অনলাইনে পরীক্ষা দিতে চান যবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা
সজিবুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম
সম্প্রতি দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। কবে এবং কিভাবে খুলবে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো, বিষয়টি নিয়ে এক বছরের বেশি সময় পার হলেও পাওয়া যায়নি কোনো সঠিক সিদ্ধান্ত। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের সশরীরে ও অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
ইউজিসির নির্দেশনার পরপরই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে সশরীরে অথবা অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার তারিখ ঘোষণা করলেও যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। বিগত সময়ে শিক্ষার্থীরা যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন, তা দ্রুততম সময়ে মানিয়ে নিয়ে পরীক্ষা কার্যক্রম শুরুতে বিলম্বিত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি অনেকটা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
সশরীরে ও অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তবে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে কী ভাবছে যবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা, তাদের মতামত তুলে ধরেছেন রাইজিংবিডি ডটকমের যবিপ্রবি প্রতিনিধি সজিবুর রহমান।
বর্তমানে যশোরের করোনা পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করলে এই মুহূর্তে সশরীরে সব বিভাগ ও বর্ষের পরীক্ষা নেওয়া অনেকাংশে অসম্ভব। এর প্রধান কারণ, যশোর একটি সীমান্তবর্তী এলাকা এবং বেনাপোল বর্ডার যশোর জেলাকে করোনার একটি হটস্পটে রূপ দিয়েছে। এখানে আতঙ্ক রয়েছে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়্যান্টের, এমন অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো না খুলে বিভিন্ন জেলা থেকে শিক্ষার্থীদের এনে সশরীরে পরীক্ষা নেওয়া নিছক বোকামি ছাড়া আর কিছুই হবে না। তাই আমি মনে করি, এই অবস্থায় অনলাইনে পরীক্ষা কার্যক্রম নেওয়াই বেশি যুক্তিযুক্ত।
কারণ ইতোমধ্যে আমরা অনলাইনে ক্লাসে অংশগ্রহণ করেছি, যেখানে আমাদের নিজ বিভাগের ক্লাসে উপস্থিতি প্রায় ৯৭ শতাংশ। অন্যান্য বিভাগগুলোরও উপস্থিতি খুব ভালো। নিজ বিভাগে অনলাইনে ক্লাসের পাশাপাশি অনলাইনে যেসব পরীক্ষা ও ভাইভা নেওয়া হয়েছে, সেখানে সব শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছেন।
অনলাইন ক্লাস ও পরীক্ষা নেওয়ার জন্য যবিপ্রবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিজস্ব লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (LMS) তৈরি করেছে। এছাড়াও ফোন ও ইন্টারনেট সুবিধা বিশ্ববিদ্যালয় নিশ্চিত করেছে। সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মতামত সাপেক্ষে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ায় যায়। ইতোমধ্যে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে পরীক্ষা নিয়েছে। আমদের বিশ্ববিদ্যালয় চাইলে তাদের অনুসরণ করে শিক্ষার্থীবান্ধব অনলাইন পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে পারে। তবে অবশ্যই এক্ষেত্রে সবার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
জহুরুল ইসলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, বর্তমানে অনলাইনে আমাদের দুই সেমিস্টারের কোর্স সম্পন্ন করেছেন শিক্ষকরা। এমতাবস্থায় আমরা যদি পরীক্ষা দিতে না পারি, তাহলে সেশনজটের সম্মুখীন হবো। তাই আমরা চাই, পরীক্ষা দিয়ে পরবর্তী বর্ষে পদার্পণ করতে। বর্তমানে ইউজিসি প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়কে অনলাইন বা সশরীরে পরীক্ষা নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে, আমরাও চাই পরীক্ষা দিতে। কিন্তু হঠাৎ করেই যশোরে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সশরীরে পরীক্ষা নেওয়া অনেকটাই ঝুকিপূর্ণ। এই অবস্থায় অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ায় আমাদের জন্য ভালো হবে বলে আমি মনে করছি।
অরনী নাহা্র, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, মহামারি কোভিড-১৯ আমাদের শিক্ষাজীবনে অনেক বাজেভাবে প্রভাব ফেলেছে। করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় বড় সেশনজটে পড়তে যাচ্ছি আমরা। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এই পরিস্থিতিতে খোলা অনেকাংশে অসম্ভব, তাই অবশ্যই আমাদের পরীক্ষাগুলো অনলাইনে নিয়ে নেওয়া উচিত।
প্রায় দেড় বছর ধরে একই বর্ষে রয়েছি আমরা। এইভাবে আর কত দিন থাকবো? পরীক্ষা স্থগিত থাকায় হাজারো শিক্ষার্থী মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছেন। বর্তমান সময়ের মতো জরুরি অবস্থায় প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগ পর্যন্ত সেশনজট থেকে বাঁচতে অনলাইন পরীক্ষাই এখন সময় উপযোগী সমাধান।
সায়মা ইসলাম, মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, গত বছরের ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আমরা শিক্ষার্থীরা এই দীর্ঘ সময় স্বাভাবিক শিক্ষাজীবন থেকে দূরে থাকার কারণে মানসিকভাবে অনেকটা অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ছি। অনেককেই নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে বাদ দিতে হয়েছে নিজের শিক্ষাজীবন। কেউ কাঁধে তুলে নিয়েছেন পরিবারের দায়িত্ব। এইভাবে আর কত দিন থাকতে হবে! ইতোমধ্যে আমরা অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে দুই সেমিস্টারের কোর্স সম্পূর্ণ করেছি। এমতাবস্থায় আমরা যদি পরীক্ষা দিতে নাই পারি, তাহলে আমি নিশ্চিত সামনে বড় ধরনের সেশনজটের সম্মুখীন হতে হবে। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে অনলাইন পরীক্ষাই সবচেয়ে বেশি কার্যকরি বলে মনে করি।
মো. লনি শিকদার, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, কঠোর বিধিনিষেধ দিয়েও যশোরে করোনা পরিস্থিতির লাগাম টানা যাচ্ছে না। প্রতিদিনই যশোর জেনারেল হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত রোগী বাড়ছে। হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে কোনো শয্যাই খালি নেই, এমনকি মেঝেতেও জায়গা নেই। এমন পরিস্থিতিতে সশরীরে পরীক্ষা দেওয়া অসম্ভব। এদিকে দেশের করোনা আক্রান্তের দিক দিয়ে যশোরই মূল আলোচনায়। এমন পরিস্থিতিতে যদি অনলাইনে পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের সেশনজট থেকে মুক্তি দিয়ে পরবর্তী সেমিস্টার শুরু করা হয়, তাহলে ভালো হবে।
যবিপ্রবি/মাহি
আরো পড়ুন