ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

সাদিক খাঁনের ভাবনাজুড়ে ফটোগ্রাফি

সাজেদুর আবেদীন শান্ত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪৪, ৩০ মে ২০২১   আপডেট: ১৪:১২, ৩০ মে ২০২১
সাদিক খাঁনের ভাবনাজুড়ে ফটোগ্রাফি

সাদিকুর রহমান খাঁন, জন্ম জামালপুরে। সবাই সাদিক খাঁন হিসেবেই চেনেন। বাবা মো. সরোয়ার খাঁন। পেশায় একজন ব্যবসায়ী। মা চামেলি বেগম, গৃহিণী। তিনি এসএসসি পরীক্ষায় ফুলকোচা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ নিয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। 

কলেজ জীবন কেটেছে ময়মনসিংহে। ব্রহ্মপুত্র রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ থেকে ২০১১ সালে জিপিএ-৫ নিয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। এরপর ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকে ভর্তি হন। 

মোবাইল ফটোগ্রাফার ও বুক ফটোগ্রাফার হিসেবে রয়েছে সাদিকের অনেক সুনাম। সম্প্রতি তার ফটোগ্রাফি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা হয় ফিচার লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী সাজেদুর আবেদীন শান্তর সঙ্গে।

সাজেদুর আবেদীন শান্ত: ছোটবেলা কেমন কেটেছে?

সাদিকুর রহমান খাঁন: আমি গ্রামের ছেলে বলতে একদমই গ্রামের ছেলে। খুবই দুরন্ত ও ডানপিঠে। সারাদিন টইটই করে পুরো গ্রাম ঘুরে বেড়াতাম। কোন গাছের ডালে কোন পাখি বাসা বুনছে, কোনটায় ডিম ফুটে ছানা বের হচ্ছে এসবের খবর ছিল নখদর্পণে। আমি প্রায় সব দেশি পাখিই পুষেছি। তবে তা খাঁচায় নয়, স্বাভাবিক ভাবেই। আমার সাথেই ঘুরে বেড়াতো। আমি প্রচুর মাছ ধরতাম। গ্রামের খাল বিল যেন আমি ছাড়া অপূর্ণ। যেখানেই মাছ, সেখানেই আমি।

প্রচুর সিনেমা হলে সিনেমা দেখা হতো। স্কুল বাকি দিয়ে বন্ধুদের সাথে সাইকেলের প্যাডেল চেপে পাঁচ মাইল দূরে গিয়ে সিনেমা দেখতাম। সিনেমা দেখার জন্য টিফিনের টাকা বাঁচাতাম।

সাজেদুর আবেদীন শান্ত: পড়াশোনায় কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল কী?

সাদিকুর রহমান খাঁন: পড়াশোনায় কোনো প্রতিবন্ধকতা পাইনি। তবে, পরিবার থেকে আগে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে উৎসাহ পেতাম না। এখন যেমনটা পাই। স্কুলের প্রোগ্রামে গান, কবিতা আবৃত্তি, উপস্থিত বক্তৃতা, একক অভিনয় এসবে আমি বরাবরই প্রথম হতাম, যা এখন আমার চলার পথের পাথেয়।

সাদিকুর রহমান খাঁন ও তার ফটোগ্রাফি

সাজেদুর আবেদীন শান্ত: ছবি তোলার নেশা জাগে কখন থেকে?

সাদিকুর রহমান খাঁন: ছবি তোলার নেশা স্কুল-কলেজ থেকেই। বাটন নোকিয়া ফোনে প্রচুর ছবি তুলতাম। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিই উদ্দেশ্যই ছিল আমার একটা সজীব ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাস ঘেঁষে বয়ে চলা ব্রহ্মপুত্র নদ। আর এসবই আমাকে ফটোগ্রাফি করতে লেখালেখি করতে শক্তি যোগায়। ছোট বোন সাদিয়ার উপহার করা স্যামসাং গ্যালাক্সি J7 ম্যাক্স একটা মুঠোফোনের কল্যাণেই নামের সঙ্গে ফটোগ্রাফার ট্যাগ জুড়ে গেছে। ক্যাম্পাস তথা দেশের মানুষ যারা আমাকে চেনেন, তারা ছবির মানুষ হিসেবেই জানেন।

সাজেদুর আবেদীন শান্ত: বুক ফটোগ্রাফির চিন্তা এলো কীভাবে?

সাদিকুর রহমান খাঁন: আমি সবসময় ভিন্ন ভিন্ন ইউনিক কনসেপ্ট নিয়ে কাজ করি। আমি দেখলাম ফটোগ্রাফির এত এত ভাগ, তবে বই নিয়ে সুন্দর থিমেটিক ফটো কেউ তোলে না। শুধু ওই বই নিয়ে টেবিল বা শোপিসের সাথে সাজানো ছবি। পরে ভাবলাম ইউনিক কিছু করা যায় কিনা। যেমন আর্ট করা প্রচ্ছদের বাস্তব চিত্রটাও থাকুক ছবির ফ্রেমে বইসহ। কিংবা বইয়ের থিমটাকেই তুলে ধরা ছবিতে। যেই ভাবা, সেই কাজ।  ২০১৯ সালের বইমেলাতে ১০০ এর বেশি নতুন বইয়ের বুক ফটোগ্রাফি করি। যা লেখক, পাঠক, সমাজসহ সবাই দারুণভাবে গ্রহণ করে এবং কিছু ছবি তুমুল প্রসংশিত ও আলোচিত। এরপর থেকে বাংলাদেশে বুক ফটোগ্রাফি খুব জনপ্রিয়। অনেকেই অনেক ভালো ভালো বইছবি তুলছেন এখন। দেখলেই ভালো লাগে।

সাজেদুর আবেদীন শান্ত: পেশা হিসাবে বুক ফটোগ্রাফির ভবিষ্যৎ কী?

সাদিকুর রহমান খাঁন: পেশা হিসেবে শুধুই বুক ফটোগ্রাফি হিসেবে নিচ্ছি না। এটা ফটোগ্রাফির একটা পার্ট মাত্র। আমি ওয়েডিং, ডকুমেন্টারি, স্ট্রিট, ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফি করে থাকি। আমার ফটো পেজের নাম ফ্রেমিং।

সাজেদুর আবেদীন শান্ত: বুক ফটোগ্রাফিতে আপনার কৃতিত্ব কী?

সাদিকুর রহমান খাঁন: বুক ফটোগ্রাফিতে কৃতিত্ব বলতে গেলে শুরুর দিকে বইছবির গল্প শোনাতে যাই ঢাকা FM-এ জনপ্রিয় RJশান্ত ভাইয়ের শো-তে, তারপর এটিএন নিউজে কথাসাহিত্যিক সাদাত হোসাইনের উপস্থাপনায় জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ইয়ং নাইটে স্পেশাল অতিথি হিসেবেও যাই। বিভিন্ন গ্রুপের ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতাগুলোতে প্রায়ই প্রথম, দ্বিতীয় কিংবা সেরা দশে থাকি।

এইতো কিছু দিন আগেও রকমারি ডটকমের বইছবি প্রতিযোগিতায় প্রথম হলাম। এর আগে ইসলামি বইকথন গ্রুপে সমকালীন প্রকাশনীর প্রতিযোগিতাতেও ছিলাম সেরা পাঁচ জনের একজন। উপহার পেয়েছি একসেট বই।

সাজেদুর আবেদীন শান্ত: কারো কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন কী?

সাদিকুর রহমান খাঁন: ওয়েডিং ফটোগ্রাফিতে অনুপ্রেরণা পাই দেশের স্বনামধন্য ফটোগ্রাফার প্রীত রেজা ভাইয়ার কাছ থেকে।

আর আমি আমার ফটোগ্রাফিতে দেশ-দেশের সাধারণ মানুষ, বরেণ্য ব্যক্তিদের জীবনযাত্রা, দেশের সংস্কৃতি, নানাবিধ সমস্যা, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, নদ-নদী প্রকৃতি সব তুলে ধরতে চাই দেশের মানুষ তথা বিশ্বের দরবারে। এদিক থেকে আন্তর্জাতিক ফটোগ্রাফার জেএমবি আকাশ স্যার, নাসির আল মামুন স্যার, রফিকুল ইসলাম স্যার আমার অণুপ্রেরণা।

সাজেদুর আবেদীন শান্ত: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

সাদিকুর রহমান খাঁন: আমি গল্পের মানুষ, গানের মানুষ, ছবির মানুষ। আমি গল্প বলতে চাই আমার লেখায়, আমি গল্প বলতে চাই আমার গানে, কবিতায়। গল্প দেখাতে চাই আমার আলোকচিত্রের মাধ্যমে কিংবা নির্মাণে। তবে, একটা সময় আমি নির্মাণের দিকেই যাবো। হতে চাই একজন নির্মাতা। এক্ষেত্রে সত্যজিৎ রায়, চাষী নজরুল ইসলাম, তারেক মাসুদ স্যার আমার অনুপ্রেরণা।

ঢাকা/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়