ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

মাদরাসাছাত্র মোস্তাকিমের ফ্রিল্যান্সিংয়ে ভাগ্য বদল 

এম এম আরিফুল ইসলাম, নাটোর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৫৪, ১৩ নভেম্বর ২০২১   আপডেট: ১৬:৫৭, ১৩ নভেম্বর ২০২১
মাদরাসাছাত্র মোস্তাকিমের ফ্রিল্যান্সিংয়ে ভাগ্য বদল 

মোস্তাকিম জনি

ঘরে বসেই বিদেশি সব চাহিদার কাজ সম্পন্ন করছেন। এই কাজের বিনিময়ে পাচ্ছেন অর্থ। তবে এই অর্থ দেশের টাকা নয়। আসছে বৈদেশিক মুদ্রা রূপে। ফ্রিল্যান্সিংয়ের এই আয় বদলে দিয়েছে বেকার মোস্তাকিম জনিদের ভাগ্য। ঘরে ফিরেছে সচ্ছলতা।

শুধু মোস্তাকিম জনি একা নন। গুরুদাসপুরেই তার মতো প্রায় হাজার খানেক যুবক এভাবেই ঘরে বসে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে প্রতি মাসে শত শত ডলার আয় করছেন। মোস্তাকিম জনির বাড়ি নাটোর জেলার গুরুদাসপুরের সীমান্ত নাছিয়ারকান্দী গ্রামে।

মোস্তাকিম শুরুতে মাইক্রোসফট অফিস অ্যাপ্লিকেশনের ওপর ক্লাস নিতেন। কিন্তু তাতে দিনাতিপাত হচ্ছিল না। একারণে আয়ের বিকল্প চিন্তা ঘিরে ধরে। সেসময় নতুন করে ডিজিটাল মার্কেটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং, ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্টের মতো কাজ তিনি রপ্ত করেন। এরপর ২০১৭ সালে শুরু হয় তার ফ্রিল্যান্সিং জগতের কর্মযজ্ঞ। 

তিনি বলেন, ‘ফ্রিল্যান্সিংয়ে প্রবেশ করে আমি সফল হয়েছি। ঘুঁচছে সংসারের অভাবও। এখন সংসারের চাহিদা পূরণ করে নিজের লেখাপড়ার খরচ চালাই। আমি বর্তমানে চট্টগ্রামের হাটহাজারি মাদরাসায় মিসকাতে পড়ছি। সহায়তা পেলে ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য বড় ইনস্টিটিউট গড়তে চাই।’

মোস্তাকিমের বাবা লোকমান হোসেন জানালেন, তিন ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে তার সংসার। তিনি পেশায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছিলেন। এলাকায় ক্রোকারিজের ব্যবসা করলেও বয়সের ভারে এখন পারছেন না। কিন্তু ওই সীমিত আয়ে তিন ছেলের লেখাপড়া এবং সংসারের খরচ বহন করা কষ্টসাধ্য ছিল।

মেঝ ছেলে মোস্তাকিম জনি কওমি মাদরাসায় লেখাপড়া করলেও ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে আয় শুরু করেন। মূলত তারপর থেকেই সংসারে অভাব দূর হতে থাকে। ফ্রিল্যান্সিংয়ের অর্থে তারা এখন স্বাবলম্বী। গুরুদাসপুরের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক সহকারী প্রোগ্রামার মো. শাহিনুর ইসলাম জানান, তাদের অফিসের হিসাব মতে, গুরুদাসপুর উপজেলার প্রায় ১ হাজারের বেশি শিক্ষিত যুবক ঘরে বসেই ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে ব্যাপক বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছেন।

আগামী এক বছরে ফ্রিল্যান্সার বৃদ্ধি পাবে অধিক হারে। তবে সরকারিভাবেও এসব ফ্রিল্যান্সারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। পাশাপাশি নতুনদের ফ্রিল্যান্সিংয়ে আসার জন্য উৎসাহি করতেও কাজ করা হবে।

আরেক ফ্রিল্যান্সার আবু সাঈদ বলেন, ‘ছোট অফিসে তার অধীনে অন্তত ২০ জন তরুণ ফ্রিল্যান্সিংয়ে যুক্ত রয়েছেন। মূলত বিদেশিদের দেওয়া চাহিদার ভিত্তিতে তারা ওয়েব ডিজাইন, ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিক্স, কিওয়ার্ড রিসার্চ, এসইও, সোসাল মিডিয়া মার্কেটিং, গুগল অ্যানালাইটিকসহ নানা ধরনের কাজ করে থাকেন। কয়েক ঘণ্টার কাজে প্রতিটি চাহিদায় ন্যূনতম ১০০ ডলার আয় হয়। এই আয়ে যেমন বেকারত্ব দূর হচ্ছে, তেমনি দেশের রেমিট্যান্সও বাড়ছে।’ 

গুরুদাসপুরের সরকারি বিলচলন শহীদ সামসুজ্জোহা কলেজের আইসিটি বিষয়ের শিক্ষক প্রশান্ত কুমার বলেন, ‘গুরুদাসপুরের বহু যুবক এখন ঘরে বসেই ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে আয় করে বেকারত্ব দূর করছেন। চাকরির পেছনে ছোটাছুটি না করে শিক্ষিত যুবকরা ফ্রিল্যান্সিংয়ে প্রবেশ করলে এই খাত থেকে বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করার সম্ভাবনা রয়েছে।’

/মাহি/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়