ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

কর্মমুখী ও গবেষণা নির্ভর বিশ্ববিদ্যালয় চাই

যোবায়ের ইবনে আলী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৫৬, ২৫ অক্টোবর ২০২১  
কর্মমুখী ও গবেষণা নির্ভর বিশ্ববিদ্যালয় চাই

বিশ্ববিদ্যালয় হলো বিশ্ব মানের বিদ্যালয়। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান, পরিবেশ শিক্ষার্থীদের অনুপাত ও গবেষণার মান হতে হয় বৈশ্বিক মানের। কিন্তু বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চিত্র ভিন্ন। সংখ্যায় ও কলেবরে বৃদ্ধি হলেও সার্বিকভাবে মানের উন্নয়নের জন্য নেওয়া হচ্ছে না যথাযথ ব্যবস্থা। শিক্ষার্থীরা এমন বিশ্ববিদ্যালয় চান না। তবে ‘কেমন বিশ্ববিদ্যালয় চান শিক্ষার্থীরা’ তুলে ধরেছেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী যোবায়ের ইবনে আলী।

‌বিশ্ববিদ্যালয় হবে জ্ঞান চর্চা, গবেষণা এবং মুক্ত গণতন্ত্রের আঁতুড়ঘর

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চেয়েছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কখনো জ্ঞান আহরণ ও বিতরণের উদ্দেশ্যে যান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হবে না, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে মানুষ তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক আতিথেয়তা ও আভ্যন্তরীণ জ্ঞান অন্যদের প্রদান করবে। বিনিময়ে যারা বিশ্ব থেকে উপহার প্রাপ্তির গর্বিত অধিকার অর্জন করবে।

সত্যিই বিশ্ববিদ্যালয় হবে সব দল-মতের উর্ধ্বে উদার গণতান্ত্রিক ক্ষেত্র, এখানের কানায় কানায় জ্ঞান বিচরণ করবে। যেখানে চিন্তা-মতামতের স্বাধীনতা, প্রশ্ন করার পরিসর, বিশ্লেষণের বিস্তার থাকবে সর্বত্র বিরাজমান। গবেষণা ও শিক্ষার পরিবেশ থাকবে, পর্যাপ্ত বরাদ্দ থাকবে। সাইটেশন বা গবেষণার উদ্ধৃতি, গবেষণা প্রবন্ধে চৌর্যবৃত্তি কঠোরভাবে যাচাই করা হবে। 

জার্নাল প্রকাশনা বাড়িয়ে ভালো মানের গবেষকদের উৎসাহিত করতে হবে। বাংলা ভাষা চর্চা বৃদ্ধি করতে হবে। শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ রোধ করতে হবে। ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসন সংকট দূর করতে হবে। হলের ভেতরে ছাত্রদের উন্নত ও মানসম্পন্ন খাবার নিশ্চিতে মনিটরিংসহ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পর্যাপ্ত সাবসিডি দেওয়া নিশ্চিত করতে হবে। ছাত্র, শিক্ষক, ও কর্মকর্তা সুচিকিৎসার ব্যবস্থাসহ চিকিৎসা বা মেডিক্যাল বিষয়ে ব্যাপক উন্নতি সাধনে মনোযোগী হতে হবে। 

যোবায়ের আহমদ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকরা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বাস্তবিক পড়াশোনা ও গবেষণা নির্ভর বিশ্ববিদ্যালয় চাই

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পার করে স্বপ্ন গড়ার সারথি ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে’ প্রবেশ করার জন্য তরুণদের মাঝে স্বপ্ন দেখা শুরু হয়। এরপরই চড়াই-উতরাই করে বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার পর শুরু হয় বিসিএস নামক যন্ত্রটি হাতে পাওয়ার চেষ্টা। রাতের পর রাত, দিনের পর দিন না ঘুমিয়ে সেই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের ডোজ নিতে হয়। কিন্তু আমরা তো জানতাম বিশ্ববিদ্যালয় মানে এমন একটি পরিবেশ, যেখানে নতুন নতুন জ্ঞান তৈরি হয় এবং সৃষ্টি হয়। তাহলে এই জায়গায় এসেও সেই আগের পড়াশোনার আবহ কেন? 

নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় আর না খুলে বরং যেগুলো আছে তাতে শিক্ষা ও গবেষণার উপর গুরুত্বারোপ করা দরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ছাত্রদের কাজ হলো গবেষণা করে বাস্তবিক জীবনের সমস্যা বের করা। সেই সুযোগই যদি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিশ্চিত না করতে পারে, তাহলে বাকি জীবনের ভরণপোষণ চালানোর জন্য বিসিএসকে বেছে নেওয়া শ্রেয় হয় তাদের কাছে। দেশ চালানোর জন্য যেমন প্রশাসনিক সহযোগিতার দরকার, তেমনি গবেষকদের গবেষণাও দরকার। তাই যার যে বিষয়ে আগ্রহ, তাকে সে বিষয়ের সুযোগ করে দেওয়া উচিত। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা খাতে আরও তৎপরতা অবলম্বন জরুরি। তাহলে অচিরেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হবে দক্ষজনসম্পদ গড়ার উপযুক্ত প্ল্যাটফর্ম। 

ফারহানা ইয়াসমিন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় 

সংস্কৃতি ও গবেষণা নির্ভর বিশ্ববিদ্যালয় চাই

দেশের মোট বাজেটের বিপরীতে শিক্ষায় বরাদ্দের হার দক্ষিণ এশীয় মানের তুলনায় বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। গবেষণার তহবিলেও নেই কোনো বরাদ্দ। আবার শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার জন্যও সুষ্ঠু কোনো পরিকল্পনা নেই। সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল একটি নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ।

দেশের একমাত্র অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। মেস ভাড়ার খরচ যোগাতে রাত-দিন ছুটতে হয় টিউশন বা কোনো ইনকামের জন্য। এতে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ছে। এছাড়াও বেশিরভাগ বিভাগেই পড়াশোনার জন্য নেই মনোরম পরিবেশে সমৃদ্ধ শ্রেণিকক্ষ। কেরানীগঞ্জে নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনের পরিকল্পনাও ঝিমিয়ে আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল না থাকলে শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ ঘটে না। খেলাধুলার সুষ্ঠু পরিবেশ শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত জরুরি।

একাডেমিক পাঠদানে শিক্ষকদের আরও আন্তরিক হতে হবে। সভা-সেমিনার শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের খোরাক। গণতান্ত্রিক চেতনাসম্পন্ন ও জ্ঞানমুখী পরিচালনা নীতিমালা প্রবর্তন করার জন্য প্রয়োজনীয় কাজ করতে হবে। সংস্কৃতি ও গবেষণা নির্ভর প্রতিষ্ঠান আগামী প্রজন্মের জন্য খুবই জরুরি।

হাসান ইসলাম শান, দর্শন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় 

পর্যাপ্ত ল্যাব সুবিধা চাই

প্রাথমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের দীর্ঘ অনেকটা যুদ্ধময় পথ পাড়ি দিয়ে মানসম্মত উচ্চশিক্ষার জন্য আসতে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। অনেক পরিকল্পনা, লক্ষ্য নিয়ে নবীনরা বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরু করে। তাদের প্রধান লক্ষ্যে মনোনিবেশ করা তখনই সম্ভব, যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ-পরিস্থিতি তাদের জন্য সহায়ক হবে। অত্যন্ত হতাশাজনক হলেও সত্যি যে, বাস্তবে এর রূপায়ণ অতি নগণ্য। 

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ধাপে ধাপে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে দেখা যায়। ছাত্রজীবনে বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে সবচেয়ে বেশি যেটা প্রয়োজন মনে করি তা ছাত্র-শিক্ষক হৃদ্যতা। শিক্ষকরা হচ্ছেন আমাদের অভিভাবক। মেধা বিকাশের জন্য প্রয়োজন হয় দাতা-গ্রহীতার আন্তরিক বন্ধনের সম্পর্ক। কিন্তু বাস্তবিক ক্ষেত্রে এমন কোনো বন্ধন গড়ে উঠার নজির খুব কম মেলে। 

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদগুলোতে দেখা যায় ল্যাবের সুযোগ-সুবিধা থাকে না; থাকলেও তা অনেক কম। প্রকৌশল কিংবা ল্যাবভিত্তিক বিষয়ে সশরীরে ল্যাব না করে ল্যাব কোর্স শেষ করে দেওয়া চিন্তার বাইরে। এই ভোগান্তি একটা শিক্ষার্থীই বুঝতে পারেন। পাশাপাশি আছে গবেষণার সু্যোগের অভাব। একজন শিক্ষার্থী গবেষণা করতে আগ্রহী হলেও শুধু গবেষণাগারের অভাব এবং অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষকদের সহযোগিতার মানসিকতা না থাকায় তারা এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়।

এছাড়া মানসম্মত শিক্ষক থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের বোধগম্য উপায়ে শিক্ষাদানের আগ্রহে অনীহা। কারণ নিজে জ্ঞানী হওয়া এবং সর্বজনীনভাবে সেই জ্ঞান বিতরণ করে শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলা এক বিষয় নয়। তাছাড়া লাইব্রেরিতে শিক্ষার্থীদের তুলনায় সুযোগ-সুবিধা থাকে অনেক কম; থাকে প্রয়োজনীয় বইয়ের স্বল্পতা।  মানসম্মত বিশ্ববিদ্যাল চাই। 

হাসনা হেনা শ্রাবনী, যন্ত্রপ্রকৌশল বিভাগ, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। 

/মাহি/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়