ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

দেয়াল চিত্রে সেজেছে জাবির সাংবাদিকতা বিভাগ 

ইমন ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০৫, ১ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ১৮:০৮, ১ এপ্রিল ২০২১
দেয়াল চিত্রে সেজেছে জাবির সাংবাদিকতা বিভাগ 

পরিবার তখনই সুন্দর ও আনন্দের হয়, যখন নতুনত্বের ছোঁয়া লাগে পরিবারে। সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ হলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম একটি পরিবার। যে পরিবারটি নতুনরূপে, নতুন রঙে সেজেছে। নতুনত্বের ছোঁয়া পেয়ে বিভাগটি পেয়েছে নতুন রূপ, নতুন প্রাণ। 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; প্রাকৃতিক সৌন্দর্য থেকে শুরু করে সাংস্কৃতিক, স্থাপত্যশিল্প, বাহারি কারুশিল্পের প্রায় সব উপাদানই খুঁজে পাওয়া যায় এই শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠে। ক্যাম্পাসের অন্যতম আকর্ষণ হলো এখানকার আর্ট ও কারুশিল্পীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্ট ও কারুশিল্পীরা তাদের ক্যাম্পাসকে নতুন এক রূপে ফুটিয়ে তুলছেন রঙ-তুলির আঁচড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে দেয়ালে শোভা পাচ্ছে তাদের হাতে আঁকা চিত্রকর্মগুলো।

জাবির অন্যতম আকর্ষণ হলো এখানকার বিভাগগুলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় প্রতিটি বিভাগেই রয়েছে একঝাঁক শিক্ষক-শিক্ষার্থী। তাদের কাছে বিভাগগুলো শুধু একটি বিভাগ নয়, একেকটি পরিবার। যে পরিবারের সদস্য হিসেবে প্রতিটি শিক্ষার্থী তাদের প্রাণের বিভাগকে নতুনরূপে, নতুন রঙে সাজাতে বদ্ধপরিকর।

জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের অবস্থান বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের চতুর্থ তলায়। বিভাগটি প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই বেশ উদ্যম নিয়ে এগিয়ে চলছে। বাংলাদেশের সাংবাদিকতা জগতের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে অনবদ্য ভূমিকা রাখাসহ নিজেদের সাফল্যের উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপনের পাশাপাশি এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা অন্যসব ক্ষেত্রেই নিজেদের যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে আসছেন। এখানকার প্রতিটি শিক্ষক-শিক্ষার্থী সৌন্দর্য প্রেমীও বটে। 

এই বিভাগের প্রতিটি শিক্ষক অত্যন্ত মানবিক ও সৌন্দর্য চেতনায় উদ্দীপ্ত। শিক্ষকরা সর্বদা শিক্ষার্থীদের মানবিকতা ও সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ হয়ে গড়ে ওঠার শিক্ষা দিয়ে থাকেন। বিভাগের উন্নয়ন কার্যক্রমসহ বিভিন্ন সৌন্দর্য বর্ধনের কাজে শিক্ষকরা সর্বদা শিক্ষার্থীদের পাশে থেকেছেন। আর তাই শিক্ষার্থীরা যদি বিভাগের প্রাণ হয়, তাহলে শিক্ষকরা অবশ্যই অক্সিজেন হওয়ার ভূমিকা রাখে।

এই বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা একদিকে যেমন সংস্কৃতিমনা, সেইসঙ্গে চিত্রকর্ম ও কারুশিল্প বিদ্যায়ও পারদর্শী। বছরের বিভিন্ন বর্ষবরণ, নবান্ন উৎসবে রঙ-তুলির আঁচড়ে বাহারি রঙের আলপনা, দেয়াল চিত্র, কারুকাজ করে অনবদ্য খেতাব ও জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের চতুর্থ তলায় হওয়ার কারণে বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্লাসরুমে বসেই প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন, যা বিভাগের সৌন্দর্য চেতনাকে করেছে আরও সমৃদ্ধ।

দেয়ালে দেয়ালে বাহারি রঙের চিত্রাঙ্কন করা হয়েছে, যা বিভাগের সৌন্দর্যকে শতগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। নতুন কলা ভবনের তৃতীয় তলা থেকে বিভাগে ওঠার সিঁড়ির দেয়ালগুলো রঙের আঁচড়ে ছেয়ে গেছে। সাংবাদিকতায় সম্পৃক্ত বিভিন্ন ধরনের ডিভাইসের চিত্র আঁকা হয়েছে। লাল ইটের দেয়ালগুলোতে যেন জীবন্ত প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। 

দেয়াল চিত্র সম্পর্কে জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের বিভাগের সভাপতি ও সহকারী অধ্যাপক শেখ আদনান ফাহাদ বলেন, ‘পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর থাকলে শিক্ষার্থীরাও আনন্দ পাবে, তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়বে, এই বিশ্বাস থেকে বিভাগের একাডেমিক কমিটির অনুমতি নিয়ে সবার সহযোগিতায় এই সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়েছে। আমাদের স্বাদ আছে, সাধ্য নেই। এটা চলমান প্রক্রিয়া। শিক্ষার্থীদের কল্যাণে সভাপতি হিসেবে আমার প্রয়াশ অব্যাহত থাকবে।’

বিভাগের সাবেক সভাপতি ও সহকারী অধ্যাপক উজ্জল কুমার মন্ডল বলেন, ‘আমাদের বিভাগের দেয়ালগুলোতে একাডেমিক বিষয়গুলোই চিত্রকর্মের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। এতে বিভাগের সব সদস্য যেমন দেখতে পাবে, শিখতে পারবে, সেইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষার্থী এমনকি পর্যটকরাও আমাদের বিভাগ সম্পর্কে জানতে পারবে।’ 

করোনাভাইরাসের কারণে গত বছরের মার্চ মাস থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বন্ধ রয়েছে, সেইসঙ্গে বন্ধ রয়েছে প্রাণের সাংবাদিকতা বিভাগ। শিক্ষার্থী শূন্য ফাঁকা বিভাগটি যেন প্রাণহীন নিস্তদ্ধ হয়ে পড়েছে। ফাঁকা ক্লাসরুমগুলো যেন কান্নার সুরে সুরে ডাকছে আমাদের। ফাঁকা করিডোরগুলো যেন শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হওয়ার অধীর আগ্রহে প্রহর গুণছে। বিভাগের কারুকাজ ও বাহারি রঙের দেয়াল চিত্রের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে না পেরে শিক্ষার্থীরা তাদের অনুভূতিগুলো ব্যক্ত করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। 

ওই সৌন্দর্যের কোনো মূল্য নেই, যে সৌন্দর্য উপভোগ করার কেউ নেই। প্রাণের বিভাগের প্রতিটি শিক্ষার্থী বিভাগের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। প্রাণবন্ত ক্যাম্পাসের প্রাণবন্ত পরিবারে আবার তারা ফিরতে চান এমনটাই প্রত্যাশা প্রাণপ্রিয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।

লেখক: শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

জাবি/মাহি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়