ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

কুবি নৃবিজ্ঞানের একযুগে পদার্পণ 

জুবায়ের রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:২৬, ৩ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ১৭:৩০, ৩ এপ্রিল ২০২১
কুবি নৃবিজ্ঞানের একযুগে পদার্পণ 

পৃথিবীতে ঠিক কত আগে জ্ঞানের মশাল জ্বালাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল তার সঠিক সময় ও ইতিহাস আমাদের হয়তো কারোই জানা নেই। তবে ধারণা করা হয়, প্লেটোর আমলে প্রথম একাডেমিক ধারণা আসে।

জ্ঞানের সন্ধ্যানে দেশ থেকে দেশান্তরে ছুটে গেছে কত জ্ঞানপিপাসু তার ইয়ত্তা নেই। কখনো বাস্তবিক জীবনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দর্শনের জ্ঞান আহরণ করেছে মানুষ, কখনো বিজ্ঞান, চিকিৎসা, জৌতির্বিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান প্রভূত বিষয়ের প্রতি ঝুঁকে পড়েছে। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে, চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন নতুন জ্ঞানরাজ্য আজও তৈরি হচ্ছে এই বিশ্ব ব্রক্ষ্মান্ডের জানা-অজানা রহস্যকে কেন্দ্র করে। তবুও কি মানুষ তার জ্ঞানের চাহিদা পূরণ করতে পেরেছে! নাকি উত্তপ্ত মরুভূমিতে এক ফোঁটা জল পান করে তার চাহিদা বহুগুণে বৃদ্ধি করেছে?

সেসব বিষয় নিয়ে না হয় অন্য কোনো দিন ভাবা যাবে। তবে এত এত জ্ঞান রাজ্যের ভিড়ে মানুষ কখনো কি নিজেকে জানার চেষ্টা করেছে? মানুষের কিভাবে উত্থান, কিভাবে কয়েক মিলিয়ন বছর পার করে আজকের অবস্থানে স্থান করে নিয়েছে, কিভাবে ভবিষ্যত অতিবাহিত হওয়ার আশঙ্কা করছে, সেসব বিষয়ের সামগ্রিক আলোচনার জ্ঞানরাজ্য হিসেবে কখনো কি কেউ চিন্তা করেছে? মানব সমাজ ও মানব আচরণের ভিন্নতা কোথায়, তা ভেবে দেখেছে?

দেখেছে! তবে সেটা বহু দেরিতে। এভাবে নতুন এক জ্ঞানভান্ডার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে নৃবিজ্ঞান৷ যার বিষয়বস্তু হলো মানুষ বিষয়ক অধ্যয়ন।

নতুন জ্ঞানরাজ্যটি কয়েক শতকের বৃদ্ধ হলেও দক্ষিণ এশিয়াতে একবারেই নতুন। বাংলাদেশে তার বয়স মাত্র ৩৬। ১৯৮৫ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশে নৃবিজ্ঞানের যাত্রা শুরু। আর লালমাটির সবুজ ক্যাম্পাস খ্যাত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে এর যাত্রা মাত্র ১১ বছরের। দেশের সপ্তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ২০১০ সালের ২৯ মার্চ, ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪র্থ ব্যাচ হিসেবে ৩৫ জন শিক্ষার্থীর বদৌলতে ৩ জন শিক্ষক নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে বিভাগটি। ইতোমধ্যে ৫টি ব্যাচ সফলভাবে তাদের শিক্ষাকার্যক্রম সমপন্ন করেছে।

প্রতিষ্ঠার ১১ বছর পেরিয়ে গেলো বিভাগটির। পাস করে চলে গেলো কত স্বপ্নবাজ তরুণ। দেশ-বিদেশ দাপিয়ে বেড়ানো স্বপ্নবাজরা স্বপ্নের করিডোরে শুধু স্মৃতি জমা রেখে গেলো। নবীনের আগমনে আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠছে করিডোর।

নৃবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এ বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা শিক্ষাঙ্গনের মান-উন্নোয়নের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংগাঠনিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছে। শুরু থেকেই এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি সংগঠন রয়েছে এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে। সাবেকদের পদচারণায় সংগঠনগুলোতে এই বিভাগের শিক্ষার্থীদের ভূমিকা ছিল আরও বেশি। সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণে বিভাগটির বেশকিছু অর্জন চোখে পড়ার মতো। আর সাংগাঠনিক সাফল্য ব্যাখ্যা করার মতো নয়। প্রতিবারই দু-তিনটে বৃহৎ পরিসরের সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্ব এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের হাতে ন্যস্ত থাকে। 

শুধু শিক্ষার্থীরা কেন? শিক্ষকদের ভূমিকাও কম কিসে? বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি সংগঠন প্রতিষ্ঠার পেছনে এ বিভাগের শিক্ষকদের নিরলস পরিশ্রম রয়েছে। এখনো এই বিভাগের শিক্ষকদের মাধ্যমে চলছে বেশ কয়েকটি সংগঠনের কার্যকক্রম। প্রশাসনিক কার্যক্রমেও তাদের বেশ তৎপরতা। 

পিছিয়ে নেই খেলাধুলাতেও। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অর্জন রয়েছে বিভাগটির। ফুটবল ও ক্রিক্রেট অঙ্গনে একবার করে রানারআপ হয়েছে বিভাগটি। প্রতিবারই সাফল্য আসছে ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টে।

নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিয়ে এখানে রয়েছে একটি ক্ষুদে সংগঠন ‘এনথ্রোপলজি সোসাইটি’। বিভাগের নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত এই সোসাইটির মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম সম্পাদন করে আসছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। জাতীয় দিবসগুলো থাকে ভিন্নধর্মী কার্যক্রম, যা সবার চোখে পড়ার মতো। হাতে তৈরি বিভিন্ন কারুকার্য জাতীয় দিবসগুলোতে বিভাগটির স্বাতন্ত্র বজায় রেখেছে। এই সোসাইটির অধীনে বিভাগটির রয়েছে বিতর্ক ক্লাব, ল্যাংগুয়েজ ক্লাব, কালচারাল ক্লাব ও রিডিং ক্লাব। ফলে শিক্ষার্থীরা এখান থেকে যে কোনো পরিবেশের জন্য তৈরি করতে সক্ষম হয়। নিজেকে ও নিজ বিভাগকে প্রতিনিধিত্ব করতে বিভাগের কার্যক্রমগুলো চোখে পড়ার মতো।

গবেষণা নির্ভর বিষয় হওয়ায় বৈশ্বিক অঙ্গনে শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা চোখে পড়ার মতো। ইতোমধ্যে কয়েকজন শিক্ষার্থী কয়েকটি আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানে নিজেদের অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে। নিজ বিভাগে শিক্ষক হওয়ার নজীর স্থাপন করেছে বিভাগটির সাবেক শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান লিপা। ছাত্রজীবনে তিনি ছিলেন একজন বিতার্কিক, যার মাধ্যমে তিনি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পা রেখেছিল। এছাড়াও জাতীয় বিতর্কে স্থান করে নিয়েছে বিভাগটির বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। যার ধারাবাহিকতা এখন আরও বেশি চোখে পড়ার মতো।

লেখক ও সাংবাদিক হিসেবে এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের ভূমিকা আরও বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্চ কাঁপিয়ে জাতীয় অঙ্গনেও অবস্থান নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা। নেচে-গেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে মাতিয়ে রাখার কাজটিও সাবলীলভাবে করে যাচ্ছেন বিভাগটির শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃবিজ্ঞানীদের ভূমিকা নিয়ে বিভাগটির চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আইনুল হক বলেন, নৃবিজ্ঞান বরাবরই খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও সাংগাঠনিক কর্মকাণ্ড অঙ্গনে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। ডিবেটিং সোসাইটি, সাংবাদিক সমিতি, প্রতিবর্তন, থিয়েটার অনুপ্রাস ও আরও অন্যান্য অঙ্গনে ভূমিকা রাখছে। খেলাধুলায়ও বেশ কয়েকবার সফলতা দেখিয়েছে।  আমরা ইতোমধ্যে মাত্র ৫টি ব্যাচ সফলভাবে বের করতে সক্ষম হয়েছি যারা কয়েকটি আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানে নিজেদের অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে। আগামীতে আমাদের বিভাগ আরও বেশি ভালো করবে এই প্রত্যাশাই করি।

বেলাশেষে বলা যেতেই পারে যে, বিষয় নৃবিজ্ঞান হলেও শুধু নৃবিজ্ঞানীই তৈরি হচ্ছে না বিভাগটিতে। বহুমুখী কার্যক্রম ও পেশায় নিয়োজিত হচ্ছে বিভাগের শিক্ষার্থীরা। গবেষক, লেখক, সাংবাদিক, বিতার্কিক, শিক্ষক, সাংস্কৃতিককর্মীসহ বহুমুখী পদচারণা এখানের শিক্ষার্থীদের।

লেখক: নৃবিজ্ঞান বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

কুবি/শরীফ/মাহি  

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়