ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

নোবিপ্রবির গোলচত্বরের ব্যস্ততা শুধুই স্মৃতি 

মো. রিয়াদুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২১  
নোবিপ্রবির গোলচত্বরের ব্যস্ততা শুধুই স্মৃতি 

গোলচত্বর। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেইট দিয়ে ঢুকেই প্রশাসনিক ভবনের সামনে দেখা মেলে এ গোলচত্বরের। নোবিপবি শিক্ষার্থীদের হরেক রকমের মুহূর্ত চিত্রিত হয় এ চত্বরের চারপাশে।

ইট, সিমেন্টের বলয়ে তৈরি চত্বর প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে আড্ডায়, গল্পে, গানে। ক্লাস শেষে ক্লান্ত দেহ, মনকে জাগিয়ে তুলতে বসে আড্ডার আসর। কেউবা শুরু করে গলা ছেড়ে গান, গানকে সঙ্গ দিতে পাশেই বসে আপন মনে কেউ বাজায় গিটার, যা প্রফুল্লিত করে তোলে চারপাশ। মান-অভিমান ও মনে জমানো সব গল্পের ভাণ্ডার খুলে প্রেমিক যুগলের খোশ গল্পও চলে সমান তালে।

কেউ বসে অপেক্ষার প্রহর গুনে লাল-নীল বাসের। কারো অপেক্ষা বন্ধু, বান্ধবী, প্রেয়সীর জন্য। কেউ বা সব ক্লান্তি গ্লানি ভুলে দলে দলে এসে বসে আড্ডা দিতে। কারো মুখে থাকে হতাশার ছাপ, কারো বা উজ্বল মুখে ভেসে ওঠে সফলতার চিত্র। 

বিশ্ববিদ্যালটির যাত্রার সূচনালগ্ন থেকেই এ চত্বরটি প্রতিষ্ঠিত। এ চত্বরের চারপাশে রয়েছে প্রশাসনিক ভবন, হাজী মোহাম্মদ ইদ্রিস অডিটোরিয়াম, হতাশার মোড়, একাডেমিক-১, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল, পুরাতন কেন্দ্রীয় মসজিদ, লন্ডন রোড ও অদূরেই রয়েছে ভিসি বাংলো।
 
গোল চত্বরের ভেতরে থাকা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সম্বলিত ভাস্কর্য, যা মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে, একাত্তরের রণাঙ্গনে বীর গাথা অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধাদের কথা বলে। বাহারি ফুল যেমন গাঁদা, ডালিয়া, জিনিয়া, গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা, মোরগ ঝুঁটি, ছোট ওষুধি গাছের সৌন্দর্যে সজ্জিত থাকে গোল চত্বর। 

গোলচত্বরের চিরচেনা সেই ব্যস্ত চিত্র আর নেই। করোনা মহামারিতে আজ সেসব কিছুই কেবল স্মৃতির পাতায়। প্রাণবন্ত গোলচত্বর আজ প্রাণহীন। নেই আড্ডা, গল্প, গানের আসর। নেই লাল-নীল বাসে সিটের অপেক্ষা। অপেক্ষার প্রহর শেষের অপেক্ষায় নোবিপ্রবিয়ানরা।

ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী প্রান্ত সেন বলেন, ‘দীর্ঘ ক্যাম্পাস জীবনের কথা মাথায় আসলেই চোখে ভাসে একটা ব্যস্ত চত্বর। নোবিপ্রবির এই গোল চত্বর কতটা স্মৃতি বিজড়িত এই পেন্ডামিকের অস্থিরতায় উপলব্ধি করেছি। সেই প্রথম বর্ষে যেভাবে গিটারের ছয় তারে টুংটাং শব্দ শুনতাম, এখনো সেই প্রাণ, ব্যস্ততা, বাসের জন্য অপেক্ষা আর বাস শিডিউল পেছানোর অতৃপ্ত ইচ্ছা উপলব্ধি করি। এই চত্বর ক্যাম্পাসের মাত্রায় দিয়েছে নতুন প্রাণ।’

ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মিরাজ মাহতাব বলেন, ‘ক্যাম্পাসের সম্মুখ ভাগে অবস্থিত এই গোলচত্বরটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা চিন্তা করলে সবার আগে চোখে ভেসে ওঠে এর হরেক রকমের চিত্র। দুঃখজনক হলেও সত্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার এত বছর পরেও এই চত্বরে অবস্থিত ভাস্কর্যটির নামকরণ করা হয়নি এখনো। আশা করি গোলচত্বরের ভেতরে থাকা ভাস্কর্যটির দ্রুত নামকরণ হবে।’

তথ্য বিজ্ঞান ও লাইব্রেরি ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী খাদিজা খানম ঊর্মী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি ভাস্কর্যকে ঘিরে গড়ে ওঠা গোলচত্বর নোবিপ্রবিয়ানদের আড্ডার অন্যতম প্রাণকেন্দ্র। যার চারপাশে ফুটে থাকা বাহারি রঙের নানা প্রজাতির ফুল বাড়িয়ে তুলে চত্বরের সৌন্দর্য। ক্লাস শেষে বাস ধরতে আমাদের সবাইকে ছুটতে হতো গোলচত্বরে। লাল-সাদা বাসগুলো যেন সারিবদ্ধভাবে অপেক্ষা করতো শিক্ষার্থীদের জন্য।  পড়ন্ত বিকেলে গোল চত্বরজুড়ে নামতো আড্ডার আসর। কিন্তু করোনা মহামারিতে আজ সেসব কিছুই কেবল স্মৃতির পাতায়। গিটারের সুরে আবারও গোলচত্বরের আড্ডায় হারিয়ে যেতে অপেক্ষারত নোবিপ্রবিয়ানরা।’

লেখক: শিক্ষার্থী, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। 

নোবিপ্রবি/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়