ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

উচ্চশিক্ষা গ্রহণে কেন যাবেন পোল্যান্ড 

আদনান হাবিব  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪৯, ১৮ মে ২০২১   আপডেট: ১২:৫৩, ১৮ মে ২০২১
উচ্চশিক্ষা গ্রহণে কেন যাবেন পোল্যান্ড 

উচ্চশিক্ষা অর্জনের উদ্দেশ্যে শিক্ষার্থীরা বিশ্বের নানা প্রান্তে পাড়ি জমিয়ে থাকেন। বহু দেশে যাওয়ার সুযোগ থাকলেও অধিকাংশ শিক্ষার্থীর আগ্রহ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানি কিংবা অস্ট্রেলিয়া ঘিরেই থাকে। তবে আজ আপনাদের সামনে নিয়ে এসেছি উচ্চশিক্ষার জন্য ইউরোপের একটি সুন্দর দেশকে, যার শিক্ষাব্যবস্থা অন্যান্য দেশের মতোই বেশ উন্নত এবং প্রসিদ্ধ। দেশটির নাম পোল্যান্ড। তাহলে জানা যাক পোল্যান্ডে উচ্চশিক্ষার বিস্তারিত।

দেশ পরিচিতি

ইউরোপের সেনজেনভুক্ত একটি দেশ পোল্যান্ড, এর রাজধানীর নাম ওয়ার্শ। জাতীয় ভাষা পোলিশ হলেও দেশটিতে ইংরেজি ভাষার প্রচলন রয়েছে। এদেশের মুদ্রার নাম পোলিশ জোল্টি। মধ্য ইউরোপের এই দেশটির আয়তন ৩,১২,৬৯৬ বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা প্রায় ৩ কোটি ৮৫ লাখের কাছাকাছি। অর্থনৈতিক বিচারের মাপকাঠিতে দেখলে এদেশের জিডিপি ৬০৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। পোল্যান্ডের তাপমাত্রা গ্রীষ্মকালে ২৫ থেকে ৩৫ ডিগ্রি থাকে এবং শীতে শূন্য ডিগ্রির নীচে নেমে যায়।

কোর্স ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন

বর্তমান পোল্যান্ড সরকার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দিয়েছে উচ্চশিক্ষা অর্জনসহ নিজেকে বিকশিত করার এক অপার সুযোগ। এই দেশে রয়েছে শত বছর পুরনো বিশ্বমানের ১০০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে রয়েছে বিভিন্ন ফিল্ডে পড়ালেখা করার বহু কোর্স। হ্যাঁ, অবশ্যই এই সব বিশ্ববিদ্যালয়ে পোলিশসহ ইংরেজি মিডিয়ামের কোর্স অফার করা হয়ে থাকে। এদেশে ইঞ্জিনিয়ারিং, এগ্রিকালচার, মিউজিক, ফরেস্ট্রি, থিওলজি, অর্থনীতি, ব্যবসায় শিক্ষা, আর্ট ও এডুকেশন, আরকিওলজি, ফিল্ম ইত্যাদিসহ বহু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে। এদেশে নার্সিং কোর্সের বিশেষ উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে এবং নার্সিং বিষয়ে পড়ালেখা খুবই জনপ্রিয়। চাকরির বাজারে অপার সুযোগ থাকায় বহু আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী এখন এদেশে নার্সিং বিষয়ে পড়ালেখা করছেন।

এই দেশের জনপ্রিয় কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হচ্ছে- 

Academy of Business in Dąbrowa Górnicza, Adam Mickiewicz University in Poznań, AGH University of Science and Technology, Cardinal Stefan Wyszyński University in Warsaw, Collegium Civitas, Cracow University of Economics, Cracow University of Technology, Czestochowa University of Technology, Gdansk University of Technology, Graduate School for Social Research (GSSR), Jagiellonian University in Kraków, Kielce University of Technology, Koszalin University of Technology, Kozminski University, Lazarski University

ভাষাগত যোগ্যতা

এদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পোলিশ ভাষায় পাঠদান করা হয়ে থাকে। তবে প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়েই ইংরেজি ভাষার কোর্স রয়েছে। তাই শিক্ষার্থীদের দুঃশ্চিন্তার কারণ নেই। তবে শর্ত হচ্ছে ভিসা ও এডমিশনের জন্য অবশ্যই কোনো শিক্ষার্থীকে IELTS এর ব্যান্ড স্কোর ৬.৫ (Reading and Writing এ ন্যূনতম ৬.০) পেতে হবে।

ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়া ও সেমিস্টার

পোল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাধারণত বছরে দুটি সেমিস্টার হয়ে থাকে। উইন্টার সেমিস্টারের সময়কাল অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি, অন্যদিকে সামার সেমিস্টার হয়ে থাকে ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত।

ভর্তি আবেদনের প্রক্রিয়াটি বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েবসাইট ঘেটে যাবতীয় তথ্যাবলী জেনে নেওয়া ভালো। এদেশে ব্যাচেলর, মাস্টার্স কিংবা পিএইচডিতে পড়ার সুযোগ রয়েছে। আবেদন করার কাগজপত্রের তালিকা দেওয়া হলো-
১. সকল সার্টিফিকেট ও মার্কশীট, ২. এপ্লিকেশন ফি, ৩. আইইএলটিএস স্কোর কপি (কমপক্ষে ৬.৫), ৪. আইডি প্রুফ (এনআইডি / জন্ম সনদ), ৫. এপ্লিকেশন ফর্ম ও ছবি, ৬. মাস্টার্সে আবেদনের জন্য ব্যাচেলরের থিসিস। 

কখনো কখনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নোটারিকৃত ডকুমেন্ট চাওয়া হয় অথবা প্রাক্তন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে অফিসিয়ালি জারি করা সার্টিফিকেটের প্রয়োজন পড়ে। আবার কখনো কখনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে Aptitude Test নেওয়া হয় কিছু সাবজেক্টের জন্য। যেমন- মাস্টার্স অব আর্টস, ফিজিক্যাল এডুকেশন, মেডিক্যাল ইত্যাদি।

টিউশন ফি

পোল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর টিউশন ফি অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম হয়ে থাকে। ব্যাচেলরের জন্য বছরে ২,০০০ ইউরো এবং মাস্টার্সের জন্য প্রয়োজন পড়ে ৩,০০০ ইউরো।

ভিসা আবেদন

পোল্যান্ডে ভিসার জন্য আপনাকে দিল্লী যেতে হবে। কারণ, বাংলাদেশে পোল্যান্ডের কোনো এম্বাসি নেই। অনলাইনে দিল্লী এম্বাসির সব তথ্য পাওয়া যাবে। 

পোল্যান্ডে স্টুডেন্ট ভিসা প্রসেসিং

ন্যাশানল ভিসা ফি ৪৯০০ রুপি, যা শিক্ষার্থীদের ইন্ডিয়ান কারেন্সিতে পরিশোধ করতে হবে। ভিসা প্রসেস হতে সাধারণত ১৪ দিন সময় নেওয়া হয়। তবে এই সময় বাড়তেও পারে। এটি পুরোটাই শিক্ষার্থীদের ফাইলের জটিলতার উপর নির্ভর করছে।

ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে কী কী ডকুমেন্টের প্রতি মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন, সেগুলো হচ্ছে- 
১. পূরণকৃত আবেদন ফর্ম ও সাথে সংযুক্ত পাসপোর্ট সাইজের ছবি, ২. পাসপোর্ট (৩ মাসের ভ্যালিডিটি থাকতে হবে), ৩. অফার লেটার, ৪. সিভি বা জীবন বৃত্তান্ত, ৫. সকল সার্টিফিকেট ও মার্কশিট, ৬. আইইএলটিএস কপি, ৭. ব্যাংক সলভেন্সি ডকুমেন্টস, ৮. ভিসা এপ্লিকেশন পেমেন্ট ফি’র কপি, ৮. আবাসন ব্যবস্থার প্রমাণ কপি, ৯. স্বাস্থ্য বীমার কপি।

পার্টটাইম জব এবং জীবনযাপনের ব্যয়

পোল্যান্ডে শিক্ষার্থীদের পার্টটাইম জব করার সুযোগ রয়েছে মাত্র ১০ ঘণ্টা। সাধারণত শিক্ষার্থীরা শপিংমল এবং রেস্টুরেন্টে জব করে থাকে। তাই এই দেশে পোলিশ ভাষা জানা থাকলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সামারের ছুটিতে ফুলটাইম চাকরি করার সুযোগ রয়েছে।

অন্যদিকে পোল্যান্ডে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে হোস্টেলের সুবিধা। হোস্টেল ফি বাবদ মাসপ্রতি খরচ হবে কমপক্ষে ১০০ ইউরো। এছাড়া, থাকা-খাওয়া থেকে অন্যান্য খরচ চাইলে ৫০০-৬০০ ইউরোর মধ্যেই মিটিয়ে ফেলা যায়।

স্থায়ী বসবাসের সুযোগ 

শিক্ষার্থীরা পোল্যান্ডে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ পেলে ইউরোপের ২৭টি দেশে ভ্রমণের জন্য পথ খুলে যাবে। এছাড়া স্থায়ী বসবাসের সুযোগ পাওয়ার ৫ বছর পর রয়েছে দেশটির নাগরিকত্ব পাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ। পোল্যান্ডের পাসপোর্ট পেয়ে গেলে রয়েছে ইউরোপসহ কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের সুযোগ। 

সাব্বির/মাহি    

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়