ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ম্যাথ অলিম্পিয়াডে আলো ছড়াচ্ছেন ঈপ্সিতা বহ্নি  

সায়মা আহমেদ রাহিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫৮, ১৭ মে ২০২১   আপডেট: ১৭:৩৪, ১৭ মে ২০২১
ম্যাথ অলিম্পিয়াডে আলো ছড়াচ্ছেন ঈপ্সিতা বহ্নি  

ঈপ্সিতা বহ্নি। জন্ম পাবনায় কিন্তু বেড়ে ওঠা ঢাকায়। পড়াশোনা করেছেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং অ্যাকাডেমিয়া থেকে। উন্নয়নকর্মী বাবা-মায়ের ঘরে তার বেড়ে ওঠা। 

বাবা-মায়ের আগ্রহ থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন এক্সট্রা কারিকুলার কাজের সঙ্গে যুক্ত হন পরিবারের সবচেয়ে বড় মেয়ে ঈপ্সিতা বহ্নি। ২০০৮ সালে তার লেখা ‘বন্ধু শোনো এই কবিতা তোমার জন্য লেখা’ প্রকাশ পায়। গবেষণার সুবাদে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন কনফারেন্সে অংশ নিয়ে নিজের দেশকে উপস্থাপন করেছেন। তার মধ্যে আছে ইতালির আইসিটিপি, ভারতের টাটা ইনস্টিটিউটের মতো প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে তিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে শিক্ষকতা করছেন।  

২০১৬ সাল থেকে ম্যাথ অলিম্পিয়াডের ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করছেন। সারা দেশের বিভিন্ন স্কুল কলেজ থেকে থেকে আসা গণিত-পিপাসু ছাত্র-ছাত্রীদের প্রশিক্ষণ ও মূল্যায়ন ও আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াড অংশগ্রহণকারী দল বাছাইয়ের পুরো প্রক্রিয়া সমন্বয় করেন তিনি । এ বছর ইউরোপিয়ান গার্লস ম্যাথ অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশ দলের দলনেতা ছিলেন ঈপ্সিতা। প্রথমবার অংশগ্রহণ করেই একটি রৌপ্য ও একটি ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করে বাংলাদেশ দলের প্রতিযোগী নুজহাত আহমেদ দিশা ও রায়ান বিনতে মোস্তাফা । 

সারাদেশ থেকে প্রায় শত শত ছাত্র-ছাত্রীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি মূল্যায়নের কাজও করেন তিনি। সম্প্রতি তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ইউরোপিয়ান ম্যাথ অলিম্পিয়াডে একটি রূপা ও একটি ব্রোঞ্জ অর্জন করেন। উল্লেখ, এই অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ থেকে প্রথমবারের মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ৪ জন ছাত্রী অংশগ্রহণ করেন। 

প্যানডেমিকের সময় পুরো প্রশিক্ষণ, অনুশীলন হয়েছে অনলাইনে। সেখানে ছাত্রছাত্রীদের নানা রকম পরীক্ষা দেওয়া থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডের জন্য প্রস্তুতু করা পুরোটাই অনলাইনে করতে হয়েছে। 

ঈপ্সিতা বলেন, ‘ম্যাথ অলিম্পিয়াডের একাডেমিক কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করছি ২০১৬ সাল থেকে। কাজ করার শুরু থেকেই দেখতাম যে আমাদের মেয়েদের আর ছেলেদের অংশগ্রহণে একটা বড় গ্যাপ আছে। একটা ভালো অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণের যে মোটিভেশন বা সুযোগ, সেটা আমাদের মেয়েরা মিস করছিল। একটায় অংশগ্রহণ করলে সামনে তাদের আরও অংশ নেওয়ার সুযোগ বেড়ে যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত দুই বছর ফান্ডের জন্য অনেক দৌড়াদৌড়ি করেছি। এবছর যেহেতু ভার্চুয়ালি হয়েছে, আমাদের জন্য ফান্ডিংয়ের চিন্তা কম ছিল।’ 

নিজের কাজের কথা বলতে গিয়ে ঈপ্সিতা বলেন, ‘আমি মূলত কো-অর্ডিনেশনের পুরো কাজটি করেছি। বিভিন্ন পরীক্ষা নিয়েছি। সবকিছু মিলিয়ে আমরা দলটা তৈরি করি। তারপর এক মাস ধরে ক্যাম্প চলেছে। এখানে ম্যাথ অলিম্পিয়াডের জন্য অনেক ছাত্র-ছাত্রীকে তৈরি করেছি। এটা আমার জীবনের বড় অর্জন। তাছাড়া পরিবারের সবাই আমার কাজে খুব খুশি। চারদিকে আমার এই কাজের প্রশংসা পেয়েছি।’ 

করোনাকালে অনেক কিছু থমকে গেলেও থেমে নেই এই অলিম্পিয়াড যোদ্ধার অদম্য ইচ্ছাশক্তি। ঈপ্সিতা বলেন, ‘কীভাবে আমাদের দেশের ছেলেমেয়েদের জন্য এধরনের গবেষণার সুযোগ বাড়ানো যায়, কীভাবে আমাদের শিক্ষার কিছু কিছু জিনিসকে আমরা ইম্প্রুভ করতে পারি, অলিম্পিয়াড কিংবা স্টেম এডুকেশনে মেয়েদের উপস্থিতি কীভাবে বাড়ানো যায়-এসব আমার মাথায় ঘুরে। আমি এগুলো নিয়ে কাজ করতে চাই।’ 

প্রিয় কাজের কথা বলতে গিয়ে ঈপ্সিতা বলেন, ‘আমার খুব প্রিয় কাজ বই পড়া, মুভি দেখা, গান শোনা, বন্ধুদের সাথে আড্ডা, চা খাওয়া এই।’ যখন ম্যাথ অলিম্পিয়াডের ফল প্রকাশ হয়, তখন কোভিডে আক্রান্ত হয়ে খুব অসুস্থ। কিন্তু ফলাফল শুনে খুশিতে আত্মহারা হয়ে সাথে সাথে সবার সাথে শেয়ার করেন প্রচারবিমুখ ঈপ্সিতা। তিনি বলেন, ‘আমরা কখনোই প্রচার বা স্বীকৃতির লোভে কখনো কাজ করিনি।’ 

ভবিষ্যতে ডক্টরেট, পোস্ট ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করে গবেষণায় নিয়োজিত হয়ে দেশের জন্য কিছু করতে চান ঈপ্সিতা বহ্নি। 

লেখক: শিক্ষার্থী, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়।

ব্র্যাক/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়