ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

তরুণদের ভাবনায় আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস

ইউছুব ওসমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৩৪, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১  
তরুণদের ভাবনায় আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস

গণতন্ত্র মানে জনগণের শাসন। আভিধানিক অর্থে গণতন্ত্র বলতে কোনো জাতিরাষ্ট্রের এমন একটি শাসনব্যবস্থাকে বোঝায়, যেখানে নীতিনির্ধারণ বা সরকারি প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিক বা সদস্যের সমান ভোটাধিকার থাকে। গণতন্ত্রে আইন প্রস্তাবনা প্রণয়ন ও তৈরির ক্ষেত্রে সব নাগরিকের অংশগ্রহণের সমান সু্যোগ রয়েছে, যা সরাসরি বা নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে হয়ে থাকে। 

বর্তমানে গণতন্ত্র বিষয়টি অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। একটি রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক পরিবেশ এবং এর প্রয়োগ সাম্প্রতিক সময়ে তরুণদেরও অনেক আগ্রহী করে তুলছে। আজ ১৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস। জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত দেশগুলোতে গণতন্ত্র সম্পর্কে আগ্রহ সৃষ্টি এবং চর্চাকে উৎসাহিত করার প্রয়াসে ২০০৭ সালে এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস হিসেবে পালনের ঘোষণা দেয় সংস্থাটি। এরপর থেকেই জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোতে প্রতিবছর এই দিনটি অত্যন্ত আড়ম্বরপূর্ণভাবে পালিত হয়ে আসছে। এ দিবসে তরুণদের ভাবনা ও প্রত্যাশা তুলে ধরেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক ইউছুব ওসমান।

গণতন্ত্রের ভিত মজবুত রাখতে হবে

গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বলতে আমরা এটাই বুঝি যে, যেখানে ভোটাধিকারসহ সার্বভৌম ক্ষমতার প্রয়োগে জনগণের অংশ নেওয়ার অধিকার রয়েছে। গণতন্ত্রের ভিত তখনই মজবুত থাকবে, যখন একটি দেশের সব নাগরিক এই অধিকার ভোগ করতে পারবেন। কিন্তু বর্তমান বিশ্বের বহু দেশেই এই অধিকার নানাভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। সব নাগরিকের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতকরণের কথা সংবিধানে লিখিত থাকলেও তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এমনকি গ্রাম ও শহরের মানুষের জীবনযাত্রায়ও বৈষম্য বিরাজ করছে। সেইসঙ্গে শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদি মৌলিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনগণ। 

বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সবার গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করতে না পারলে গণতন্ত্রের ভিত মজবুত রাখা যাবে না। এই ভিত মজবুত রাখতে তরুণ সমাজকে গণতন্ত্রের প্রতি আগ্রহী হতে হবে। এছাড়া সব বৈষম্য দূর করে গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করতে সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। তবেই গণতন্ত্রের ভিত মজবুত রাখা সম্ভব হবে। 

সিদরাতুল মুনতাহা, জবি

তৃণমূলের মোড়ল তন্ত্রের শেষ কোথায়?

জনগণের শাসন গণতন্ত্র পৃথিবীর সর্বোৎকৃষ্ট শাসনব্যবস্থা। বাংলাদেশকেও তাই গণতন্ত্রের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যদিও ৭৫ পরবর্তী সময়ে বন্দুকের নলের নিচে চাপা পড়েছে গণতন্ত্র, জনগণের অধিকার। মুখ থুবড়ে পড়া অবস্থা থেকে বারবার টেনে তোলা হয়েছে এদেশের গণতন্ত্রকে এটা যেমন সত্য, তেমনি নানা কূটিলতার বেড়াজালে এদেশীয় গ্রাম্য মোড়লরা তৃণমূল পর্যায় থেকেই গণতন্ত্রহীনতাকে রূপ দিচ্ছে একপ্রকার বৈধতায়। পরিবারতন্ত্র, মোড়লতন্ত্র ও বৈষম্যর চূড়ান্ত চাপে বার বার বিরূপ পরিস্থিতিতে পড়েছে গণতন্ত্র। সুস্থতার চর্চাটা ঘর থেকেই হওয়া উচিত, ঠিক সেখানটাতেই গলদ। 

অনন্য প্রতীক রাউত, জবি

গণতন্ত্রেই মুক্তি 

গণতন্ত্রের মাধ্যমেই দেশের নাগরিকেরা প্রত্যক্ষভাবে কিংবা নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে নিজেদের সুচিন্তিত মতামত তুলে ধরে। সাধারণ জনগণের মতামতের পরিচায়ক এবং মুক্তির পথ ব্যক্ত করে গণতন্ত্র। এর মাধ্যমেই সংরক্ষিত হয় জনগণের মতামতের স্বাধীনতা রক্ষার অধিকার। গণতন্ত্রই মানুষকে রাষ্ট্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে তোলে, যা রাষ্ট্রের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করে সুষ্ঠু শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলতে ভূমিকা পালন করে। গণতন্ত্রের উদ্ভাবনই জনগণকে কেন্দ্র করে, তাই সবার উচিত গণতান্ত্রিক চেতনাকে ধারণ করা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে দৃঢ় করে শান্তিপূর্ণ দেশ গঠনে সহায়তা করা।

নাজিয়া আফরিন, জবি

তারুণ্যকে বাদ দিয়ে গণতন্ত্র হয় না

বিশ্বে নানা পরিবর্তনের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে যুগে যুগে ভূমিকা পালন করছে তরুণরা। সেটা বিশ্ব মোড়ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও যেভাবে হচ্ছে, একইভাবে হচ্ছে লেটিন আমেরিকার দেশে দেশে, এশিয়া ইউরোপেও। তরুণরা দেখতে চায় সৎ, মেধাবী, আকর্ষণীয়, জবাবদিহিতা, গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা ও গতিশীল রাষ্ট্রব্যবস্থা ও নেতৃত্ব। ডায়নামিক নেতৃত্বও তরুণদের আকর্ষণ করে। যে কোনো কালাকানুন, অবরুদ্ধতা, নিপীড়ন, ধর্মান্ধতা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিশ্বে সব তরুণই উচ্চকিত। তরুণরা স্বপ্ন দেখে নতুনত্বকে জয় করবার।

মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন, জবি

গণতন্ত্রের সীমাবদ্ধতা দূর হোক 

বর্তমান সময়ে গণতন্ত্র সর্বাপেক্ষা ভালো শাসন ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় অনেক সুবিধা থাকলেও কিছুটা সীমাবদ্ধতা লক্ষণীয়। গণতন্ত্রের মাধ্যমে আমরা অদক্ষ লোকদেরকেও শাসন ব্যবস্থায় আসীন হতে দেখি। ফলে সঠিকভাবে দেশ পরিচালনা করা সম্ভব হয় না। অনেকের মতে গণতন্ত্রে সৎ এবং যোগ্য ব্যক্তির স্থান নেই। এমন শাসন ব্যবস্থায় দলীয় রাজনীতির প্রাধান্য থাকায় সৎ ও যোগ্য রাজনীতিমুখী ব্যক্তিরা নির্বাচনে সঠিকভাবে অংশ নিতে পারে না। তাই গণতন্ত্রের নামে কোনো ধরনের অরাজকতার শাসন কায়েম করা যাবে না অবশ্যই, এ ক্ষেত্রে গণতন্ত্রের সীমাবদ্ধতা দূর করতে হবে।

সানজিদা মাহমুদ মিষ্টি, জবি

গণতন্ত্রের চর্চাকে উৎসাহিত করতে হবে

আধুনিক বিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক শাসন ব্যবস্থা হচ্ছে ‘গণতন্ত্র। এই শাসন ব্যবস্থায় জনমত গুরুত্ব পায়। নির্বাচিত শাসকরা জনগণের কাছে দায়ী থাকেন এবং জনকল্যাণে সাধ্যমতো কাজ করে থাকেন। এই ব্যবস্থায় জনগণ সক্রিয়ভাবে রাষ্ট্রীয় কাজে অংশ নিতে পারেন। ফলে জনগণের মধ্যে গণতান্ত্রিক চেতনা, দায়িত্ববোধ, অধিকার সচেতনতা ও দেশব্রতী মনোভাব গড়ে ওঠে। এই ব্যবস্থায় জনগণ চিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ভোগ করে। নানা দলমতের মিলনে কর্মসূচি ও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় বলে একদিকে পরস্পরের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ ও সহনশীলতার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। 

মানুষের অস্তিত্ব রক্ষায় গণতন্ত্র চর্চা বাধ্যতামূলক। সবাইকে গণতন্ত্র বিশ্বাস করতে হবে। কেবল গণতন্ত্রের চর্চাই পারে সুখী, সমৃদ্ধশালী একটি দেশ গড়তে।

আবির হাসান সুজন, জবি

/মাহি/ 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়