ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

কেমন কেটেছে শিক্ষার্থীদের ঈদ

হাসান মাহমুদ শুভ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২০, ২৪ জুলাই ২০২১   আপডেট: ১৩:২৪, ২৪ জুলাই ২০২১
কেমন কেটেছে শিক্ষার্থীদের ঈদ

মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। এসময় প্রতিটি মুসলমানের ঘরে ঘরে বয়ে যায় ঈদ আনন্দ। কিন্তু করোনা প্যান্ডেমিকের কারণে বিপর্যস্ত জনজীবন। মানুষ ঘরবন্দী হয়ে পড়েছে। আনন্দের মাত্র কমেছে বহুগুণে। শিক্ষার্থীদের উপর এর প্রভাব তুলনামূলক বেশি পড়েছে। বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাওয়া, আড্ডা দেওয়া আরও কত কি! সব কিছু থমকে গেছে করোনার জন্য। তবুও প্যান্ডেমিকের মধ্যে কেমন কেটেছে শিক্ষার্থীদের ঈদ। তাদের মতামত তুলে ধরেছেন ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী হাসান মাহমুদ শুভ। 

এক সাগর হতাশায় একটু আনন্দের ছোঁয়া 

‌‘ঈদ-উল-আজহা’ মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব। এটি ত্যাগ বা কুরবানির ঈদ নামেও পরিচিত। এ ঈদের দিন ফজরের পর দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ পড়ে প্রভুর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে বিভিন্ন পশু কোরবানি করা হয়। সেগুলো গরীব-দুখী, পাড়া-প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে বিলিয়ে ও একে অপরের বাড়িতে গিয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করা হয়। এতে করে সবার মাঝে মজবুত এক ভ্রাতৃত্ববোধের সৃষ্টি হয়। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার হল যে, বর্তমানে করোনা সংকটের কারণে যেন স্তব্ধ পুরো পৃথিবী। বাংলাদেশেও এর বিরূপ প্রভাব বিদ্যমান। এজন্য বিভিন্ন প্রতিকূলতার কারণে শিক্ষার্থীরাসহ সব শ্রেণির মানুষই এক ধরনের হতাশায় নিমজ্জিত। করোনার সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা জনিত বিভিন্ন বাঁধা-প্রতিবন্ধকতার কারণে এবারের ঈদ বিগত বছরগুলোর মতো পরিপূর্ণ না হলেও একটু আনন্দের ছোঁয়া লেগেছে। 

জাফর আলী, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

করোনায় ভাটা পড়েছে ঈদ আনন্দ 

আমার কাছে ঈদ আনন্দ বলতে শৈশব-কৈশোরে ফেলে আসা সেই স্মৃতিমাখা সময়টাকেই বোঝায়। সময়ের পরিক্রমায় প্রতি বছর ঈদ আসলেও ছোট সময়ের আনন্দ আর ফিরে আসে না। এর মাঝে দেড় বছরের বেশি সময় ধরে তাণ্ডব চালানো করোনা থমকে দিয়েছে সবকিছু। আশেপাশে এত এত অভাব, অনুযোগ, অসহায়ত্ব, স্বজন হারানোর বেদনা, হসপিটালে মৃত্যুর সাঙ্গে পাঞ্জা লড়া মানুষের আর্তনাতকে উপেক্ষা করে উদযাপিত হলো মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ইদ-উল-আজহা।  টানা চতুর্থবারের মতো গৃহবন্দীভাবেই উৎযাপন করলাম ঈদ উৎসব। ঈদের সেই চিরচেনা আমেজটা করোনায় হারিয়ে গেছে। আত্নীয় পরিজন ছাড়া  অনেকটা আতঙ্ক উৎকণ্ঠার মাঝে বন্দীদশায় কাটলো এবারে ঈদ। তবুও এই শুভ দিনে একটাই প্রার্থনা পৃথিবী ফিরে আসুক আপন রূপে। সুস্থ পৃথীবিতে প্রাণের মেলবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে উৎযাপিত হোক প্রতিটি উৎসব।

ইসরাত জাহান চৈতী, শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

ভার্চুয়াল ঈদ

প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও সাম্য, মৌত্রী আর প্রীতির বার্তা নিয়ে ঈদুল আজহা এসেছে। তবে বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের জন্য এবারও অনেকটা সতর্কতার সাথে ঈদ উদযাপন করলাম। কেননা এখনো পরিস্থিতি অনুকূলে নয়।প্রতিদিনই লাশের সারি দীর্ঘ হচ্ছে। আগে যেভাবে ঈদ আসলে বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে বিভিন্ন আকর্ষণীয় স্থানে যাওয়া হতো, এবার সম্পূর্ণ তার বিপরীত হয়েছে। এমনকি নামাজ শেষে সবার সাথে কোলাকুলিও করা হয়নি। তবে সবার সাথে ভার্চুয়াল যোগাযোগ করা হয়েছে। বার্তা, অডিও, ভিডিও কলের মাধ্যমে। কেননা সবার আগে জীবন। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবার চলা উচিত এমন পরিস্থিতিতে। ঈদুল আজহার শিক্ষা সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ুক। সব ভেদাভেদ ভুলে সবাইকে আপন করে নেওয়া হলো ঈদুল আজহার শিক্ষা। অচিরেই আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসবে এই পৃথিবী এমনটাই হোক ঈদুল আজহায় চাওয়া।

আবদিম মুনিব, শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

আতঙ্কে ভরা ঈদ আনন্দ 

মুসলিমদের প্রধান দুইটি ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে একটি হল ঈদুল আজহা। এই উৎসবের মাধ্যমে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের আত্মত্যাগ, দান এবং মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটে। এই ঈদকে কেন্দ্র করে পরিবার পরিজনদের সাথে একত্রিত হয়ে আমরা ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করি। প্রতি বছরের মতো এবার ঈদেও কোরবানি করা হয়েছে, মাংস বণ্টন করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে এক অসীম তৃপ্তি। কিন্ত কোভিড-১৯ মহামারির কারণে পরপর দুই বছর স্বাভাবিক ঈদ উৎসব থেকে বিরত রয়েছি আমরা। এবারের ঈদ উদযাপনে আনন্দের চেয়ে আতঙ্কই যেন বেশি, কেননা করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা আবারো বেড়ে গেছে, সেইসঙ্গে বেড়েছে মৃত্যুর সংখ্যাও। এই আতঙ্ক নিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে অনেক পরিবারের প্রিয় সদস্যরাই স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপনে মিলিত হতে পারেনি, যা ঈদ উদযাপনের আনন্দকে ম্লান করে দিয়েছে। ঈদে নতুন কাপড়, ঘুরতে যাওয়া, ঈদগাহে নামাজসহ সব প্রক্রিয়া আজ স্বাস্থ্যবিধির সীমাবদ্ধতায় আবদ্ধ, ফিকে হয়ে গেছে ঈদের সেই চিরচেনা সৌন্দর্য।  

জান্নাতুল ফেরদৌস আঁখি, শিক্ষার্থী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়


মিশ্র ঈদ পালনে শিক্ষার্থীরা

ঈদ মানে খুশি, ছোট থেকে এই কথাটি শুনে আসলেও বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে ঈদ মানে সবার জন্য খুশি এই কথাটি থাকছে না। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের মাঝে ঈদের আনন্দে বেশ কিছুটা ভাটা দেখা দিয়েছে। কিছু মানুষের ঈদ আনন্দের পরিবর্তে সময়টা কাটছে হসপিটালের করিডরে। কেউ-বা আইসিইউর সামনে প্রিয়জনের সুস্থতার প্রহর গুনছে। করোনা আক্রান্ত হয়ে কাছে থেকেও পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে অনেকে। 

শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেরই নেই পরিবার বা বন্ধুদের সাথে ঈদ নিয়ে বিশেষ কোনো পরিকল্পনা। অনেকেই নিয়ম মেনে বাসায় সল্প পরিসরে করছে ঈদের আনুষ্ঠানিকতা। আবার অনেকের বাসায় নেই আত্মীয়-স্বজন বা প্রিয় মানুষের আনাগোনা। মহামারির উর্ধ্বগতি অনেকের জীবনে উৎসব পালনে যেন বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বলা যায়, করোনার এই সময়ে এক প্রকার মিশ্র ঈদের অংশীদার হয়েছে শিক্ষার্থীরা।

কাব্য সাহা, শিক্ষার্থী, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ 

ঢাকা/মাহি 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়