ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

মানবিক উদাহরণ হতে চান আহমেদ সৌরভ

কাব্য সাহা, এসইউবি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৫৯, ২ ডিসেম্বর ২০২১  
মানবিক উদাহরণ হতে চান আহমেদ সৌরভ

আহমেদ সৌরভ

মানবসেবায় এগিয়ে আসবেন এমন মানুষের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমছে। ডিজিটালাইজেশনের এই সময়ে মানুষ খুব নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। নানা রকম ডিভাইস, প্রযুক্তির নতুনত্বের সাথে নিজেরাও যেন মেশিনম্যান হয়ে যাচ্ছেন। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে এমনটাই হওয়ার কথা এবং হচ্ছেও তাই। ব্যতিক্রম মানুষের সংখ্যাও কিন্তু সমাজে চোখে পড়ে। এমন একজন মানবিক উদাহরণ হলেন আহমেদ সৌরভ। 

ফরিদপুর জেলায় জন্ম তার। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ফরিদপুর জিলা স্কুল ও সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ থেকে তিনি সফলতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। বর্তমানে তিনি ফরিদপুর ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন মেডিক্যাল কলেজ হসপিটালের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। ভবিষ্যৎ মানবতার সেবক অর্থাৎ ভবিষ্যত ডাক্তার হিসাবেও তাকে আখ্যায়িত করা যেতে পারে। মূলত স্কুল জীবন থেকেই তার ভীষণ স্বপ্ন মানুষের জন্য কিছু করার। যারা সমাজে অবহেলিত, সুবিধাবঞ্চিত তাদের নিয়ে কিছু করা। 

তার এই ভাবনায় প্রাণ দিয়েছেন তার মা। ছোটবেলায় মায়ের কাছ থেকেই তিনি মানবসেবা দেখেছেন ও শিখেছেন কিভাবে মানুষের মুখে হাসি ফোঁটানো যায়। বাসার সামনে কোনো মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষ বা ক্ষুধার্ত মানুষ আসলে তার মা খাবার না দিয়ে কখনো ফেরাতেন না, মাঝেমাঝে নিজেকে দিয়েও খাবার পাঠাতেন, কিন্তু ভারসাম্যহীন মানুষ হলেও কেনো যেন ভয় তাকে ছুঁতে পারতো না, মানুষ হয়ে অন্য মানুষকে সহযোগিতা করার যে মানসিকতা, তা পরিবার থেকেই পেয়েছেন তিনি। যতটুকু সুযোগ পান মানুষের স্বাস্থ্যসেবাসহ অভুক্তদের খাওয়ান। ডাক্তারি পড়ছেন সেখানেও রয়েছে মহৎ এক উদ্দেশ্য, গরিব মানুষের সেবা করতে হবে, গরিবের ডাক্তার হতে হবে, এমন স্বপ্নের বুনছেন তিনি। 

আহমেদ সৌরভ যখন দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়েন, তখন একজন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষ রোজ তাদের বাসার সামনে আসতো, তার মা তাকে দিয়েই ভাতের প্লেট, পানির গ্লাস দিতেন, তিনি নির্ভয়ে মানুষটির পাশে দাঁড়াতেন, কিছু লাগবে কিনা জিজ্ঞেস করতেন। তখন থেকেই মানুষের জন্য কাজ শুরু হয়। তখন হয়তো বড় পরিসরে কিছু করা সম্ভব ছিল না। পরবর্তী সময়ে তিনি যোগ দেন স্কুল ক্লাব, স্কাউটে, রেড ক্রিসেন্টে সোসাইটিতে, এখনো রেড ক্রিসেন্টে সোসাইটির সদস্য আছেন তিনি। এরপর ২০১৫ সালের শেষে এসে নিজের সংগঠন তৈরি করেন।

স্কুলজীবন থেকেই নানাভাবে টাকা জমিয়ে একটু একটু করে শুরু করেন মানুষের জন্য কিছু করার সেই প্রয়াস। সংগঠনের নাম দিয়েছেন ‘আমরা করবো জয়’। এর লক্ষ্য হতদরিদ্র পরিবারের পাশে থেকে সহযোগিতা করা। নানা সফল প্রজেক্ট সম্পন্ন করেন এই সল্প সময়ের মধ্যে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- গৃহহীনদের গৃহ নির্মাণ, প্রতিবন্ধীদের মধ্যে হুইল চেয়ার বিতরণ, দারিদ্য বিমোচনে রিকশা কিংবা নৌকার ব্যবস্থা করে দেওয়া। এভাবেই নানা কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে আহমেদ সৌরভের হাতে তৈরি ‘আমরা করবো জয়’। 

শুধু তাই নয়, তার হাতে তৈরি আরও বেশ কিছু সংগঠন রয়েছে, যেখান থেকে রোগ বিবেচনায় সঠিক ডাক্তারদের পরামর্শ পেতে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়ে থাকে। এছাড়াও পশু-পাখিদের জন্যও তার ভালোবাসার কমতি নেই।  ‘এনিমেল লাভার’ নামে তার একটি গ্রুপ রয়েছে, যেখান থেকে অসুস্থ পশুর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়, তাদের আহারের ব্যবস্থা করা হয় এবং কেউ কোনো প্রাণিকে দত্তক নিতে চাইলে সেই সুযোগও রয়েছে।

বলতে হয়, পিছিয়ে পড়া মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ নিয়েই স্বপ্ন দেখেন তরুণ শিক্ষার্থী আহমেদ সৌরভ। তিনি আশা করেন, একদিন তার হাতেই গড়ে উঠবে ব্যতিক্রমধর্মী একটি হাসপাতাল। যেখানে প্রাধান্য পাবে অবহেলিত, চিকিৎসাবঞ্চিত মানুষ। এভাবেই তার স্বপ্নগুলো একদিন লক্ষ্যে জায়গা করে নেবে। তার কাছ থেকেই মানবসেবার শিক্ষা নেবে সমাজ।

লেখক: শিক্ষার্থী, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।

/মাহি/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়