ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

জাবি ক্যাম্পাসে বাহারি ফলের উৎসব

ইমন ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৫৮, ৫ জুন ২০২১   আপডেট: ১৩:৫৯, ৫ জুন ২০২১
জাবি ক্যাম্পাসে বাহারি ফলের উৎসব

গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপদাহে যখন অতিষ্ঠ ক্যাম্পাসবাসী, ঠিক তখনই শান্তি ও সুখের বার্তা নিয়ে এসেছে মধুময় জৈষ্ঠ্য মাস। এমাসে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গাছে গাছে বাহারি রঙ-বেরঙের মিষ্টি ও সুস্বাদু ফল পাওয়া যায়। এখানে বৈশাখের ধ্বংসযজ্ঞ শেষে পূর্ব আকাশে উঁকি দিয়েছে জৈষ্ঠ্যের সোনালী সূর্য। তার রশ্মি পুলকিত করেছে ক্যাম্পাসের প্রতিটি ফল গাছকে।

প্রতিটি ঋতুতেই নতুন রূপে সাজে জাবি ক্যাম্পাস। জৈষ্ঠ্যের আগমনে ক্যাম্পাসের প্রকৃতি পেয়েছে নতুন রূপ। পাকা ফলের মিষ্টি গন্ধে ভরে উঠেছে চারপাশ। ক্যাম্পাসের প্রায় প্রতিটি ফল গাছে ধরেছে থোকায় থোকায় পাকা ফল। আম গাছে ধরেছে পাকা আম, জাম গাছে পাকা কালো জাম। কাঁঠাল গাছে হলুদ পাকা কাঁঠাল, আর লটকন গাছে ধরেছে পাকা লটকন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক থেকে শুরু করে রাস্তার ধারে ধারে এভাবেই দাঁড়িয়ে আছে ফল গাছগুলো। প্রতিবছর এই সময়টাতে ক্যাম্পাসে বসে বাহারি ফল উৎসব। শিক্ষার্থীদের ফল খেতে বাজারে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ক্যাম্পাস থেকেই আসে ফলের যোগান। এই মিষ্টি সুস্বাদু ফল শুধু খেতে নয় বরং দেখতেও অনেক পর্যটক ভিড় জমায়। 

ক্যাম্পাসের বোটানিক্যাল গার্ডেন সংলগ্ন বাগান থেকে সবচেয়ে বেশি ফল পাওয়া যায়। আর তাই সবাই দল বেধে ছুটে যায় সেই বাগানে। যেখানে নেই কোনো বাধা। কেউ বা গাছে চড়ে ফল পাড়ে, কেউ বা গাছের নিচে থেকে ফল তোলেন। কে কতো পরিমাণ ফল পেলো তা নিয়ে চলে মহাযুদ্ধ। এছাড়াও মীর মশাররফ হোসেন হলে রয়েছে কাঁঠাল বাগান। এই হলের শিক্ষার্থীরা যেন পাকা কাঁঠাল খাওয়ার উৎসবে মেতে ওঠেছে। পাকা মিষ্টি কাঁঠাল খেতে অন্যান্য হলের শিক্ষার্থীরাও ছুটে আসেন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ রফিক জব্বার হলের সামনে রয়েছে ছোট্ট কাঁঠাল গাছ। সে গাছের ফলের স্বাদ মন কাড়ে সবার। এই ফল খেতে সবাই ভিড় জমায় গাছ তলায়। শহীদ সালাম-বরকত হলে রয়েছে আতাফল গাছ। প্রতিবছরের মতো এবারও গাছে ধরেছে থোকা থোকা পাকা ফল। যে ফলের মৌ মৌ গন্ধে ভরে উঠছে হলের চারপাশ।

এছাড়াও সমাজ বিজ্ঞান অনুষদ সংলগ্ন স্ট্যাট চিপা, টার্জান পয়েন্টেও রয়েছে হরেক রকমের ফল গাছ। সব মিলিয়ে এই মধু ফলের মাস ক্যাম্পাসকে করে আরও মধুর। ক্যাম্পাসের আনাচে-কানাচে বাহারি ফলের সমাহার বসে। আর এই অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে প্রজাপতিরা সুখের গান গাইতে থাকে। পাখিরা মেতে ওঠে পাকা মিষ্টি ফলের স্বাদে। ক্যাম্পাসপ্রেমীরা শুধু ফল সংগ্রহ করেই ক্ষান্ত থাকে না, রিতিমতো সেই ফল নিয়ে তারা উৎসব অনুষ্ঠান করে থাকে। যে উৎসবের সাক্ষী হয়ে আছে ক্যাম্পাসের পর্যটন এলাকা খ্যাত মনপুরা, সুইজারল্যান্ড, শান্তিনিকেতন, টার্জানপয়েন্ট ও সপ্তম ছায়ামঞ্চ।

সারাদিনের ফল সংগ্রহের দীর্ঘ ক্লান্তি শেষে সবাই ছুটে চলে নির্দিষ্ট গন্তব্যে। কেউ বা ফলের ঝুড়ি হাতে আবার কেউবা ফল কাটার চাকু-কাঁচি হাতে উপস্থিত হয় নির্দিষ্ট গন্তব্যে। এভাবেই ফল কেটে উৎসবমুখরভাবে উৎযাপন করে সেই বিশেষ সময়টুকু। স্মৃতি করে রাখতে চলে সেলফি তোলার ধুম।

করোনা মহামারির কারণে গত বছরের মার্চ মাস থেকে বন্ধ রয়েছে জাবি ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থী শূন্য ফাঁকা ক্যাম্পাসে নেই আগের মতো ফল খাওয়ার ধুম। তবুও ক্যাম্পাসের মধু মাসের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই ভিড় জমাচ্ছেন দূরদূরান্ত থেকে আসা পর্যটকরা। শুধু পর্যটকরাই নয়, ক্যাম্পাসের আসেপাশে অবস্থান করা শিক্ষার্থীরাও ব্যস্ত সময় পার করছেন মধুময় ফল উৎসব পালন করতে। শহরের জীবনের ক্লান্তিময়তা এবং করোনার হৃদয় বিদারক যন্ত্রনাকে একটু নিরাময় করতে ছুটে আসছেন জাবি ক্যাম্পাসে। 

ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে টিএসসি সংলগ্ন সপ্তম ছায়ামঞ্চে আয়োজন করা হয়েছে মধু ফল উৎসব। প্রকৃতি তার নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী ফলের ডালি সাজিয়ে বসে আছে। তবে সেই ফল কেনার ক্রেতাময়ী শিক্ষার্থীরা এখন ঘরে বসে গৃহবন্দি জীবনযাপন করছেন। মধু ফল সংগ্রহে নেই মধু সংগ্রহের মৌমাছি আর এতেই আনন্দের জোয়ারে পড়েছে ভাটা। আবারো তারা মেতে উঠবে ফল পাড়ার মহা উৎসবে, এমনটাই প্রত্যাশা সবার।

লেখক: শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

জাবি/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়