ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

নেশাখোর ও নারী উত্যক্তকারীদের দখলে জাবির ওভারব্রিজ

জাবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:২৬, ২২ জুন ২০২১  
নেশাখোর ও নারী  উত্যক্তকারীদের দখলে জাবির ওভারব্রিজ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জয় বাংলা (প্রান্তিক) গেটের ওভারব্রিজে প্রায়-ই দেখা মিলছে বিকৃত মানসিকতার এবং একইসঙ্গে নেশায় মগ্ন থাকা বহিরাগত একদল ছেলেদের। হাতে থাকা পলিথিনে আঠা নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকছেন সেখানে নেশাগ্রস্ত অবস্থায়। এতে ওভারব্রিজ ব্যবহার করতে আতঙ্কে আছেন শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে মেয়েরা শিকার হচ্ছেন নানা যৌন হয়রানিমূলক আচরণেরও।

বন্ধ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস কিন্তু সহস্রাধিক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশেই বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছেন। টিউশন ও অন্যান্য কাজে তাদের প্রতিদিনই ব্যবহার করতে হয় এই ওভারব্রিজ। কিন্তু ওভারব্রিজ পার হয়ে ভেতরে আসতে কিংবা বাইরে যেতেই এমন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। আছেন নিরাপত্তারক্ষক কিন্তু নেই নিরাপত্তা।

হোক ভরদুপুর কিংবা সন্ধ্যা, হরহামেশাই ঘটছে এমন ঘটনা। ক্যাম্পাসের ভেতর বা প্রান্তিক ওভারব্রিজ, যেখানে-সেখানে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েরাও।

গত রোববার (২০ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ টিউশন থেকে ফিরছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম আবর্তনের (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) এক শিক্ষার্থী। প্রান্তিক ওভারব্রিজে উঠে আর এগিয়ে যেতে পারছিলেন না সামনের দিকে। তিনি বলেন, ওভারব্রিজে উঠার পর দেখি বিপরীত পাশে একটা মধ্যবয়স্ক লোক দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি ক্রমশ এগিয়ে আসছেন এবং খুব অশোভন অঙ্গভঙ্গি করছেন। আমি কিছু বুঝতে পারছিলাম না তখন ঠিক কী করবো! ওভারব্রিজ বিশাল বিশাল ব্যানার দিয়ে ঘেরা। রাস্তা রাস্তা থেকে দেখা যায় না, আশেপাশে ছিল না কেউ। নিচে তাকিয়ে যতদূর দেখতে পেলাম কেউই নেই। ওই দিকে লোকটি তার পরিহিত পোশাক খুলছে আর খুবই বাজেভাবে এগিয়ে আসছে। আমি তখন দৌড়ে নিচে নেমে যেতে থাকি। তখন দেখি ২/৩টা মেয়ে উঠছেন। তাদের দেখে কিছুটা সাহস পাই।

এদিকে আজ মঙ্গলবার (২২ জুন) প্রায় একই ঘটনার শিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের আরেকজন শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, বিকালে টিউশন শেষে ফেরার পথে ওভারব্রিজের ওপরে উঠতেই দেখি একই সাথে হাতে পলিথিনে আঠা নিয়ে নির্যাস নিচ্ছেন একদল ভাসমান ছেলেরা। বয়স ১৫ থেকে ২০ এর ভেতর হবে। তারপরের দিনও একই অবস্থা দেখলাম। যেটা বুঝলাম, প্রায় চব্বিশ ঘণ্টাই তাদের উপস্থিতি সেখানে। ওভারব্রিজ যেন হয়ে উঠেছে নেশা ও মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার একটা পাকাপোক্ত জায়গা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ বলেন, 'এটা নিরাপত্তার অফিসের দায়িত্ব। আমরা এইসব টোকাইদের বেশ কয়েকবার ইতোপূর্বে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি, তারা বারবার ফিরে ফিরে আসে।আমি বিষয়টা নিরাপত্তা অফিসে আবার জানাবো, এটা তাদের দায়িত্ব। আর ব্যানারগুলো খোলার বিষয়েও কথা বলবো।'

এদিকে তৎক্ষণাত প্রক্টরের বক্তব্যের বিরোধিতা করে প্রান্তিক (জয় বাংলা) গেটে কর্তব্যরত একজন গার্ড বলেন, এটা আমাদের দায়িত্বের ভেতর পড়ে না। আমার দায়িত্ব শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে, ওভারব্রিজে কী হচ্ছে, না হচ্ছে ওটা আমার দেখার বিষয় না। ওরা অনেক ক্ষমতাবান। আমরা ওদের কিছু বলতে পারবো না।'

এর আগেও একাধিকবার কর্তব্যরত গার্ডদের কাছ থেকে একই রকম উত্তর এসেছে বলেও নিশ্চিত করেছেন বেশ কিছু শিক্ষার্থী। তারা বলেন, গার্ডরা কখনোই ওভারব্রিজকে তাদের দায়িত্বের ভেতর মনে করেন না। কিন্তু এখানেই সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হন শিক্ষার্থীরা। গার্ডরা নিজেদের মতো তাদের কর্তব্যের গণ্ডি ঠিক করে নেন।

তাজুল/মাহি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়