ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

আবার জমে উঠেছে গল্প আড্ডা খুনসুটি 

ইমন ইসলাম, জাবি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:০৪, ২৫ অক্টোবর ২০২১  
আবার জমে উঠেছে গল্প আড্ডা খুনসুটি 

দীর্ঘ ১৯ মাস পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে সশরীরে ক্লাস ও শ্রেণি কার্যক্রম। ২১ অক্টোবর সকাল থেকেই ক্লাসে আসতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘদিন পর ক্লাসে ফিরতে পেরে উচ্ছ্বসিত সবাই। মুহূর্তেই বিভাগের ক্লাসরুমগুলো শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে। 

বিভাগের করিডোর, বেলকনি এখন শুধুই শিক্ষার্থীদের পদভারে পূর্ণ। দীর্ঘদিন পর সহপাঠীদের কাছে পেয়ে সবাই মেতে উঠেছে আনন্দ-উল্লাসে। কেউবা আবার সেলফি তুলে সোনালি সেই সময়টুকু স্মৃতির পাতায় বন্দি করে রেখেছেন।

শিক্ষার্থীদের কলরবে প্রাণ ফিরেছে ক্যাম্পাস অঙ্গনে। পিচঢালা পথ আবারও শিক্ষার্থীদের পদধূলিতে প্রাণ পেয়েছে। টিএসসি ক্যাফেটেরিয়ায় আবারও বসেছে পুরনো সেই খুনসুটি আর গল্প আড্ডা। 

করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর গতবছর ১৮ মার্চ বন্ধ হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। নানা সতর্কতা অবলম্বন আর শিক্ষার্থীদের টিকাদান ক্যাম্পেইন শুরুর পর সেদিন আবার শুরু হলো সশরীরে শ্রেণি কার্যক্রম। বেশ কিছু বিভাগ ঘুরে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাসে উপস্থিত হয়েছেন। সশরীরে ক্লাস করতে পেরে খুশি শিক্ষার্থীরা। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের সভাপতি ও সহকারী অধ্যাপক শেখ আদনান ফাহাদ বলেন, ‘দীর্ঘ দেড় বছর আমরা শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুমে পাইনি। তবে অনলাইনে আমাদের শ্রেণি কার্যক্রম চালু ছিল। শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরেছে। ক্লাসের যে আনন্দ-উল্লাস আমরা এতদিন মিস করছিলাম, তা আবারও ফিরে পেলাম। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য রক্ষায় আমরা যথেষ্ট প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হাত ধোয়ার বেসিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এক ডোজ করোনা টিকা কার্ড দেখানোর ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুমে আনা হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের নো মাস্ক, নো এন্ট্রি বোঝাতে সক্ষম হয়েছি।’

‘বিভিন্ন ব্যাচের অনলাইন পরীক্ষা চলমান থাকায় আমরা অনলাইন ও অফলাইন বাস্তবতাকে সামনে রেখেই শ্রেণিকার্যক্রম পরিচালনা করবো’, বলেন তিনি। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান তৃণা বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর সেই পরিচিত মুখ, সেই পরিচিত ক্যাম্পাস! এ যেন বসন্তের নতুন অনুভূতি। সব প্রকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে ক্লাস। শিক্ষকেরা আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করে নিলেন আমাদের। আশা করি আর কোনো বাধা-বিপত্তি আসবে না আমাদের জীবনে।’

পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী জাকিয়া সুলতানা পিংকি বলেন, ‘সহপাঠী বন্ধুদের সাথে আবারও ক্লাস করতে পারছি। এছাড়াও বিভাগের শিক্ষকদের সাথে দেখা হয়েছে। সব মিলিয়ে খুব ভালো লাগছে। প্রিয় বিভাগে ফিরতে পেরে বেশ আনন্দ লাগছে।’ 

অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী কাকলি আক্তার বলেন, ‘অনলাইন ক্লাসে অনেক শিক্ষার্থীই বেশকিছু সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে। এখন আর সেসব সমস্যা হবে না। তাছাড়া দীর্ঘদিন পর ক্লাসে ফিরতে পেরে, সবার সাথে পুনরায় দেখার হওয়ার পর ভালো লাগছে।’

সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী সুবর্ণা আক্তার বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ক্লাসের আগের রাতের মতো গত রাতে খুশিতে ঘুম হয়নি। সকাল থেকেই মনটা খুব ফুরফুরে ছিল। দীর্ঘ ১৯ মাস পর ক্লাসে ফিরেও মনে হচ্ছিল আমি প্রথম বর্ষে পড়ি। ডিপার্টমেন্টেও প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের মতো ফুল ও চকলেট দিয়ে বরণ করা হয়েছে। এতদিন পর প্রিয় ক্যাম্পাস, শিক্ষক আর বন্ধুবান্ধবদের কাছে থেকে দেখে খুব ভালো লেগেছে। সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছি।’

এদিকে, করোনাকালীন সময়ে বেশ কয়েকটি বিভাগ অনলাইনে চূড়ান্ত পরীক্ষাগুলো নেওয়া শেষ করেছে। বাকি থাকা বিভাগগুলোর চূড়ান্ত পরীক্ষা সশরীরে নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। 

লেখক: শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

/মাহি/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়