ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

প্রফেসরদের ই-মেইল করবেন যেভাবে

রাগিব হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৪১, ২৭ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ১৯:০৯, ২৭ এপ্রিল ২০২১
প্রফেসরদের ই-মেইল করবেন যেভাবে

আপনি যদি বিদেশে উচ্চশিক্ষা অর্জনে আগ্রহী হয়ে থাকেন, তাহলে সংশ্লিষ্ট দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা এবং এতে পারদর্শী হওয়া আপনার জন্য বাঞ্ছনীয়। কারণ তারাই আপনার ভবিষ্যৎ শিক্ষাজীবন এবং ক্যারিয়ারের জন্য পথপ্রদর্শক। 

বিশেষ করে প্রফেসরদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা আপনার জীবনের জন্য হতে পারে টার্নিং পয়েন্ট। অনুশীলনটা আপনার বর্তমান শিক্ষাজীবন থেকেই শুরু করা যেতে পারে। এটি আপনার মাঝে জ্ঞান বৃদ্ধি ও আত্মবিশ্বাস তৈরির পাশাপাশি প্রফেশনাল আচরণ শিখতেও সহায়তা করবে। 

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য ফান্ডিং অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এটি পাওয়ার জন্য বেশ কিছু শর্ত ও নিয়মাবলী থাকে, যা সব মুহূর্তে একজন শিক্ষার্থীর জন্য পূরণ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মনোযোগী হতে হবে ফেলোশিপ কিংবা টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্টশিপের প্রতি। তবে এগুলো ছাড়াও ফান্ডের অন্যতম উৎস হলো প্রফেসরদের কাছ থেকে রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ পাওয়া। প্রফেসরেরা সরকারি-বেসরকারিভাবে নানা উৎস হতে গবেষণার জন্য অনুদান পেয়ে থাকেন।  সেই প্রকল্পে কাজ করার জন্য এবং সহায়তা করার জন্য তাদের শিক্ষার্থীদের দরকার হয়। কাজেই জ্ঞান অর্জনের জন্যই হোক, ফান্ড পেতে হোক কিংবা কাজের অভিজ্ঞতা বাড়াতে; প্রফেসরদের সঙ্গে সখ্যতা থাকা আপনার সম্ভাবনা অনেকাংশে বৃদ্ধি করে দেয়। তাই দেশে থাকা অবস্থাতেই তাদের সঙ্গে ই-মেইলে যোগাযোগের মাধ্যমে সম্পর্ক সুদৃঢ় করা নিশ্চিত করতে হবে।

প্রফেসরদের সম্পর্কে জানুন 

কোনো প্রফেসরকে ই-মেইল করতে হলে শুরুতেই তার ওয়েবসাইট থেকে শুরু করে প্রকাশনার তালিকাগুলো ঘেটে দেখুন। তাদের গবেষণা সম্পর্কে ভালো করে জেনে নিন এবং ভেবে দেখুন আপনার পছন্দের কোনো বিষয়ের সঙ্গে সেগুলোর মিল হচ্ছে কিনা। বিস্তারিত পড়াশোনা করে তারপর ঠিক করুন কী কী বিষয়ে আলোচনা করতে ই-মেইল লিখবেন।

শিরোনাম ও রকম

অধিকাংশ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী একটি বড় ভুল করেন, তা হচ্ছে প্রথম ই-মেইলে সরাসরি বলে ফেলা যে তারা ফান্ড চাচ্ছেন কিংবা প্রফেসরের গ্রুপের সদস্য হতে ইচ্ছুক। এমন শত শত ই-মেইল প্রফেসররা পেয়ে থাকেন এবং বিরক্ত বোধ করে থাকেন। সুতরাং, প্রথমেই ফান্ডের কথা না বলে বরং রিসার্চ বিষয়ক আলোচনা করা ভালো। শিক্ষকদের গবেষণার এলাকা কিংবা তাদের গবেষণাপত্র নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে প্রশ্ন করা দিয়ে শুরু করা যেতে পারে। নিয়মিত ই-মেইল আদানপ্রদান করার হলে এরপর গ্রুপে শিক্ষার্থী নেওয়া হবে কিনা তখন জিজ্ঞেস করা যেতে পারে। এতে শিক্ষার্থীদের ম্যানার সম্পর্কে শিক্ষকদের ভালো ধারণা হয়। প্রথম দিকে আপনার মূল লক্ষ্যই থাকতে হবে যাকে ই-মেইল পাঠাচ্ছেন, তার আস্থা অর্জন করা এবং আপনার সম্পর্কে ভালো ধারণা বোধ করানো। 

ভাষা ও বানান 

ই-মেইলে আরেকটি বড় ভুল হচ্ছে লেখার সময়ে ভাষা ও বানানের দিকে খেয়াল না রাখা। শুধু বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা নয়, অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীরাও একই কাজ করে থাকে। এতে করে শিক্ষার্থীদের সম্ভাবনা অঙ্কুরে বিনাশ হয়ে যায়। তাদের মেইল পাঠাবার আগে বানান খেয়াল করে নিন, ব্যাকরণ ঠিক আছে কিনা ঠিকমতো দেখুন।

তাছাড়া আমি এমন কিছু ই-মেইলও দেখেছি, যারা প্রফেসরদের সঙ্গে কাজ করতে চায়, কিন্তু মেইলের ভেতরে তথ্য যেমন বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রফেসরের নাম, রিসার্চ ফিল্ডের নাম মিল। অর্থাৎ কপিপেস্ট করে একই মেইল বেশ অনেক জায়গায় পাঠানো হয়েছে। এভাবে ই-মেইল করলে তা ধরে ফেলাটা খুব সহজ এবং প্রফেসরদের কাছে নিজের ইমেজ নষ্ট করা ছাড়া আর কিছুই না। 

ই-মেইল ঠিকানা 

গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে শিক্ষার্থীদের ই-মেইল ঠিকানা। ই-মেইলে ব্যবহার করা নাম ও ধরন আপনার যেকোনো কাজের সম্ভাবনা অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। বহু শিক্ষার্থী রয়েছে যারা প্রফেশনালভাবে ই-মেইল একাউন্ট ব্যবহার করেন না। অনেকের বিদঘুটে সব ই-মেইল নাম থাকে, যেমন কুলগাই২১২@জিমেইল  কিংবা সুইটগার্ল৫৪৪ ইত্যাদি। এধরনের ই-মেইল থেকে মেইল পাঠালে শিক্ষার্থীদের যে কারো থেকে পাত্তা পাবার সম্ভাবনা কম। কাজেই আলাদা ইমেইল খুলুন, সবচেয়ে ভালো হয় অফিসিয়ালভাবে গ্রহণযোগ্য ই-মেইল একাউন্ট ব্যবহার করা। নিজের নামের প্রথমাংশ ডট শেষাংশ, এভাবে খুলতে পারলে উত্তম। যেমন, আপনার নাম আবদুল করিম হলে আবদুল.করিম@জিমেইল, তা না পেলেও আবদুল.করিম৫@জিমেইল, এভাবে খুলতে পারেন। 

ই-মেইল ট্রাকিং করবেন না 

প্রফেসররা আপনার ই-মেইল খুলে দেখেছেন কিনা তা নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই। অনেক সময়ে কেউ কেউ নানা রকমের ট্রাকার কোড ব্যবহার করে থাকেন, যা দিয়ে ই-মেইল দেখা হয়েছে কিনা তা বোঝার চেষ্টা করা যায়। প্রথমত, কাউকে এভাবে ট্র্যাক করা প্রচন্ড রকমের অনৈতিক ব্যাপার। দ্বিতীয়ত, এটি অনেক ক্ষেত্রেই কাজ করে না বরং স্প্যাম হিসাবে চিহ্নিত হতে পারে। যদি দু’সপ্তাহেও জবাব না আসে, তাহলে বিনয়ের সঙ্গে ফলো-আপ ই-মেইল করুন। অস্থিরতা নিয়ে দু’দিন পর পর ই-মেইল করলে তারা বিরক্ত হবেন বটে।

সঠিক সম্বোধন 

সবশেষে খুবই প্রয়োজনীয় একটি কথা হচ্ছে, প্রফেসরকে ঠিকভাবে সম্বোধন করতে হবে ই-মেইলের শুরুতে, তা জেনে নেওয়া উচিৎ। ধরুন, আপনি যে প্রফেসরকে ই-মেইল করছেন, তার নাম হলো জন স্মিথ। সেক্ষেত্রে আপনার সম্বোধন হওয়া উচিৎ প্রফেসর স্মিথ কিংবা ডক্টর স্মিথ। ভুলেও ডিয়ার জন বলে সম্বোধন করবেন না, কারণ ব্যক্তিগত পরিচিত ছাড়া অন্যদের ক্ষেত্রে নাম ধরে সম্বোধন করাটা বাইরের দেশগুলোতে অভদ্র আচরণ হিসেবে গণ্য করা হয়। অন্যদিকে ডক্টর জন কিংবা প্রফেসর জন বলেও সম্বোধন করার রীতি নেই। অধ্যাপিকাদের ক্ষেত্রেও ই-মেইল করার সময়ে একই নিয়ম পালন করতে হবে। 

আমার পিএইচডির এডভাইজর প্রফেসর মেরিঅ্যান উইন্সলেটকে একবার একজন মিসেস উইন্সলেট বলে সম্বোধন করেছিলেন। তিনি খুব ঠান্ডা গলায় বলেছিলেন, ‘The only Mrs. Winslett in my family is my mother’ কাজেই সম্বোধন কীভাবে করতে হবে, সঠিকভাবে জেনেই তারপর ই-মেইল শুরু করুন। নয়তো আপনার ই-মেইলের স্থান হতে পারে প্রফেসরের ট্রাশ ফোল্ডারে।

সাব্বির/মাহি 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়