ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

আমিই তো ওদের মা, ওদের বাবা! 

মোসলেম উদ্দিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৫৯, ২০ জুন ২০২১   আপডেট: ১৭:০০, ২০ জুন ২০২১
আমিই তো ওদের মা, ওদের বাবা! 

বাবা যে কেমন, তার স্বাদ বা কেমন, তাতো কোনো দিন উপলদ্ধি করতে পারিনি। কেননা, সেই দেড় বছর বয়সে বাবাকে হারিয়েছি। তবে আমি একজন বাবা হতে পেরেছি। দুটি মেয়ের জন্য নিজের সর্বোচ্ছটা দিয়ে শান্তি পাই। তাদের ঘিরে আমার বেঁচে থাকা। তাদের মুখে হাসি ফোটানোই আমার একমাত্র উদ্দেশ্য। 

শত জল্পনা-কল্পনা তাদের নিয়ে। তাদের স্বার্থকতা আমার স্বার্থকতা। সবাই তাদের ছেড়ে গেছে কিন্তু আমি যাইনি। কেননা আমি যে বাবা। যে দশমাস, দশদিন গর্ভে রেখে ছিলেন, সেও তো ফাঁকি দিয়ে চলে গেছেন। কিন্তু আমি যাইনি, আমি যে একজন বাবা।

দুইটি মেয়ের মুখ দেখলে জগতের সব দুঃখ-কষ্ট ভুলে যাই। ক্ষুধা লাগলে ভালোমন্দ, আত্বীয়স্বজন ভাইবোন প্রতিবেশী এমন কি মাকেও বিরক্ত মনে হয়। কিন্তু এমন সময় দুই মেয়ে যদি কাছে ছুটে আসেন বা কোলে ওঠেন। তখন ক্ষুধা বা বিরক্ত পালিয়ে যায়। ক্লান্ত শরীর শ্রান্ত হয়ে যায়। তাদের হাসিমুখ আর কমল হাতের ছোঁয়ায় ভেতরে কি যেন এক অনুভূতি কাজ করে। কোলে তুলে নিয়ে বুকের মাঝে জোড়িয়ে ধরলে পৃথিবীর সব ভুলে যাওয়া যায়। এটাই তো বাবার প্রকৃত রূপ।

প্রতিদিন কোনো না কোনো অনুষ্ঠানে যাই। অনেকেই ভালো ভালো খাবার খেতে দেন। তখন দুটি চাঁদের মতো মুখ আমার সামনে ভেসে ওঠে। খেতে পারি না। মন বলে এই খাবারটুকু যদি নিয়ে গিয়ে তাদের মুখে তুলে দিতে পারতাম! না খেয়ে প্যাকেট করে ছুটে আসি বাড়িতে। মীম-রুকু মা খাবার নিয়ে এসেছি। নিজ হাতে যখন তাদের খাবার খুলে খাওয়াই তখন কি যে তৃপ্তি, বোঝাতে পারবো না।

রুকুর বয়স তিন বছর, মীমের বয়স আট বছর রেখেই চলে গেলেন তাদের মা না ফেরার দেশে। কাঁধে পড়লো সব দায়িত্ব। একটি রাত তাদের ছেড়ে বাইরে থাকিনি। তাদের যে মা নেই। আমিই মা, আমি যে বাবা। এইতো দুই বছর আগে। বন্ধুদের সাথে সুন্দর বন দেখতে যাবো। রাত ৯টায় জয়পুরহাট রেলস্টেশনে সীমান্ত ট্রেনে উঠলাম। ভেসে উঠলো দুটি মাসুম বাচ্চার মুখ। বন্ধুদের কাউকে না বলে ট্রেন থেকে নেমে ছুটতে থাকলাম আমার বাচ্চাদের কাছে। মা নেই, আমিই তো ওদের সব। আমি যে তাদের একমাত্র ভরসা।

সেদিন রাত ২টা, রুকুর শরীরে প্রচণ্ড জ্বর। গাঁ পুড়ে যাচ্ছে, তীব্র জ্বরে মেয়ে আমার ভুল বকছে। এত রাত কি করি, ছোট বাচ্চা সব ওষুধ তো খাওয়ানো যাবে না। মাথায় পানি আর গামছা ভিজিয়ে শরীর মুছে দিচ্ছি। কিছুতেই মেয়ের জ্বর নামছে না। নিরুপায় হয়ে বাচ্চাকে বুকে নিয়ে সেই গভীর রাতে ছুটে বের হলাম ডাক্তার বা ওষুধের দোকানের সন্ধানে। রাত ৩টা, পুরো শহর বাচ্চাকে বুকে নিয়ে ঘুরছি। ওতো রাতে কি আর এসব পাওয়া যায়। কুল না পেয়ে এক ডাক্তারের বাড়ির দরজায় গিয়ে উপস্থিত হলাম। দরজা ধাক্কা দিয়ে,অনেক ডাকাডাকি করে তাকে ঘুম থেকে তুললাম। বিশেষ অনুরোধ করে বাচ্চার চিকিৎসা নিলাম। জ্বর কমলো, বুকের মাঝেই ঘুমিয়ে পড়লো মেয়ে। আর আমার বুকে ফিলে এলো স্বস্তি। 

তাদের স্বার্থকতা, আমার স্বার্থকতা। ৫ম শ্রেণির ফল প্রকাশ। মীম, বাবা আমি জিপিএ-৫ পেয়েছি। ৮ম শ্রেণির ফল প্রকাশ। মীম, বাবা আমি আবারও জিপিএ-৫ পেয়েছি। একের পর এক মেয়ের সাফল্য দেখে নিজেকে একজন গর্বিত আর অহংকারী বাবা মনে করছি। দুনিয়ার সব স্বার্থকতা মনে হচ্ছে আমার এই কুড়ে ঘরে বাসা বাঁধছে।

দিনাজপুর/মাহি 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়