ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ভুয়া করোনা সনদের খেসারত দিচ্ছেন বিদেশে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা

রাজীব আহাম্মদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩৫, ১৬ জুন ২০২১   আপডেট: ১৪:৫৯, ১৬ জুন ২০২১
ভুয়া করোনা সনদের খেসারত দিচ্ছেন বিদেশে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা

ভুয়া করোনা সনদের খেসারত দিতে হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষার বৃত্তিপ্রাপ্ত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের। দেশ থেকে করোনার নেগেটিভ সনদ নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় গিয়ে পজিটিভ ধরা পড়ায় সম্প্রতি দেশটি বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।অন্যদিকে ভিসা প্রক্রিয়া চালু করলেও বাংলাদেশে সংক্রমণের উচ্চহার বিদ্যমান থাকায় এই প্রক্রিয়া ধীরগতিতে সারছে জার্মানিসহ কয়েকটি দেশ।

এমন প্রেক্ষাপটে স্কলারশিপ পেয়েও বিদেশ যাওয়া হচ্ছে না শিক্ষার্থীদের। যারা আংশিক বৃত্তি পেয়েছেন কিংবা পুরো টিউশন ফি দিয়ে ভর্তি হয়েছেন, তারা গত একবছরে কোর্সভেদে এক থেকে তিন লক্ষ টাকা জমা দিয়েও বিশ্ববিদ্যালগুলোতে ক্লাস শুরু করতে যেতে পারছেন না। এমতাবস্থায় ভর্তি বাতিল হতে পারে এমন আশঙ্কা ও দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তারদের। গত মার্চে ১৬ জন, এপ্রিলে ৩৩ জন এবং মে মাসে ৯ জন বাংলাদেশি, করোনা নেগেটিভ সনদ নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার পর টেস্টে তাদের পজিটিভ ধরা পড়ে। এই কারণে ১৬ এপ্রিল থেকে নতুন করে ভিসা দেওয়া বন্ধ রেখেছে দক্ষিণ কোরিয়া। এ সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে দেশ ছাড়ার আগে দক্ষিণ কোরিয়াগামীদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে থাকার নিয়ম প্রণয়ন করে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়।

সরকারি রিক্রুটিং এজেন্সি বোয়েসেলের তত্ত্বাবধানে সাত দিন কোয়ারেন্টাইনের নিয়ম করা হয়েছিল। এ নিয়ম অনুযায়ী দক্ষিণ কোরিয়া যাত্রার ৯ দিন আগে করোনা পরীক্ষা করাতে বলা হয়েছিল। ফলাফল নেগেটিভ এলে বিমানের টিকিট বুকিং দিয়ে সাত দিন বোয়েসেল নির্ধারিত হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। ষষ্ঠ দিনে দ্বিতীয় করোনা পরীক্ষা করাতে হবে। তাতে নেগেটিভ এলে ট্রাভেল বীমা করে অষ্টম দিনে হোটেলের ব্যবস্থাপনায় সরাসরি বিমানবন্দরে যেতে হবে। বোয়েসেল বাংলাদেশি কর্মী ও শিক্ষার্থীদের; করোনা পরীক্ষা ও কোয়ারেন্টাইনে রাখতে ‘স্টিমজ হেলথ কেয়ার বিডি লিমিটেড’ নামে বাংলামটরের অবস্থিত একটি প্রতিষ্ঠানকে নিযুক্ত করেছিল। প্রতিষ্ঠানটি জনপ্রতি ২৫ হাজার ৫০০ টাকা ফি ধার্য করেও বিদেশগামীদের ভুয়া করোনা সনদ এবং হোটেলে না রেখেও কোয়ারেন্টাইনে থাকার সনদ দেয়। এমন প্রেক্ষাপটে স্টিমজের করোনা পরীক্ষা স্থগিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

বোয়েসেল সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ মে থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ৮৪ জন দক্ষিণ কোরিয়াগামী বাংলাদেশি করোনা পরীক্ষা ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকার জন্য নিবন্ধন করেন। তাদের মধ্যে ৪৪ জন দক্ষিণ কোরিয়ায় গিয়েছেন।  যাদের আগে থেকেই ভিসা ছিল কিংবা বসবাসের অনুমতি রয়েছে, শুধু তারাই এখন দক্ষিণ কোরিয়া যেতে পারছেন। দূতাবাস জানিয়েছে, সিউল পৌঁছানো বাংলাদেশিদের করোনা পজিটিভ হার যত দিন শূন্যের কাছাকাছি না আসবে ততদিন নতুন করে ভিসা দেওয়া হবে না। গত মাসে দক্ষিণ কোরিয়া তাদের ঢাকাস্থ দূতাবাস অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এই তথ্য জানিয়েছে। এদিকে আগামী সেপ্টেম্বরে নতুন সেমিস্টার শুরু হচ্ছে। অথচ ১৫ মাস আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েও এখনও ক্লাস শুরু করতে পারেননি শতাধিক শিক্ষার্থী। এতদিন অনলাইনে ক্লাস করলেও আগামী সেমিস্টারে সশরীরে ক্লাসে উপস্থিত থাকার বাধ্যবাধকতা থাকায় তারা বিপাকে পড়েছেন।

একই শঙ্কায় রয়েছেন জার্মানির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েও দেশটিতে যেতে না পারা হাজারখানেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী।লকডাউনের কারণে ঢাকার জার্মান দূতাবাস এতদিন তাদের ভিসা কার্যক্রম বন্ধ রেখেছিল। আটকে পড়া শিক্ষার্থীরা একজোট হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি শুরুর পর জার্মান দূতাবাসের দৃষ্টিগোচর হয়। ২৬ মে থেকে ঢাকাস্থ দূতাবাসে শিক্ষার্থীদের ভিসা সাক্ষাৎকার শুরু হয়। তবে কার্যক্রম শুরু হলেও গতি মন্থর। শিক্ষার্থীদের কয়েকজন জানিয়েছেন, তারা দূতাবাস থেকে জানতে পেরেছেন বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি ও ভুয়া করোনা সনদের কারণে ভিসা প্রক্রিয়া ধীর। ভিসা প্রদান কার্যক্রম গতিশীল করতে বাংলাদেশ যেন জার্মান দূতাবাসকে অনুরোধ করে- এই দাবিতে গত ২ মে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনকে স্মারকলিপি দেন শিক্ষার্থীরা।

মন্ত্রণালয়কে দেওয়া চিঠিতে শিক্ষার্থীরা বলেছেন, তাদের কষ্টার্জিত স্কলারশিপ বাতিল হলে উচ্চশিক্ষা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।বিদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় তারা ব্লক অ্যাকাউন্টে এক লক্ষ ১০ হাজার টাকা করে জমা দিয়েছেন। এই টাকা আর ফেরত পাবার সম্ভাবনা নেই। অনেক শিক্ষার্থীকে ভর্তি টিকিয়ে রাখতে মাসে মাসে দেশ থেকে টাকাও পাঠাতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডোর্মেটরি ও স্বাস্থ্য বীমার কিস্তি বাবদ। পরিস্থিতি অনুকূলে এলে যত দ্রুত এখন তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌছে ক্লাস শুরু করতে পারেন, এটাই তাদের প্রত্যাশা।

ঢাকা/সাব্বির

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়