ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

ঈদের রঙ যেন ফিকে হচ্ছে দিনে দিনে

মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০৭, ২৫ জুলাই ২০২১   আপডেট: ১৫:১১, ২৫ জুলাই ২০২১
ঈদের রঙ যেন ফিকে হচ্ছে দিনে দিনে

করোনাকালে কেটে গেলো আরও একটি ঈদ। মানুষ যখন প্রিয়জন হারানোর শোকে ব্যথিত, ঠিক তখনি খুশির বার্তা নিয়ে উপস্থিত মুসলমানদের সবচেয়ে আনন্দের দিন পবিত্র ঈদুল আজহা। পালিতও হয়েছে সারা বিশ্বে। করোনা পরিস্থিতিতে ব্যতিক্রমভাবেই উদযাপন হলো। ঈদের আনন্দ কিছুটা উপভোগ করতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যে যার মতো করে চেষ্টা করেছে।  

করোনাকালীন এই সময়ে দীর্ঘ দিন ছুটিতে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের কেমন কাটলো ঈদ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মতামত তুলে ধরেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ।

ঈদের রঙ যেন ফিকে হয়ে আসছে দিনে দিনে

ছেলেবেলার ঈদের সাথে বড়বেলার ঈদের বেশ ফারাক। মনে হয় ঈদের আনন্দ যেন কয়েকগুণ কমে গেছে। অবশ্য এই অবস্থার সাথে অভ্যস্ততাও হয়ে গিয়েছে বেশ কয়েক বছর ধরে৷ এখন আবার নতুন বাস্তবতা হিসেবে যুক্ত হয়েছে মহামারি। বিশেষ করে এবারের ঈদে উৎসবের আনন্দের চেয়ে আতঙ্ক যেন আরও বেশি। গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। তাই ঈদের আমেজেও যেন ভাটা পড়েছে। ঈদের নামাজ, কোরবানি, আত্মীয়দের বাসায় যাওয়া- সবকিছুতেই শুধু ভাইরাসের সংক্রমণের দুশ্চিন্তা। তবে ভালো দিক হলো, সবার মাঝে সচেতনতা কিছুটা হলেও বেড়েছে। নামাযে, কোরবানির মাংস বিতরণে সবখানেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার একটা প্রবণতা দেখা গেছে মানুষের মধ্যে। আর শহুরে ঈদ সবসময় মানুষের সাথে একটু হলেও বিচ্ছিন্নতা থাকেই। তবু এসবের মাঝেই আনন্দ খুঁজে নিয়ে ঈদ পার করলাম। পৃথিবী থেকে মহামারি উঠে গিয়ে যেন শান্তি ফিরে আসে, এটিই-ই ছিল এই ঈদে প্রার্থনা।

ফারহান ইশরাক, শিক্ষার্থী, ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

করোনায় মলিন ঈদ আনন্দ 

বছর ঘুরে আবারও মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রাণের উৎসব ঈদুল আজহা উদযাপন হলো। ঈদ আনন্দ বলতে শৈশব-কৈশোরে ফেলে আসা সেই স্মৃতিমাখা সময়টাকেই বুঝি। সময়ের পরিক্রমায় প্রতি বছর ঈদ আসলেও ফিরে আসে না ফেলে আসা সোনালী শৈশবের ঈদ। তার উপর দেড় বছরের বেশি সময় ধরে তাণ্ডব চালানো করোনা আরও মলিন করে দিয়েছে ঈদ আনন্দ। আশেপাশে স্বজন হারানোর আর্তচিৎকার, হাসপাতালে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়া মানুষের করুণ আকুতি উপেক্ষা করে মোটামুটি খাপ ছাড়া ভাবে উদযাপিত হলো মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-আজহা। 

বিগত তৃতীয় বারের মতো এবারও অনেকটা গৃহবন্দী হয়ে পালন করলাম ঈদুল আজহা। আত্নীয়স্বজন ছাড়া আর করোনা আতঙ্কেই কাটলো এবারের ঈদ। কেমন যেন ছন্দপতন বিশ্বজুড়ে তবুও এই মহাক্ষণে বিশ্বের কোটি প্রাণের একটাই চাওয়া ধরনী ফিরে পাক তার আপন রূপে। মহামারিহীন এক রঙিন পৃথিবীতে প্রাণের মেলবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে উৎযাপিত হোক সব ধর্মীয় উৎসব, এমনটাই কাম্য।

ইসরাত জাহান চৈতী, শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

স্বাস্থ্যবিধি মেনে আনন্দের সাথে কাটলো ঈদ 

মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে বড় ও আনন্দঘন হচ্ছে ঈদের দিন। তবে এইবারের ঈদের চিরচেনা রূপ একদম দেখা মেলেইনি। নেই কোনো জাঁকজমক, নেই সেই আগের মতো উদ্দীপনা।  এর কারণ করোনাভাইরাসের আতঙ্ক। তবে সেই ছোট থেকে ঈদুল আজহা বা কোরবানি নিয়ে আমার একটি বিশেষ আনন্দ কাজ করে। আমার দাদুর বাড়ি জমিদার বাড়ি হিসেবেই পরিচিত। তাই ইদ আসলে সব কিছু যেন নিজ নিজ নিয়মে সেজে উঠে। কিন্তু করোনার কারণে এইবারের ঈদে হয়তো সবকিছু নিজ নিজ নিয়মে সাজতে পারেনি। তাও প্রতিবারের মতো এইবার কোরবানির ঈদে গ্রামের বাড়ি আসলাম। ঈদের আগের দিন রাত থেকে সকাল পর্যন্ত প্রতিবেশী কিছু মহিলা এসে রুটি পিঠা বানানোর কাজ করে, সেগুলো দেখছিলাম আর তাদের সাথে গল্পও করছিলাম অনেক রাত পর্যন্ত। 

তারপর সকালে গরু জবাইয়ের পর দুপুরের মধ্যে সেই মাংস নিজের জন্য এক ভাগ রেখে, প্রতিবেশী ও আত্নীয়দের মধ্যে দুই ভাগ বিতরণ করা হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাংস বিতরণ হয়, কারণ এসময়টা আমাদের সবার জন্য নিরাপদ থাকা জরুরি। এরপর গ্রামের কচিকাঁচা বাচ্চা এবং প্রায় সব বয়সের প্রতিবেশীরা আসে আমাদের ঘরে, সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে একসাথে আনন্দের সাথে সবাই মিলে রুটি-মাংস খাই। করোনামুক্ত সেই ঈদের দিনের পরিবেশ আর এখনকার ঈদের পরিবেশের মধ্যে আনন্দের একটু পার্থক্য থাকলেও ভালোই কেটেছে এবারের ঈদ।

আয়েশা সিদ্দিকা, শিক্ষার্থী, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

পরিবারের সঙ্গেই কেটেছে ঈদ

বিগত কয়েকটি ঈদের মতো এবারও করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতিতে এসেছে ঈদুল আজহা। দীর্ঘ বিরতিতে তাই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেই কেটেছে এবারের ঈদ। সবাইকে নিয়ে একসাথে সেমাই খাওয়া, লুডু খেলা, বিকালে একটু সাজুগুজু করা সবার সাথে সেলফি তোলা, সবার সাথে ফোন আলাপ, সন্ধ্যায় হালকা নাস্তার আড্ডা, রাতে পরিবারের সাথে ঈদ আয়োজনের টেলিভিশন অনুষ্ঠান দেখার মধ্য দিয়েই ঈদের দিনটি কেটে গেছে। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে যথারীতি সবার সাথে দিনভর ভিডিও কলে আলাপন, আড্ডা। এইতো এইভাবেই কেটে গেলো ঈদের সময়টুকু। আমাদের এই সীমাবদ্ধতার মধ্যেই পরিবারের সাথে আনন্দটা খুঁজে নিয়েছি।

এলাকার মধ্যে সংক্ষিপ্তভাবে ঘোরাঘুরি হলেও আত্মীয়দের বাসায় যাওয়া হয়নি৷ তবে কোরবানি, মাংস কাটা, পরিমাপ, বিতরণ, এসবের মাঝে আনন্দ ছিল অপরিসীম। আপনজনের মাঝেই রয়েছে ঈদের প্রকৃত আনন্দ। দ্রুতই পৃথিবী আগের মতো সুস্থ হয়ে উঠবে এবং আগের মতো সবার কাছে ঈদ আনন্দ ফিরে আসবে এমনটাই প্রত্যাশা।

মোছা. জান্নাতী বেগম, শিক্ষার্থী, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

যান্ত্রিক শহরেই কেটেছে ঈদ

করোনায় যেমন সব কিছু থমকে গেছে, ঠিক সেরকমই ঈদের মজাটাও শৈশবের স্মৃতিতে আটকে গেছে। দিন দিন যত বড় হচ্ছি ঈদের আনন্দ ততই কমে যাচ্ছে। আগের মতো আর সালামি নিতে বাড়ি বাড়ি যাওয়া হয় না, টিভি ছেড়ে নতুন জামা জুতা পরে ঈদের গান, নাটক দেখা হয় না, মনের আনন্দে ঘুরে বেড়ানোও আর হয় না। সব কিছু যেন একদম থমকে গেছে। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস বদলে দিয়েছে ঈদের সেই চিরচেনা আমেজ। প্রতি মুহূর্তে নতুন সংক্রমণ, নতুন মৃত্যুর খবরে সবাই যেন আতঙ্কিত। চারদিক যেন করোনা আক্রান্ত ও বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের হাহাকারে ঘেরা। এমন অসুস্থ পৃথিবীতে যে ঈদ পালন করতে হবে, তা কখনো ভাবিনি। তবে, সব মিলিয়ে ভালো কেটেছে। সুস্থ হোক পৃথিবী, প্রত্যাশা। 

রওশন জাহান সুমাইয়া, শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়

কেটে গেলো আরেকটি হর্ষ-বিষাদময় ঈদ

বড় হওয়ার সাথে সাথে ঈদ আনন্দও ক্রমশ ম্লান হয়ে যাচ্ছে। মহামারি করোনা ঈদকে আরও বিষাদময় করে তুলেছে। এবারের ঈদও বরাবরের মতোই কেটেছে। ঈদের দিন সকাল সকাল ঈদের জামাত, তাই আগের দিন দ্রুত ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে গোসল সেরে নিলাম। তারপর ঈদগাহে নামাজ পড়েছি। ফিরে গরু কোরবানির কাজে সহায়তা করেছি। রান্না শেষে খাওয়া-দাওয়া করে মাংস দিতে গিয়েছিলাম আপুর বাড়িতে। ঘরে বসে সোশ্যাল মিডিয়া, মেসেজ চালাচালি আর অডিও এবং ভিডিও কলের মাধ্যমেই সবার মাঝে ঈদ আনন্দকে ভাগাভাগি করে নিয়েছি। এভাবেই কেটে গেলো একটি ঈদ। অসুস্থ পৃথিবীতে সুস্থ থেকে পরিবারের সাথে ভালোমতো ঈদ কাটাতে পেরেছি এটাই তৃপ্তির বিষয়।

আজাহার ইসলাম, শিক্ষার্থী, ল' অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

জবি/মাহি 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়