ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

আম বাগানে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছেন যুথী

কেএম হিমেল আহমেদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪৫, ৬ জুন ২০২১   আপডেট: ১৪:৪৮, ৬ জুন ২০২১
আম বাগানে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছেন যুথী

মহামারি করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ঘরে বসে কেউ কেউ অনলাইনে ক্লাস করছে। তবে বাড়িতে টিভি ও স্মার্টফোনের ব্যবস্থা না থাকায় অনেক শিক্ষার্থীর পড়াশোনা হচ্ছে না। ফলে দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে অসংখ্য শিক্ষার্থী। 

এমন পরিস্থিতি মানবিকভাবে বিবেচনায় নিয়ে কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলায় পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পড়াচ্ছেন কলেজ ছাত্রী জেসমিন যুথী। তিনি উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চল মনোহারপুর গ্রামের বাসিন্দা ও কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্রী। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আম বাগানের মধ্যে ৪০/৫০ জন শিশু শিক্ষার্থীকে চটের ছালার উপর পড়াচ্ছেন। শিক্ষার্থীরাও খুব আগ্রহ নিয়ে বসে পড়ছেন। কেউ কবিতা আবৃত্তি করছেন, আবার কেউ বা আনন্দে গান ধরেছেন। মাঝে মাঝে ম্যাডাম ম্যাডাম বলে ডাকছেন, এটা শুনে গর্বে বুক ভরে যায় জেসমিন যুথীর। 

এলাকাবাসী জানায়, মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে দীর্ঘ দিন। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও সরকার চালু রেখেছে অনলাইন ক্লাস। কিন্তু প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের দুস্থ ও অসহায় অনেক শিক্ষার্থীর নেই স্মার্টফোন ও টেলিভিশন।  

এতে করোনাকালীন সময়ে তারা বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষার আলো থেকে। আবার অনেকের স্মার্টফোন থাকলেও নেটওয়ার্কজনিত কারণে করতে পারছে না ক্লাস। ফলে এই অঞ্চলের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ছেন জ্ঞানার্জনে। বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষার আলো থেকে।

এলাকাবাসী বলেন, এখানকার দুস্থ, অসহায়, মেধাবী ও সুবিধাবঞ্চিত কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যেন জ্ঞানার্জনে পিছিয়ে না পড়ে, সেই লক্ষ্যে আমাদের জেসমিন যুথি নিজ উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছেন। যুথি বাড়ির আম বাগানে প্রতিদিন দুপুরে শারিরীক দূরত্ব বজায় রেখে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পাঠদান করাচ্ছে। স্কুল বন্ধ থাকায় এখানে নিয়মিত পাঠদান করতে পেরে অনেক খুশি শিক্ষার্থীরা। যুথির আম বাগানে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ জন শিশু শিক্ষার্থী আসে পড়াশোনা করতে।

শিক্ষার্থীরা বলে, করোনায় স্কুল বন্ধ। বাড়িতে টিভি ও স্মার্টফোন নেই। তাছাড়া টিভিতে পড়তে ভালো লাগে না। এখানে যুথী আপা পড়ায়। আমরা প্রতিদিন পড়তে আসি। খুব ভালো লাগে।

অভিভাবকরা বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘ দিন স্কুল বন্ধ। সন্তানরা ঘরে বসে থাকায় পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে পড়ে। আমাদের যুথী এখানে নিয়িমিত পড়াশোনা করাচ্ছেন। এখন ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার প্রতি ভালো আগ্রহ ও মনোযোগ বেড়েছে। এতে আমরাও অনেক খুশি। 

কলেজ ছাত্রী জেসমিন যুথী বলেন, করোনা আর লকডাউনে দীর্ঘ দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। ফলে শির্ক্ষাথীদের জ্ঞানের আলো নিভে যাচ্ছিল। তাই নিজ উদ্যোগে এলাকার শির্ক্ষাথীদের একত্র করে নিয়মিত ফ্রিতে পাঠদান করাচ্ছি। অসহায়, গরিব ও দুঃখীদের পাশে দাঁড়াতে চাই, ভবিষ্যতে শিক্ষার মান উন্নয়নে কাজ করতে চাই।

চাঁদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদুজ্জামান তুষার বলেন, যুথীর এমন মহৎ উদ্যোগের বিষয়টি আমার জানা নেই। এখন শুনলাম। তবে উদ্যোগটি ভালো। করোনার বিষয়েও খেয়াল রাখতে হবে।

লেখক: শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।

বেরোবি/মাহি 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়