ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বেরোবি এলাকায় একা পেলেই চুরি-ছিনতাই 

কেএম হিমেল আহমেদ, বেরোবি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩৫, ২ ডিসেম্বর ২০২১   আপডেট: ১২:১৮, ২ ডিসেম্বর ২০২১
বেরোবি এলাকায় একা পেলেই চুরি-ছিনতাই 

কখনো সকালে জগিং করতে গিয়ে আবার সন্ধ্যার পর ক্যাম্পাস এলাকায় বের হয়ে, টিউশন করিয়ে ফেরার পথে ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে মোবাইল, ল্যাপটপ ও সঙ্গে থাকা টাকা-পয়সা। প্রথমে দিতে অস্বীকার করলে ছুরিকাঘাত করে ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে এসব। এমনটাই অভিযোগ করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ভুক্তভোগী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।  তারা বলছেন, এখন আমরা এক প্রকারের জিম্মি। একা একা বের হতে পারি না। যেমন জানের ভয়, তেমন মালের।   

বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় (বেরোবি) এসব এখন নিত্য দিনের ঘটনা। অস্ত্র ঠেকিয়ে করা হচ্ছে সর্বস্ব লুট। এসবকিছুর পরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা তেমন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। ছিনতাইয়ের স্পট হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক গেটের (১নং) সামনে, মর্ডান থেকে পার্ক মোড় সড়ক, লালবাগ থেকে পার্ক মোড় সংলগ্ন রাস্তা ও বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিভিন্ন মেসের অলিগলি। 

এদিকে গত ২৬ নভেম্বর ছিনতাই হয়েছে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মাহরুফা আফরোজ মিরা মেসে যাওয়ার পথে একাডেমিক গেটের (১নং) সামনে ছিনতাইয়ের শিকার হন। এক যুবক ব্যাগ কেড়ে নিয়ে ব্যাগ ছিড়ে এন্ড্রয়েড মোবাইল নিয়ে পালিয়ে যায়।

মাহরুফা আফরোজ মিরা বলেন, ক্যাম্পাস থেকে মেসে যাওয়ার সময় একাডেমিক গেটের সামনে একা পেয়ে আমার ব্যাগ ও মোবাইল কেড়ে নেয় এক অপরিচিত যুবক। আমি খুবই ভয় পেয়েছিলাম। পরে পুলিশ ও প্রক্টর স্যারকে বিষয়টি জানিয়েছি।

এর আগে ৯ সেপ্টেম্বর ৪ ঘণ্টার ব্যবধানে জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী পরাগ মাহমুদকে রাত আড়াইটায় বেরোবি একাডেমিক গেটের (১নং) সামনে এবং বেরোবির ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক মনিরুজ্জামানকে পার্কমোড়-লালবাগ রাস্তায় সকাল ৬টায় জগিংরত অবস্থায় নৃশংসভাবে ছুরিকাঘাত করে ছিনতাই করে। শিক্ষক মনিরুজ্জামানকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে এবং শিক্ষার্থী পরাগ মাহমুদকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিতে হয়।

এছাড়া গত ২০ আগস্ট ভোরবেলা রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন 'শামস ভিলা' ছাত্রাবাসের তালা ভেঙে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুল হুদা এবং ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের একই বর্ষের শিক্ষার্থী মাসুদ রানাকে রুমে ঢুকে তাদের উপর দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে মোবাইল ও সাথে থাকা টাকা পয়সা নিয়ে যায়।

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় দায়িত্বরত সাব ইন্সপেক্টর ইজার আলী বলেন, ‌‘সাম্প্রতিক সময়ে ছিনতাইয়ের অন্যতম কারণ মাদক সেবনের অর্থ সংগ্রহ, যুবকদের মাদকের অর্থ সংকট হলেই ছিনতাই করছে। এছাড়াও ছিনতাইয়ের জন্য ব্যক্তিগত কারণ, পূর্ব শত্রুতা ও অন্যান্য কারণ থাকতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পুলিশের টহল পার্টি থাকে। তারা সবসময় মুভমেন্ট করে, এরই মধ্যে যে কোনো সময় এ অপকর্মগুলো ঘটতেছে। এর আগে তাৎক্ষণিকভাবে আমরা ছিনতাইকারীদের অ্যারেস্ট করেছি, ছিনতাইয়ের মালামাল উদ্ধার করেছি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও সমাজকর্মী উমর ফারুক বলেন, ‘করোনার কারণে নতুন করে ২ কোটি ৪৫ লাখ মানুষের আয় দারিদ্র্য সীমার নীচে চলে এসেছে। প্রায় ১ কোটি মানুষ কর্ম সংস্থান হারিয়েছে। ফলে বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান না থাকায় কিছু মানুষ বিপদগামী হয়ে উঠেছে ও আয়ের জন্য অসৎ পথ অবলম্বন করছে। অন্য একটি কারণ, সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের এই অঞ্চলে নেশা ও জুয়া দুটোই বেড়েছে। নেশা করার টাকার প্রয়োজনে যুবকরা ছিনতাইয়ের পথ বেছে নিচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ সমস্যা সমাধানে দুইটি কাজ করা যেতে পারে। যেসব মানুষ কর্মসংস্থান হারিয়েছে, তাদের সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে নিয়ে আসা, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। অপরটি হচ্ছে অপরাধ সংগঠিত হওয়া এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর গোলাম রব্বানী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ খুবই তৎপর। বাড়তি নিরাপত্তার জন্য ক্যাম্পাসে সার্চলাইট বসানো হয়েছে। পুলিশকে টহলে জোরদার করতে বলা হয়েছে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় প্রাচীর থেকে বাইরের দিকে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের জন্য ডিআইজি’র সাথে কথা বলেছি।’

/মাহি/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়