ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

করোনাকাল যেভাবে কাজে লাগালেন শিক্ষার্থীরা

ফামিন জাহান ঐশী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪২, ১৯ এপ্রিল ২০২১  
করোনাকাল যেভাবে কাজে লাগালেন শিক্ষার্থীরা

একবিংশ শতাব্দীর মহামারি যখন ২০২০ সালের মার্চে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে, তখন চারদিক স্থবির হয়ে যায়। উন্নত, অনুন্নত, এমনকি বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশও বাদ পড়েনি করোনা প্রকোপ থেকে। বাংলাদেশের জনগণ পরিচিত হয় লকডাউন, আইসোলেশন, কোভিড ইত্যাদি শব্দের সঙ্গে। অফিস-আদালত, দোকানপাট থেকে শুরু করে বন্ধ করে দেওয়া হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও। এর প্রভাবে সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন শিক্ষার্থীরা।  

সেই সুবাদে অনেকেই ঘরে বসে মনোযোগ দিয়েছেন জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় ও আত্ম উন্নয়নে। এ প্রসঙ্গে কথা হয়েছে কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তারা বলেছেন, করোনাকালীন বন্ধে আমরা অনেক ডিজিটাইল ডিভাইসের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি, যা পরবর্তী সময়ে ডিজিটালাইজেশন বা অনলাইন আর্নিংয়ের ক্ষেত্রে কাজে লাগবে। বিভিন্ন সাইট যেমন; এলএডিপি, ঘুরি লার্নিং ডটকম, টেন মিনিট স্কুল, বহুব্রীহি, মুক্তপাঠে আমরা অভ্যস্ত হয়েছি। এ সাইটগুলো ব্যবহার করে জানতে পেরেছি পাঠদান, ব্যবহার বিধি ও অনলাইন স্কিল সম্পর্কে। 

এসময়ে ডিজিটাল মার্কেটিং, গ্রাফিক ডিজাইনিং, ওয়েব ম্যানেজমেন্ট, ভিডিও এডিটিং, ফটোগ্রাফি, কনটেন্ট রাইটিং, ল্যাংগুয়েজ লার্নিং ছাড়াও বিভিন্ন জনপ্রিয় বিষয়ে অনেক শিক্ষার্থী নিজ আগ্রহ ও চেষ্টায় হয়ে উঠেছেন পারদর্শী।

স্নাতক পড়ুয়া নাজমুল হাসান জানান, তিনি লকডাউনের সময়টাকে কাজে লাগিয়ে গ্রাফিক ডিজাইনিং ও ওয়েব ম্যানেজমেন্ট শিখেছেন। তার ধারণা, পরবর্তী ডিজিটাল বিশ্বে বেকারত্ব সমস্যার মোকাবিলা করতে এই শিক্ষা তাকে সাহায্য করবে।

শুধু রোজগার ছাড়াও অনেকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন আত্ম-উন্নয়নে। গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিক্ষার্থী মালিহা নবনী বলেন, ‘আমি বইপোকা স্বভাবের। অনেক বই পড়েছি, বাবার সাহায্যে ঘরের কাজ ও রান্না শিখেছি। বেঁচে থাকার জন্য একদম বেসিক স্কিল শিখে ফেলা আমাকে পরবর্তী জীবনে ভীষণভাবে সাহায্য করবে।’

পবিপ্রবির শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরিন বলেন, ‘সফট স্কিল, আউটসোর্সিংয়ের পাশাপাশি শখেরও প্রাধান্য দেওয়া উচিৎ। তাই আমি পরিচিত এক আপুর সুবাদে ক্যালিগ্রাফি শিখেছি। আমার মনে হয়, শখের কাজকে প্রাধান্য দিলে একদিকে যেমন মনের খোরাক পূরণ হয়, তেমনি ভবিষ্যতে এটি অর্থ উপার্জনেরও মাধ্যম হতে পারে।’

ঢাবি শিক্ষার্থী রাবেয়া আমিন বলেন, ‘বদ্ধ ঘরে বন্দী থেকে আমরা যেই সুযোগটা পেয়েছি, তাতে ইন্টারনেটই মূলত সাহায্য করেছে নতুন কিছু শিখতে। এর পাশাপাশি পুরনো শেখা অনেক কিছুই নতুন করে ঝালাই করার সুযোগ হয়েছে। আশাকরি, এই বিষয়গুলো আমাকে ব্যক্তিজীবন, সামাজিক জীবন, কর্মজীবন সবকিছুতেই ইতিবাচক সাহায্য করবে।’

আজকের অবস্থানে দাঁড়িয়ে করোনা মহামারির ভয়াবহতার সঙ্গে গোটা একটি বছর কাটিয়ে দেওয়ার পর যেমন সাধারণ জনজীবন বিপর্যস্ত হয়েছে, তেমনি সব চেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষাজীবনে এক বিরাট পরিবর্তন আসার সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে পড়েছে অনেকের মানসিক স্বাস্থ্য।

অনেক শিক্ষার্থী বেছে নিয়েছেন স্বেচ্ছায় জীবনযুদ্ধের গতি একেবারেই থামিয়ে দেওয়ার সুযোগ। এর মাঝেও অনেকে বেছে নিয়েছেন জীবনকে আরেকটি সুযোগ দেওয়ার প্রয়াস। কেউ শুনেছেন হাঁড়ি-কড়াইয়ের গল্প, তো কেউ ভালোবেসেছেন শখের কাজকে; তেমনি কারো বা হয়েছে নতুন সব দক্ষতার সঙ্গে পরিচয়। ভবিষ্যৎ সংগ্রাম, যোগ্যদের টিকে থাকার লড়াই, সবকিছু হারাবার উপক্রম হলেও আশাহত না হওয়া সেইসব শিক্ষার্থী যেন এভাবেই এগিয়ে যেতে পারে পরবর্তী সময়ে।

লেখক: শিক্ষার্থী, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

পবিপ্রবি/মাহি 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়