ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ঈদ হোক ত্যাগের ও সচেতনতার 

ইউছুব ওসমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫১, ১৯ জুলাই ২০২১   আপডেট: ১৬:৪০, ১৯ জুলাই ২০২১
ঈদ হোক ত্যাগের ও সচেতনতার 

মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে থমকে আছে পুরো পৃথিবী। প্রায় দেড় বছর যাবৎ বিশ্বজুড়ে বিপর্যস্ত জনজীবন। এই প্রতিকূল সময়ে আবারও এসেছে মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ইদুল আজহা। আত্মত্যাগ, সেবা, দান এবং মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটানো এই পবিত্র ঈদ সবার মাঝেই আনন্দের জোয়ার বয়ে নিয়ে আসে। কিন্তু এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে প্রায় সবার মধ্যেই ঈদ আনন্দের ভাটা পড়েছে। যার প্রভাব পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ঈদ আনন্দেও। 

এদিকে ঈদকে ঘিরে নানা আয়োজন ও পরিকল্পনা সীমিত হয়ে গেছে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায়। এবিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভাবনা তুলে ধরেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক ইউছুব ওসমান।

ঈদে আনন্দের সঙ্গে সাবধানতা অবলম্বন করাও জরুরি

শান্তি, সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ববোধের ত্যাগের মহিমায় মহিমান্বিত মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-আযহা। করোনকালের এই অবরুদ্ধ নিষ্ক্রিয়তায় চতুর্থ ইদ পালন করতে চলেছি আমরা। যেখানে ঈদ মানেই আনন্দ, সেখানে করোনার জন্য প্রিয়জনের মুখ দেখতে পাওয়াই যেন হয়ে উঠেছে দুঃসাধ্য।

আবেগের বশে নিজেদের অসচেতনতায় আনন্দ উৎসবে প্রিয়জনকে হারিয়ে যেন কারো জীবন বিবর্ণ না হয়। গরিবের হক আদায়, আত্মীয়তা রক্ষা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে ঈদ হোক পরিপূর্ণ। পাশাপাশি কোরবানির স্থান এবং আশেপাশে পরিষ্কার রেখে নগরীকে পরিষ্কার রাখাও আমাদের কর্তব্য। আসুন সবাই কোরবানির ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত হয়ে নিজেদের সব ধ্বংসাত্মক মানব দোষগুলো (ক্রোধ, ক্ষোভ, ঘৃণা, হিংসা) থেকে বিরত থাকি।

আনন্যামা নাসুহা, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ

ঈদ হোক মানবতার, সচেতনতার 

সময়ের পরিক্রমায় দুয়ারে কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদ-উল-আজহা। মনের পশুত্বকে ধ্বংস করে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটানোই যার মূল উদ্দেশ্য। সুন্দর পৃথিবীতে পবিত্র হওয়ার বা নতুনত্বে জীবন বদলানোর প্রয়াস থেকে ঈদ উদযাপিত হয়ে আসছে। করোনা মহামারির জন্য বিগত দু'বছর যাবত বাস্তবতা বদলে গেছে। স্বাস্থ্যবিধির মতো নিত্যনতুন আইডিয়া যোগ হচ্ছে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে। বক্ষের মিলন বা হাতের ছোঁয়ায় ঐক্য গড়া না গেলেও মনস্তাত্ত্বিক মিলন হতেই পারে৷ অপরের প্রতি সহমর্মিতাসুলভ মনোভাব সৃষ্টি করতে পারে সমৃদ্ধ এক মানসিক ঐক্যর৷ 

স্বাস্থ্যবিধির খুঁটিনাটি নিয়ম মেনে অবশ্যই দাঁড়ানো যেতে পারে পাশের বাড়ির খেতে না পারা বা সাময়িক দুরাবস্থায় আক্রান্ত প্রতিবেশির পাশে। মনে রাখতে হবে, আমাদের দূরে থাকতে বলা হয়েছে (শারীরিকভাবে), দূরে সরে যেতে বলা হয়নি (মানসিকভাবে)। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে দৃশ্যপট পৃথিবীতে বরাবরই বদলায়। বদলে যাওয়া দৃশ্যপটের সাথে নিজেকে বদলে নেওয়াটাই হবে সময়ের সেরা সিদ্ধান্ত। এভাবেই সৃষ্টি হোক সচেতনতা, অটুট থাকুক মানুষ হিসেবে মানবিকতা। পৃথিবী হোক সুস্থ, সুন্দর। ঈদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

অনন্য প্রতীক রাউত, আইন বিভাগ

ত্যাগের উৎসব ঈদুল আজহা

বছরের দুটি ঈদের মধ্যে একটি হলো ঈদুল আজহা, যা মুসলমানদের ত্যাগের উৎসব। চলতি ভাষায় এই ঈদকে কোরবানির ঈদও বলা হয়। এই ঈদে মুসলমান তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী আল্লাহর নামে কোরবানি করে থাকে এবং সেই কোরবানির মাংস সবার মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। বছর ঘুরে আবার মুসলমানদের এই ত্যাগের উৎসব আসতে চলেছে। করোনাভাইরাসের কারণে গত বছরের মতো এবারও ভিন্ন এক বাস্তবতায় উদযাপন হবে ঈদুল আজহা। এবারও কোরবানির আয়োজন সীমিত। এছাড়া প্রচলিত রীতি অনুযায়ী ঈদে আত্মীয়ের বাড়িতে দাওয়াত খাওয়া থেকে শুরু করে সব আনন্দ যেন বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদ উদযাপন করতে হবে সবাইকে আর আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে হবে, যাতে এই ত্যাগের উৎসবের মধ্য দিয়ে আল্লাহ এই করোনাভাইরাস থেকে সমগ্র পৃথিবীকে মুক্ত করেন। 

সিদরাতুল মুনতাহা, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ

সচেতনতার মাধ্যমে ঈদের আনন্দ উপভোগ 

সবার সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করার মাধ্যম ঈদ আবার সবার মাঝে চলে এসেছে৷ প্রতিটি ঈদকে কেন্দ্র করে সবার মাঝেই অনেক জল্পনা কল্পনার অন্ত থাকে না৷ কিন্তু বিগত দুই বছর ধরে বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে ঈদের আনন্দটুকু ম্লান হয়ে গেছে৷ বিশ্ববাসী উপভোগ করতে পারছে না তার প্রকৃত আনন্দ। বিশ্বের এমন সংকটময় মুহূর্তে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনে এক বিশেষ অভিজ্ঞতা অর্জন করা হচ্ছে। 

এবারের ইদুল-আযহা আমরা বর্ণিলভাবে পালন করতে না পারলেও নিজেদের পারস্পরিকতার মাধ্যমে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পালন করবো। অন্যান্য ঈদের মতো ঘুরতে বাইরে না গিয়ে করোনাকালীন এবারের ঈদটা নাহয় বাসাতেই কাটাবো৷সকলের প্রতি আহবান থাকবে, আমরা সবাই সচেতন হই, অযথা বাইরে ঘোরাঘুরি না করি, সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি। 

রিদুয়ান ইসলাম, বাংলা বিভাগ

করোনাকালীন ঘরকুনো ঈদ

করোনাকালীন সময়ে আবারো আগমন করছে ঈদুল আজহা। ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদ মানেই উৎসব। মহা ধুমধামে প্রিয়জনের সাথে থেকে নানা ধরনের আনন্দ আয়োজন উপভোগ করার মানেই হচ্ছে ঈদ। নানা ধরনের মিষ্টান্ন আর বিশেষ করে কোরবানির মাংস খাওয়ার মাধ্যমেই যেন এই ঈদের আনন্দ আয়োজন আরও বহুগুণে বেড়ে যায়। 

লকডাউনের অবস্থা বিবেচনা সাপেক্ষে এবার আর হয়তো গ্রামের বাড়িতে ঈদ উদযাপন করতে পারবেন না অনেকে। ফলে দীর্ঘ দিনের এই অভ্যাস ভঙের কারণে অনেকেই হয়তো মানসিকভাবেও মনোকষ্টে ভুগবেন। কিন্তুু এটি আসলে আমাদের কারোরই কাম্য নয়, কারণ ঈদ মানেই হলো আনন্দ আয়োজন, হাসি-খুশিতে মেতে থাকা। 

সানজিদা মাহমুদ মিষ্টি, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট

ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত ঈদ

বছরে দুইবার ঈদ আসে। তার মধ্যে ঈদুল আজহা অন্যতম। ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হওয়ার দিন ঈদুল আজহা। স্রস্টার কাছে নিজের সমস্ত ত্যাগ সমর্পণের দিন এটি। ত্যাগের শিক্ষা আমাদের ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে প্রতিফলিত হলেই প্রতিষ্ঠিত হবে শান্তি ও সৌহার্দ্য। একটি পশুকে বছরের পর বছর লালন-পালন করতে যেয়ে অনেক আবেগ ভালোবাসার অংশীদার হয়ে যায়। পরিবারের সাথে তার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে পড়ে। আর অনেক সময়তো সন্তানতুল্য। করোনাকালে সচেতনতার সাথে সবাই মিলে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার প্র‍য়াস থাকবে সবার মধ্যে, এটাই প্রত্যাশা।

অনুপম মল্লিক আদিত্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

ঈদ আনন্দে সতর্কতা

ঈদুল আজহা মানে ত্যাগের উৎসব। ঈদ মানেই আনন্দ, ঘোরাফেরা, সালাম আর উৎসব। তবে এ ঈদে এগুলোর কোনোটিই থাকছে না। কিছু থাকলেও খুবই সীমিত আকারে। সবকিছুর বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস।

গত তিনটা ঈদ এই করোনাকালেই পালিত হয়ে আসছে। তবে কোরবানির ঈদে অন্যরকম সচেতনতার সাথে পালন করতে হবে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এই দুই বছর যাবত সতর্কতার সাথে ঈদ পালিত হচ্ছে। পশু কেনার সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। তেমনিভাবে কোরবানি দেওয়ার পরে বর্জ্য নির্দিষ্ট কোনো একটা জায়গায় ফেলতে হবে। তা না হলে এসব বর্জ্যের ফলে রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়তে পারে। নিজ নিজ দায়িত্বে সবাইকে বর্জ্য পরিষ্কারে সচেষ্ট হতে হবে। 

সাবিনা আক্তার মুন্নি, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ  

ত্যাগের মহিমায় ত্যাগ করি ঈদের ঘোরাঘুরি 

ঈদের আনন্দ একা একা উপভোগ করা যায় না, সবাই মিলে ভাগাভাগি করে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে হয়। পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে মাংস বিলিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে ঈদ আনন্দ পাওয়া যায়। ফজরের নামাজের মাধ্যমে ঈদের দিনটি শুরু হয়ে শেষ হয় মাংস বিলানোর মাধ্যমে। মাঝে থাকে ঈদের নামাজ, কোরবানি এবং মাংস কাটা। ভয়কে উপেক্ষা করে বাড়ির বড়দের সাথে মাংস কাটার অনুভূতিটাই অন্যরকম। 

বিকেলে শুরু হয় বন্ধুদের সাথে ঘোরাঘুরি। বাড়ির কাছের নদী, ফরেস্ট কিংবা দর্শনীয় স্থানগুলোতে ভিড় জমে। জমে ওঠে আড্ডা। হয়তো নদী, ফরেস্টগুলোও এই দিনটির অপেক্ষা করে। অন্যান্য সময় জনশূন্য এই স্থানগুলো হয়তো অপেক্ষা করে জনমানুষের। কিন্তু বর্তমান করোনা নামক ভয়াল থাবার কারণে স্থানগুলোর পরিপূর্ণতা এখনো পাচ্ছে না। কোরবানি ঈদ ত্যাগ করতে শেখায়, বর্তমান পরিস্থিতিতে এই ঘুরে বেড়ানোটাই ত্যাগ করতে হবে বলে মন খারাপ হতেই পারে। 

মো. মেহেদী হাসান, গণিত বিভাগ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়