ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের কী হবে? 

মাসুম মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:২৬, ২৬ মে ২০২১   আপডেট: ১৪:২৯, ২৬ মে ২০২১
ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের কী হবে? 

উচ্চশিক্ষা অর্জন শুরু করার সর্বশেষ ধাপ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। পরীক্ষার ফল পরবর্তী তিন-চার মাসের নিদারুণ পরিশ্রম অনেকটা বড় সহায়ক হিসেবে কাজ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার জন্য। এ কয়েকমাস যদিও পড়াশোনার মধ্যে থাকা হয়, তবুও থাকে না নির্দিষ্ট কোনো পরিচয়। এর আগ পর্যন্ত অমুক কলেজের শিক্ষার্থী হিসেবে নিজের আইডেন্টিটি থাকলেও রেজাল্ট পরবর্তী সময় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগ পর্যন্ত এক প্রকার পরিচয় বিহীন ঘুরতে হয় শিক্ষার্থীদের। 

গত বছর শুরু হওয়া করোনা মহামারির কারণে এই প্রতীক্ষা যেন শেষ হওয়ার নাম নেই। এমতাবস্থায় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা পড়ে গেছেন অকুল পাথারে কেউ কেউ মানসিকভাবেও ভেঙে পড়ছেন। বিভিন্ন উচ্চমাধ্যমিক কলেজ ঘুরে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের এই অনিশ্চয়তা ও মানসিক অবসাদ তুলে ধরেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক মাসুম মাহমুদ।

কাজী তাবাসসুম রেহনুমা সামান্তা, প্রাক্তন শিক্ষার্থী, মানবিক বিভাগ, শেরে বাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়। তিনি বলেন, স্বপ্ন যখন শুরু হবে ঠিক তখনি করোনার ছোবল এসে থাবা দিলো আর থমকে যেতে শুরু করলো জীবন।

এইচএসসি পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল কিন্তু হলো না ২০ সালের এই মহামারির জন্য। আর এভাবেই আস্তে আস্তে করে পড়ালোখার মন-মানসিকতা নষ্ট হতে শুরু করছিল। এই পরিস্থিতিতে বেশ কয়েকবার নিজেকে সামলে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। এমনকি নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছি, ঠিক সেসময়টাতেই ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করে পিছিয়ে দেওয়া হলো। ফলে, আমরা অনেকেই পড়াশোনা করার মন-মানসিকতা হারিয়ে ফেলছি। মাঝে মাঝেই মনে হয় হেরে যাচ্ছি না তো, আমার স্বপ্নকে হারিয়ে ফেলতে চলছি না তো! 

বর্তমান পরিস্থিতি এমন যে, এক প্রকার হতাশার মাঝে ডুবে আছি। একদিকে বোর্ড পরীক্ষা হলো না, অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাও পেছানো হলো। আমার মনে হয় শুধু আমিই না, অন্যরাও এমন হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন।

ফারদিন, বরিশালের সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী, পড়াশোনা করেছেন বিজ্ঞান বিভাগে। তিনি বলেন, গত বছর ১৭ মার্চ থেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, সেইসঙ্গে বার বার বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও তা পরিবর্তন হয়েছে কয়েকবার। পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে বার বার সময়ের পরিবর্তন হলে ব্যাপারটা আসলেই মানষিকভাবে হতাশাগ্রস্ত করে। সেইসঙ্গে পরিবারের সবার মধ্যেই এক প্রকার হতাশা কাজ করে আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে। নিজের সাথে নিজেকেও বুঝিয়ে পড়ার টেবিলে বসাতে হয় হতাশা থাকার পরও।

তবুও আমরা সরকার আর রাষ্ট্রের সাধারণ জনগণের ভালোর জন্য আমরা সদা সব মেনে নিতে রাজি আছি।

ওয়ারশিয়া বন্যা, ময়মনসিংহ-এর শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস মানসিক স্বাস্থ্য এবং সামাজিক দূরত্বের যেন এক কঠিন বাস্তবতা। এর শিকার হয়েছে সাধারণ মানুষের সাথে সাথে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাব্যবস্থা। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২০২০-২০২১ এর ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। এবছর এখন পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করতে পারেনি ইউজিসিভুক্ত কোনো বিশ্ববিদ্যালয়। পেছানো হচ্ছে ঢাবি, রাবি, জাবিসহ গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার তারিখ। যেখানে ২ এপ্রিল ২০২১, সারাদেশে ১৯টি কেন্দ্রে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। 

এপ্রিলের মাঝামাঝি করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় পেছানো হয় ঢাবির পরীক্ষা। এতে চরম হতাশার সৃষ্টি হয় ভর্তিচ্ছুদের মাঝে। শিফটভিত্তিক পরীক্ষার আয়োজন করা যেত বলে অভিমত অনেকের। কিন্তু হচ্ছে না কিছুই, বাড়ছে শুধু হতাশা আর সময়ের ব্যবধান। অনীহা বাড়ছে পড়াশোনায়, বাড়ছে অবসাদ উদ্বেগ। বিপর্যস্ত হচ্ছে ভর্তিচ্ছুদের মানসিক অবস্থা। এ অবস্থার অবসান ঘটাতে শিগগিরই ভর্তি পরীক্ষার বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষদের দৃষ্টিগোচরে আসুক, এটাই আমাদের একান্ত কাম্য।

সানজিদা আক্তার মিম, শেরে বাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে নিজেকে যখন প্রস্তুত করছিলাম, তখনই যেন বাস্তব আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াল, ২০২০ সালের সেই মহামারি আমার স্বপ্নকে ভেঙে দিতে চাইলেও আমার অদম্য ইচ্ছাশক্তিকে দমাতে পারেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা মহামারির জন্য স্থগিত হয়ে গেলেও আমি আমার দৃঢ় প্রত্যয় থেকে স্থগিত থাকবো না।

সাখাওয়াত হোসেন আসিফ, সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, গত দেড় বছর যাবত আমরা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। মরণঘাতী করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আমরা আমাদের স্বাভাবিক লেখাপড়া করতে পারছি না। আমরা আমাদের স্বপ্নের পেছনে ছুটতে পারছি না। আমরা হতাশ হয়ে পড়ছি। দিন দিন লেখাপড়া থেকে দূরে সরে যাচ্ছি, প্রতিনিয়ত ভর্তি পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন হচ্ছে, কিন্ত পরীক্ষা দিতে পারছি না। ভর্তি পরীক্ষার জন্য বারে বারে প্রস্তুতি নিয়েও হতাশ হচ্ছি। এমন যদি হতে থাকে, তহলে আমরা নিমিষেই হারিয়ে যাবো।

সায়রা বিনতে নুরুজ্জামান, মাদ্রাসা শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের প্রকোপে সারাদুনিয়া আজ স্তব্ধ। ২০২০ সালের আদ্যোপান্ত পুরোটাই করোনার ছায়ায় আবৃত। শিক্ষা ও অর্থনীতিতে যার প্রভাব বেশ ব্যাপক হারেই বিদ্যমান। শিক্ষা বিভাগের কথা যদি বলতেই হয়, তাহলে বিশেষভাবে বলতে হবে ২০২০ সালের এইচএসসি বা আলিম সমমানের পরীক্ষার্থীদের কথা। 

পরীক্ষার প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করে যখন আমরা পরীক্ষার হলে প্রবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, তখনই হঠাৎ কানে আসে পরীক্ষা সাময়িক সময়ের জন্য স্থগিত, চলে আসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা। তখন ছিল মার্চ মাসের মধ্যবর্তী সময়। সরকারের কাছ থেকেও কোনো সুস্পষ্ট ঘোষণা আসেনি। শুধু এটুকুই বলা হতো পরীক্ষা হবেই, যেভাবেই হোক হবে। আমরা শিক্ষার্থীরাও ছিলাম বাড়তি পেশারের মাঝে। পরীক্ষা হবে কিন্তু কবে? দোদুল্যমান অবস্থার মধ্যে থেকে পরিপূর্ণ প্রস্তুতিকে অনিশ্চিত পরীক্ষার জন্য আরও ছয় থেকে সাত মাস ঝালাই করার পর সংবাদ এলো পরীক্ষা হবে না, অটোপাস দিয়ে দেওয়া হবে। সবাই পাশ করবে। সেদিন থেকে নিজেদের জীবনে নতুন ট্যাগ বহন করতে লাগালাম ‘অটোপাস’। সব পরিশ্রম ভেস্তে। পরিশ্রমের মূল্য অটো পেয়ে গেলাম। 

তারপরে এলো মহাপ্রলয়, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিযুদ্ধ। সে আরেক নতুন ইতিহাসের সূচনা দেয়। অটোপাস দেওয়ার পর ধরে নেওয়া হয়েছিল জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে পরীক্ষা হবে কিন্তু হলো কোথায়? ডেটই তো দিলো জানুয়ারি মাসের পরে। মাঝে একবার বিইউপি ফেব্রুয়ারির ২৭ তারিখ এক্সামের ডেট দিলো কিন্তু ২৩ তারিখ দুপুরে মেসেজ আসলো পরীক্ষা স্থগিত।। যাই হোক মনকে সান্তনার বাণী শুনিয়ে আবার পড়ার টেবিলে বসলাম। এখন কবে হবে, আমরা কেউ জানি না। 

ববি/মাহি 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়