ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

হুইল চেয়ারে বসে স্কুলে যেতে চায় কামাল

ইয়াছিন মোহাম্মদ সিথুন, নীলফামারী  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫২, ২২ আগস্ট ২০২১   আপডেট: ১১:৫৮, ২২ আগস্ট ২০২১
হুইল চেয়ারে বসে স্কুলে যেতে চায় কামাল

বাবা মায়ের কোলে চড়ে ৯ বছর ধরে বিদ্যালয়ে যাচ্ছে শারীরিক প্রতিবন্ধী কামাল (১৭)। কোনো দিন মা, আবার কোনো দিন বাবা কামালকে কোলে নিয়ে বিদ্যালয়ে আনা-নেওয়া করেন। শারীরিক প্রতিবন্ধী ছেলের পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ দেখে দিনমজুর বাবা-মা শত কষ্ট হলেও সন্তানের পাশে রয়েছেন। একটি হুইল চেয়ার হলে কামাল নিজেই স্কুলে আসা-যাওয়া করতে পারবে। 

কামাল উপজেলার বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের পশ্চিম বোড়াগাড়ী সবুজপাড়া গ্রামের মো. আফছার আলী ও করিমুন বেগম দম্পতির বড় ছেলে। সে বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পশ্চিম বোড়াগাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র।

কামালের বাবা বলেন, ছেলেটা জন্মের পর ভালো ছিল। দুই বছর পর একদিন হঠাৎ কামালের শরীরে জ্বর আসে। স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা করি, কিন্তু জ্বর কমে না। পরে ডাক্তার রংপুরে চিকিৎসার জন্যে পাঠালে রংপুর ব্র্যাক হাসপাতালে ভর্তি করি। সেখানে জ্বর কমলেও কামালের হাত-পা বাকাঁ হয়ে যায়। ব্র্যাকে ৩ বছর ধরে চিকিৎসা করা হলেও হাত পায়ের হাঁড়গুলো সোজা হয়নি। সেখানকার ডাক্তার উন্নত চিকিৎসার জন্য দিল্লিতে নিয়ে চিকিৎসা করাতে বলেছেন। কিন্তু আমি দিনমজুর বাবা, আমার পক্ষে দিল্লিতে চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। 

তিনি বলেন, ছেলেটা অর্থের অভাবে প্রতিবন্ধী হয়ে গেলো। কামাল স্কুলে পড়ে। আমরা দুজন মানুষ (স্বামী-স্ত্রী) যে যেদিন সময় পাই, কোলে নিয়ে কামালের স্কুলে যাওয়া-আসা করি। এখন ছেলে বড় হয়েছে, আমাদের কষ্টগুলো বুঝতে শিখেছে। তাই সে নিজেই হুইল চেয়ারে বসে স্কুলে যেতে চায়। হুইল চেয়ার কেনার টাকা না থাকায় আমি একটি হুইল চেয়ারের জন্যে ছেলেকে কোলে নিয়ে সরকারি দপ্তরসহ জনপ্রতিনিধিদের কাছে যাচ্ছি। 

কামাল বলে, দিনমজুর পিতা মাতার সময় নষ্ট করে তাদের কোলে চড়ে বিদ্যালয়ে যেতে চাই না। আমার বিশ্বাস, হাত দিয়ে চালানো একটি হুইল চেয়ার হলে, নিজেই চালিয়ে বিদ্যালয়সহ চলাফেরা করতে পারবো। কিন্তু কে দেবে আমাকে? 

পশ্চিম বোড়াগাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিক জেবুন্নেছা বলেন, দারিদ্র্যতা ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কামালের পড়াশোনায় বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। কামালের আত্মবিশ্বাস অনেক বেশি। একটি হুইল চেয়ার হলে নিজেই চলাচল করতে পারবে। 

উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা ফিরোজুল ইসলাম জানান, এখন হুইল চেয়ার আমাদের কাছে মজুদ নেই। বরাদ্দ আসলে তাকে আমরা একটা হুইল চেয়ার দিতে পারবো।

/মাহি/ 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়