ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

তারুণ্যের ভাবনায় বাংলা নববর্ষ

সবুজ আহমেদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০০, ১৪ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ১৩:০২, ১৪ এপ্রিল ২০২১
তারুণ্যের ভাবনায় বাংলা নববর্ষ

দিনপঞ্জিকার পাতায় ১৪২৭ কে বিদায় জানিয়ে ১৪২৮-এর আগমন। কালের খেয়ায় আরেকটি নতুন বছর। নতুন সুর্যের লাল আভায় আলোকিত হোক ব্যক্তি, সমাজ, জাতি ও দেশ। নববর্ষ আমাদের জীবনে আসে নতুন স্বপ্ন নিয়ে, বেঁচে থাকার নবীন আশ্বাস নিয়ে। 

নববর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখে অতীতের কথা ভুলে গিয়ে আমরা নতুনের আহ্বানে সঞ্জীবিত হয়ে উঠি। কিছু অসত্য, অসুন্দর, অশুভ আর অমঙ্গলজনক সে সবকে ঝেড়ে ফেলে সত্য, সুন্দর, ভালো আর মঙ্গলের জন্য অপেক্ষমাণ সবাই। দেশের মোট জনসংখ্যার বিরাট একটি অংশ তরুণ। তারুণাই একটি দেশের এগিয়ে যাওয়ার বিশাল শক্তি। নতুন বছরকে কেন্দ্র তরুণ প্রজন্মেরও রয়েছে নানা কল্পনা-পরিকল্পনা আর আশা-প্রত্যাশা। আছে নানা চিন্তা-ভাবনা। তাদের সেই প্রত্যাশা আর ভাবনার কথা জানাচ্ছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সবুজ আহমেদ।

নববর্ষ উদযাপিত হোক বাঙালির অন্তরে  

রাপুলু বড়ুয়া, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, বাঙালি জাতির সমৃদ্ধ ইতিহাস, গৌরবোজ্জল ঐতিহ্য ও মনোরম সংস্কৃতিগুলো বৈচিত্র্যময়। বাংলাদেশের ষড়ঋতুর পরিবর্তনের সাথে সাথে নবরূপে সজ্জিত হয় পরিবেশ ও উদযাপিত হয় নতুন নতুন উৎসব। অসংখ্য উৎসবের মধ্যে একটি প্রধান উৎসবের নাম হলো পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ। 

মুঘল সম্রাট আকবরের হাত ধরে ফসলি সন থেকে বঙ্গাব্দ এবং পরে বাংলা বর্ষ নামের এক বাংলা পঞ্জিকার উৎপত্তি হয়। আকবরের আমলে এই বাংলা বর্ষের প্রথম দিনকে পহেলা বৈশাখ বা নববর্ষরূপে উদযাপনের প্রচলন শুরু হয়। বাঙালি জাতির এই দীর্ঘযাত্রায় সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না ও ঐতিহাসিক সংগ্রামের সাথে প্রতিবাদের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে এই পহেলা বৈশাখ। 

পান্তা ভাত-ইলিশ মাছ, নৌকা বাইচ-খেলা, হালখাতা ও পিঠাপুলিসহ অসংখ্য উৎসবে মেতে ওঠে দেশের আমজনতা। নববর্ষের দিনে ইতোমধ্যে বাংলাদেশের বিশেষ কিছু স্থান গান, নাচ, আবৃত্তি, নাগরদোলা ও অসংখ্য মেলা উদযাপনে প্রসিদ্ধ হয়ে ওঠেছে। এই অসাম্প্রদায়িক উৎসবটি প্রতিবছর মহাসমারোহে সাড়ম্বরে উদযাপিত হলেও এই বছর করোনা মহামারির কারণে সেভাবে উদযাপন করা অনেকটা অসম্ভব হয়ে গেছে। 

পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে যাক বাঙালির ঐতিহ্য পহেলা বৈশাখ

আয়েশা সিদ্দিকা, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, মেলায় যাইরে… পহেলা বৈশাখ এলে সবচেয়ে বেশি ভেসে আসে এই সুরটি। আজ থেকে ৩০ বছর আগে ফিডব্যাকের, ‘মেলা’ অ্যালবামে প্রকাশিত হয়। তারপর জনপ্রিয়তার মাত্রা কতটুকু পেয়েছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। 

পয়লা বৈশাক বা পহেলা বৈশাখ (বাংলা পঞ্জিকার প্রথম মাস বৈশাখের ১ তারিখ) বঙ্গাব্দের প্রথম দিন, তথা বাংলা নববর্ষ। বাংলা নবর্ষের ঐতিহ্যবাহী শুভেচ্ছা বাক্য হলো, ‘শুভ নববর্ষ'। দিনটি বাঙালি জাতির ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণের দিন। দিনটি বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নববর্ষ হিসেবে বিশেষ উৎসবের সঙ্গে পালিত হয়। 

ত্রিপুরায় বসবাসরত বাঙালিরাও এই উৎসবে অংশ নিয়ে থাকেন। সে হিসেবে এটি বাঙালিদের একটি সার্বজনীন লোকউৎসব হিসাবে বিবেচিত। বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা দিনটি নতুনভাবে ব্যবসা শুরু করার উপলক্ষ হিসেবে বরণ করে নেয়। এই উৎসব শোভাযাত্রা, মেলা, পান্তাভাত খাওয়া, হালখাতা খোলা ইত্যাদি বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে উদযাপন করা হয়। নববর্ষের সময় বাংলাদেশে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। 

নববর্ষের আনন্দ ছড়িয়ে যাক সবার মাঝে

নাইমা সুলতানা, দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, ঋতু পরিক্রমায় পুরনো বছর শেষ হয়ে যায়। সেই সঙ্গে শেষ হয় বিগত দিনের জীর্ণতা ও ক্লান্তি। চৈত্রের শেষে আসে পহেলা বৈশাখ। আসে নববর্ষের শুভক্ষণ আমাদের জাতীয় জীবনে আসে উৎসবের আমেজ। এ উৎসবের মর্মবাণী হলো নতুন বছরে আমার আনন্দটুকু হোক সবার আনন্দ। 

বাংলা নববর্ষ বাঙালির জীবনে আসে নানা অনুষ্ঠানের মালা সাজিয়ে। পহেলা বৈশাখ শুভ দিনটিতে বাঙালির ঘরে ঘরে আসে নতুন আনন্দ, নতুন উদ্দীপনায়। ঘরদোর সাজানো হয় নতুন করে। উপহার পাওয়া নতুন পোশাকে সাজে অনেকেই। নববর্ষ দোকানি ও ব্যবসায়ীদের জন্য নিয়ে আসে শুভ হালখাতার অনুষ্ঠান। পারস্পরিক শুভকামনা বিনিময় হয় আলিঙ্গনে। পত্র পত্রিকাগুলোতে ছাপা হয় নববর্ষ সংখ্যা। কিন্তু বর্তমান বিশ্ব ক্রান্তিময় পরিস্থিতিতে করোনা মহামারি আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করেছে। চারদিকে থেকে ধেয়ে আসছে মৃত্যু। শেষ পর্যন্ত মানুষের জয় হবে-এটাই প্রত্যাশা। 

আগামীর দিনগুলো মঙ্গলময় হোক

রিপন চন্দ্র পাল, ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, যখন বৃষ্টি পড়ে, তখন আকাশে মেঘের ঘনঘটা বিরাজমান থাকে। তখনকার সূর্য বা চাঁদ দুটোই মেঘ দ্বারা আবৃত হয়ে যায়। ১৪২৭ সালটা ঘরে বসে কাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। হয়নি নববর্ষ পালনও। হচ্ছে না এবারও। কারণ নববর্ষের দিন থেকেই কঠোর লকডাউন চলছে।  গত বর্ষে যেমন আমরা সবাই ঘরে বসে নানা আয়োজন উপভোগ করেছি, এবারও তেমনই করা উচিত। 

চবি/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়