ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

মেডিক্যালে ভর্তি অনিশ্চিত সাকিবের 

আবু নাঈম, পঞ্চগড়  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:১৪, ১৭ এপ্রিল ২০২২  
মেডিক্যালে ভর্তি অনিশ্চিত সাকিবের 

সাকিবের বাবা মজনু মিয়া

ভ্যানচালক মজনু মিয়া। দিনভর ভ্যান চালিয়ে যা রোজগার করেন, তা দিয়েই চালান সংসার। টানাপোড়েনের সংসারেও সন্তানদের নিয়ে মজনু মিয়ার স্বপ্ন যেন সীমাহীন। আর স্বপ্ন যখন সফল হওয়ার পথে, তখন তার কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ।

মজনু মিয়ার দুই ছেলে এক মেয়ে। বড় ছেলে সাকিব হাসান এবছর মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। খবরটি আনন্দের হলেও ছেলের প্রাথমিক ভর্তি খরচের চিন্তাই ভ্যানচালক মজনু মিয়াকে দিশেহারা করছে। অর্থের অভাবে ছেলেকে ভর্তি করা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন তিনি। ছেলের চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরণে বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।

মজনু মিয়ার বাড়ি পঞ্চগড় সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নের জমাদারপাড়া গ্রামে। ভিটে বাড়ির ১০ শতক জমি আর রোজগারের চার্জার ভ্যান ছাড়া কোনো সম্পদ নেই তার।

জানা গেছে, এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার মেধা তালিকায় সাকিবের অবস্থান ৩৫৩৬। তালিকা অনুযায়ী, সাকিব সুনামগঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।

মজনু মিয়া বলেন, ‘ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ আর সংসারের ব্যয় বহনের একমাত্র মাধ্যম আমার ভ্যান গাড়িটি। সন্তানের পড়াশোনার খরচ চালাতে গিয়ে সবসময় হিমশিম খেতে হয়েছে আমাকে। ভ্যান নিয়ে একদিন বের না হলেই সংসার খরচে টান পড়ে। অর্থনৈতিক দুরবস্থার মধ্যেও সন্তানের পড়ালেখায় উৎসাহ দিয়েছি। এখন একটাই স্বপ্ন ছেলেকে চিকিৎসক বানানো। এজন্য আমি সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাবো। তবে সমাজের বিত্তবান কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এলে ছেলের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে।’

মজনু মিয়ার স্ত্রী বলেন, ‘অন্য দশজনের মতো আমার ছেলের পেছনে তেমন খরচ করতে পারিনি। এত কষ্টের মধ্যেও সে এত দূর এগিয়ে গেছে, এ জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। ছেলেকে ডাক্তারি পাস করাতে পারলে আর কোনো চাওয়া নাই। এজন্য তো অনেক টাকা দরকার হবে। এত টাকা কোথায় পাবো, এই চিন্তাই এখন বেশি।’

সাকিব বলেন, ‘অক্লান্ত পরিশ্রম করে বাবা-মা এত দূরে এনেছেন। চিকিৎসক হয়ে বাবা-মাসহ অসহায় মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখবো। বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণে সবার কাছে দোয়া চাই।’

সাকিব ২০১৯ সালে স্থানীয় শালমারা ভিতরগড় উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর ২০২১ সালে মকবুলার রহমান সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। দুটোতেই জিপিএ-৫ ছিল তার।

শালমারা ভিতরগড় উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক জমির উদ্দীন বলেন, ‘সাকিব অত্যন্ত নম্র, ভদ্র এবং মেধাবী ছেলে। ওর বাবা অনেক কষ্ট করে ভ্যান চালিয়ে ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার খরচ জোগান। এমন প্রত্যন্ত এলাকা থেকে অভাব-অনটনের মধ্যেও সাকিবের মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগ আমাদের জন্যও আনন্দের। তার সাফল্যে আমরা বিদ্যালয়ের সবাই খুশি।’

/মাহি/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়