ষেত্রে। তাছাড়া শিক্ষার্থীরা জার্মানিতে যাওয়ার পর মাঝেমধ্যেই ‘আউসলান্ডারবেহ্যোর্ডে’ বা বিদেশিদের জন্য নির্ধারিত সরকারি কার্যালয়ে দেখা করতে যেতে হয়৷ 

টিউশন ফি নেই 

জার্মানির ১৬টি রাজ্যের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সুনির্দিষ্ট কিছু প্রোগ্রামে আবেদন করলে বিনা খরচে পড়ার সুযোগ রয়েছে৷ সেক্ষেত্রে স্থানীয়রা যেসব শর্ত মেনে লেখাপড়া করেন, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদেরও সেগুলো মেনে চলতে হয়৷ তবে ‘স্টাডি অ্যাবরোড’ প্রোগ্রাম এবং প্রাইভেট ইনস্টিটিউটে পড়ালেখা ফ্রি নয়৷ 

যথাযথভাবে অনুদানের আবেদন করুন

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন অনুদান ও ফেলোশিপের ব্যবস্থা রয়েছে জার্মানিতে৷ বিষয় যাই হোক না কেন, কোনো শিক্ষার্থী যদি মেধাবী হন এবং উচ্চশিক্ষার জন্য পরিশ্রমে আগ্রহী হন, তাহলে অনুদানের জন্য আবেদন করলে তিনি সফল হতে পারেন৷ ‘জার্মান অ্যাকাডেমিক এক্সচেঞ্জ সার্ভিস’ বা ডিএএডি (DAAD) এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সহায়তা করে থাকে৷ তবে অনুদানের আবেদনপত্র প্রফেশনালদের মতো হওয়া চাই৷

জার্মান ভাষা বলতে পারলে অনেক সুবিধা

যে কোনো দেশের জাতীয় ভাষা শিখতে পারলে সেখানে থাকা অনেক বেশি সহজ হয়ে যায়। ইউরোপিয়ান অধিকাংশ দেশগুলোতে তাদের জাতীয় ভাষাকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। তবে, জার্মানির বড় শহরগুলোতে জার্মান ভাষা না জেনেও বসবাস করা যায়৷ তাছাড়া বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ইংরেজিতে পড়ালেখার সুযোগ রয়েছে৷ কেউ যদি পড়ালেখা শেষে জার্মানিতে চাকরি করতে চায়, তাহলে ভাষা জানাটা অনেক জরুরি৷ এক্ষেত্রে ডয়চে ভেলের জার্মান ভাষা শিক্ষা কোর্স বেশ সহায়ক।

জার্মানদের সঙ্গে থাকুন

জার্মানির বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা থাকে, তবে শিক্ষার্থীদের জন্য সেটা বাধ্যতামূলক নয়৷ অনেক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিক করে দেওয়া অ্যাপার্টমেন্টগুলো শিক্ষার্থীদের পছন্দ হয় না৷ আশার কথা হচ্ছে, দেশটির কিছু ওয়েবসাইট রয়েছে, যেখান থেকে আপনি নিজ পছন্দ মতো থাকার জায়গা বেছে নিতে পারবেন। চেষ্টা করবেন জার্মান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একত্রে থাকার জন্য, এতে ভাষা রপ্ত করা আপনার জন্য সহজ হবে৷

নিজেকে নিজেরই সহায়তা করতে হবে

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাইভেট কলেজগুলো ব্যয়বহুল হলেও সেখানের কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের বিষয়ে অনেক খেয়াল রাখে৷ শিক্ষার্থীদের কেউ ক্রমাগত ক্লাস মিস করলে তাকে জানিয়ে দেওয়া হয়৷ ক্যাম্পাসে কখন, কোন প্রোগ্রাম হচ্ছে তাও সুনির্দিষ্টভাবে শিক্ষার্থীদের জানাতে উদ্যোগ রয়েছে৷ 
তবে জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম৷ শিক্ষার্থীদের একটিভ থাকাটা বেশ জরুরি। ক্লাস-পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য; কখন, কোথায় কোনো প্রোগ্রাম চলছে কিনা, সেটার খোঁজ রাখা শিক্ষার্থীদের নিজেদের দায়িত্ব৷ 

সব কিছুর কপি রাখুন

জার্মানিতে আসার পর শিক্ষার্থীরা নিয়মিত বিভিন্ন চিঠি পাবেন৷ এমনকি কবে বাড়ির সামনে কোন ধরনের ময়লা-আবর্জনা রাখা যাবে, সেটাও জানানো হয় চিঠির মাধ্যমে৷ বুদ্ধিমানের কাজ হবে, সব চিঠি জমা করে রাখা, তবে প্রয়োজন অনুযায়ী সময়মতো উত্তর দিতে ভুল করা যাবে না৷ দেশটির জটিল আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ারই অংশ এসব চিঠি৷

আপনি একা নন

শিক্ষার্থী হিসেবে জার্মানিতে বসবাস শুরুর দিকে বেশ কঠিন মনে হতে পারে৷ আপনি একাই বুঝি এত পরিশ্রম করছেন ভাবনা আসা অবান্তর নয়৷ তবে বাস্তবতা হচ্ছে, এদেশে পড়তে আসা সব শিক্ষার্থীকেই একি পথে চলতে হয়। তাই নিজের সমস্যা নিজেকেই সমাধান করতে শিখতে হবে৷ বিভিন্ন ভাষাভাষীসহ স্থানীয় কমিউনিটি এবং বিভিন্ন অনলাইন ফোরামের সঙ্গে সংযুক্ত থাকাটা জরুরি। তাছাড়া দেশটির নিয়মকানুন, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি সম্পর্কে বেশ ভালোভাবে জেনে নেওয়া হচ্ছে বুদ্ধিমানের কাজ। 

বেশি কাজের মানসিকতায় লাগাম টানুন

একজন বিদেশি শিক্ষার্থী হিসেবে পড়ালেখার ফাঁকে শিক্ষার্থীরা কতটুকু কাজ করতে পারবেন, সেটা নির্ধারণ করে দেওয়া থাকে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউর কোনো দেশের পাসপোর্টধারী নয়, এমন শিক্ষার্থীরা বছরে ১২০ দিন পূর্ণদিবস কিংবা ২৪০ দিন অর্ধদিবস কাজ করতে পারেন৷ এছাড়া সেমিস্টার চলাকালে সপ্তাহে ২০ ঘণ্টার বেশি কাজ করার সুযোগ নেই৷ কোনো শিক্ষার্থী গোপনে বাড়তি কাজের চেষ্টা করে ধরা পড়লে বেশ সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে।

থাকবেন নাকি চলে যাবেন?

শুরুর দিকে জার্মানিতে বসবাস কঠিন মনে হলেও দেশটি ক্রমশ শিক্ষার্থীদের ভালো লাগতে শুরু হয়৷ ডিগ্রি, চাকরি এবং নিরাপদ জীবন–এসব বিবেচনা করে শিক্ষার্থীরা এক সময় সিদ্ধান্ত নেন দেশটিতে স্থায়ীভাবে থেকে যেতে। কখনো দেশের কথা ভেবে ফেরত যেতেও চান অনেকে। তাই সার্বিক দিক বিবেচনায় দ্বিধায় না পড়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব একান্ত শিক্ষার্থীদেরই।

ঢাকা/মাহি 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়