ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

সেদিন লালন শাহের খোঁজে

আবু সোহান, ইবি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২৪, ৫ ডিসেম্বর ২০২১  
সেদিন লালন শাহের খোঁজে

সারারাত জেগে ভোর রাতে বেশ এক ঘুম ঘুমিয়েছি। সকাল সাড়ে ৭টায় শারমিনের ফোনকলে ঘুম ভাঙলো। কল রিসিভ করলাম। জানতে পেলাম ইঠাৎ প্ল্যান করা হয়েছে ঘুরতে যাবে। তার কথা মতো কোনোরকম সেজে ডায়না চত্বরে গেলাম। দেখি শারমিন, হিয়া, লিজা, পৌষি, আশিক শর্মা, আরফান ও আবু উবায়দা দাঁড়িয়ে আছে। 

পৌঁছানো মাত্রই সবাই স্বাগতম জানানো বাদ দিয়ে মোটা মোটা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বুঝতে পেলাম দেরী করে ফেলেছি, অপরাধীর মতো দুঃখ প্রকাশ করে ক্যাম্পাসের লাল ডাবল ডেক বাসের উপর তলায় উঠলাম। বাসে ওঠে প্রত্যেকের উদ্দেশ্য জানতে চাইলাম, প্ল্যান কী, গন্তব্য কোথায়। ওরা বিরক্ত নিয়ে বললো লালন শাহের মাজারে যাচ্ছি। খুশি মনে স্বস্তি নিয়ে তখন একটু নড়েচড়ে বসলাম। 

সকাল ১১টা ১০ মিনিটে আমাদের কাঙ্ক্ষিত স্থানে পৌঁছালাম। লালন শাহের মাজারে যেতেই আমাদের কানে ঢোল, তবলা, হারমনি, গিটার ও দোতারার সুর বেজে উঠলো। সবাই একযোগে উৎসুক ও কৌতুহল মন নিয়ে সেদিকে ছুটে গেলাম। তাদের কাছে গিয়ে দেখি ভক্তরা লালনের গান চর্চা করছেন। এক দম্পতি পর্যটকের অনুরোধে এবং লালন ভক্তদের সম্মতিতে তাদের বিছানো শীতল পাটিতে বসে পড়লাম। তাদের বেশভূষা দেখেই উপলব্ধি করলাম তারা লালনকে কতটা অনুসরণ করেন। 

ফকিররা আমাদের সান্নিধ্য পেয়ে একযোগে বাদ্যযন্ত্রগুলো বাজিয়ে ‘মিলন হবে কত দিনে, আমার মনের মানুষের সনে’ এই গানটা গলা ছেড়ে দিয়ে উচ্চস্বরে গাইলেন। যখন তাদের সাথে তাল মিলিয়ে আমরা গান গাইতে ব্যস্ত, তখন আবু উবায়দা লালনের বিষয়ে খুঁটিনাটি জানতে খাতা-কলম নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে ব্যস্ত।

আবু উবায়দার অনুরোধে আমরা লালনের স্মৃতি রক্ষার্থে নির্মিত মিউজিয়ামে প্রবেশ করলাম। মিউজিয়ামে ঢুকে সে লালন সম্পৃক্ত সংগৃহীত তথ্য আমাদের বলতে লাগলো। লালন শাহ ১৭ অক্টোবর ১৭৭২ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৭ অক্টোবর ১৮৯০ সালে মৃত্যুবরণ করেন। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী একজন বাঙালি, যিনি ফকির লালন, লালন সাঁই, লালন শাহ, মহাত্মা লালন ও সাঁইজি নামে পরিচিত। তার কাছ থেকে আরও জানতে পেলাম, বসন্ত রোগে আক্রান্ত অবস্থায় লালন শাহকে এক দম্পতি কালী নদীতে কুড়িয়ে পান। তার পালিত বাবা-মায়ের নাম ছিল ‘মাওলানা মলম শাহ’ ও ‘মতিজান বিবি’। 

লালন শাহ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন নি, সেজন্য তার মুখের কথাগুলো ‘পণ্ডিত মানিক শাহ ফকির ও ফকির মনিরুদ্দিন শাহ’ লিখে দিতেন। মিউজিয়ামের ভেতরে লালন ফকিরের ব্যবহৃত একতারা, চৌকি, দরজা এবং বেশকিছু আঁকানো ছবি দেখতে পেলাম। ছবিগুলো লালন ফকিরের জীবনবৃত্তান্ত ফুটিয়ে তুলেছে, সেটা বুঝতে মোটেও দেরী হলো না। ছবিগুলোর মধ্যে লালন শাহের জীবদ্দশায় জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকানো একমাত্র স্কেচও দেখতে পেলাম।

যখন আমরা মিউজিয়ামে ছবি তুলতে ব্যস্ত, তখন পৌষি হাত ঘড়ি দেখে বললো ক্যাম্পাস বাসের সময় হয়ে গেছে। আমরা তাড়াহুড়ো করে লালনের গান গাইতে গাইতে লাল-নীল স্বপ্নের ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে কাটানো স্মৃতিময় এই সময়টুকু আমার মুখে আজীবন হাসি হয়ে থাকবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।

/মাহি/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়