ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

কলেজ খোলার অপেক্ষায় চানাচুর দাদু

আশরাফ আহমেদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩৮, ১৮ মে ২০২১   আপডেট: ১১:৪৪, ১৮ মে ২০২১
কলেজ খোলার অপেক্ষায় চানাচুর দাদু

সিএনজি থেকে টিলাগড় পয়েন্টে নামতেই পেছন থেকে কে যেন ডাকছে, ‘এই যে দাদু’। কণ্ঠটি পরিচিত মনে করে পেছন ফিরে থাকাতেই দেখি এগিয়ে আসছেন একজন বৃদ্ধ, নাম আজুল মিয়া।

তিনি এমসি কলেজে ৩ যুগেরও বেশি সময় ধরে চানাচুর-ঝালমুড়ি বিক্রি করছেন। তাকে ক্যাম্পাসের সবাই দাদু বলেই চেনেন। কাছে এলে খানিকটা অবাক হয়েই কলেজের এই চানাচুর দাদুকে জিজ্ঞেস করি, আরে দাদু যে! কী অবস্থা, কেমন আছো? 

খিলখিল করে হাসতে থাকা দাদু উত্তরে বলছিলেন, ভালা আছি। তুমি ভালা আছোনি? আজুল মিয়া আবার প্রশ্ন করলেন, কতদিন পর তোমারে দেখলাম, দাদু!  হুম, প্রায় এক বছর পর। চলো কিছু খেয়ে নেই আগে, এমন বাক্যের বিপরীতে আজুল মিয়া বললেন, এখন কিছু খামু না দাদু। এদিকে আসছিলাম কলেজ খোলার খবর নিতে। এত দিন পরে তোমারে দেখলাম। আমার ভালা লাগলো৷ এক আকাশ আবেগ নিয়ে কথাগুলো বলে যাচ্ছিলেন এমসি কলেজের এই চানাচুর দাদু।

 তা কী করছো আর, বাসার সবাই ভালো তো, এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে আবেগটা আর ধরেই রাখতে পারলেন না কলেজের সবচেয়ে প্রবীণ এই চানাচুর বিক্রেতা। খানিকটা কাঁদো কাঁদো সুরেই বললেন, কলেজে সারাদিন চানাচুর বিক্রি করে যা পাইতাম, এইটা দিয়া সংসার চালাইতাম। এখন কলেজ বন্ধ থাকায় আর কোথাও গিয়ে তেমন একটা বেচতেও (বিক্রি) পারি না। বুড়া মানুষ দেখে কেউ কামেও নেয় না। মাঝে সরকার থাইকা কিছু বাজার পাইছিলাম। পরে তাও আর পাইনি। খুব কষ্ট করে চলতেছি।

আজুল মিয়া অনলাইন কিংবা ইন্টারনেট দুনিয়ার মানুষ নন। ঘরে টিভিও নেই। ফলে কলেজ কবে খুলবে সেই খবর নিতেই কয়দিন পর পর মিরাবাজার এলাকা থেকে আড়াই কিলোমিটার পায়ে হেঁটে টিলাগড় আসেন। আজকেও এসেছিলেন রুটি-রোজির জায়গাটা কবে থেকে চালু হবে সেই খবর জানতেই। 

আজুল মিয়া বলেন, তোমরার কথা খুব মনে হয় দাদু। পরিবার নিয়া বড় বিপদে আছি। আচ্ছা দাদু হাচা (সত্যি) করে বলতো, কলেজটা কবে খুলবো?

আজুল মিয়ার মতো আরও ১০-১৫ জন মানুষের জীবিকা নির্বাহের জায়গা সিলেটের এই প্রাচীন বিদ্যাপীঠ। চা, চানাচুর, বড়ই, বাদাম, বুট ইত্যাদি বিক্রি করেই সংসার চলে তাদের। কলেজের কেউ না হলেও শিক্ষার্থী থেকে শুর করে সবার কাছেই অতি আপন হয়ে উঠেছেন তারা। ছোট ছোট এই জিনিসগুলো বিক্রি করে ছাত্রছাত্রীদের বিনোদনের খোরাক হচ্ছেন। ঠাঁই করে নিয়েছেন অগণিত শিক্ষার্থীদের মনে। কলেজের সুন্দরের একটা দিক হয়ে আছেন শ্রমজীবী এই মানুষ। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন আঙিনায় আড্ডা দেওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে এটা সেটা নিয়ে সারাক্ষণই ছুটাছুটি করেন তারা। যেকারণে  অনেকেই তাদের এমসি কলেজের পাখি বলে সম্বোধন করেন। কারো কাছে মামা, কারো কাছে ভাই, কেউ বা দাদু বলে ডাক দেন তাদের। 

কোভিড-১৯ এর কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ, ২০২০ থেকে দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মতোই বন্ধ আছে সিলেটের শতবর্ষী কলেজটাও। ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় তাদের আয় রোজগারও বন্ধ। ফলে মানবেতর জীবন কাটানো হকাররা সারাক্ষণই কলেজ খোলার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন। আর পরিচিত কাউকে পেলেই জিজ্ঞেস করছেন, কলেজটা কবে খুলবে দাদু?

লেখক: শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক, এমসি কলেজ সিলেট।

সিলেট/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়