ঋতুচক্র: গবিতে সচেতনতা কতটা
গবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
ছবি: সংগৃহীত
বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষে পাঠ নিচ্ছিলেন লাবনী আক্তার (ছদ্মনাম)। সেখানেই হঠাৎ টের পান ঋতুস্রাব শুরু হয়েছে। সঙ্গে প্যাড না থাকায় ক্লাস শেষ হলেও ওভাবেই চুপচাপ বসে থাকেন তিনি। পরে এক সহপাঠীর কাছে থাকা প্যাড নিয়ে সেটিই ব্যবহার করেন।
গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীর মতে, ঋতুস্রাব শুরু হওয়া থেকে প্যাড পাওয়ার সময়টুকু এক ভীষণ আতঙ্কে কেটেছে তার। শুধু লাবনী নন, এমন পরিস্থিতিতে প্রায়ই পড়তে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া বহু নারী শিক্ষার্থীকে।
এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানান শিক্ষার্থীরা। অপরদিকে, শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুবিধায় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
কথা হয় একাধিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। তারা জানান, বর্তমানে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই স্যানিটারি প্যাডের ভেন্ডিং মেশিন বসানো হচ্ছে। বাথরুমগুলো আরো ব্যবহার উপযোগী করা হচ্ছে। ফলে প্রশাসনের উচিৎ সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া।
গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী লাবনী আক্তার (ছদ্মনাম) বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর পিরিয়ড হওয়াটা খুবই বিব্রতকর। খুব লজ্জায় পড়ে গিয়েছিলাম। সঙ্গে প্যাড না থাকায় উঠতেই ভয় কাজ করছিল। বাথরুম পর্যন্ত যাওয়ারও সাহস পাচ্ছিলাম না। এমনকি কাছাকাছি কোন দোকানও নেই যে কিনে আনাবো কাউকে দিয়ে। পরে এক বান্ধবী তার কাছে থাকা প্যাড দিলে সেটি ব্যবহার করি। যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে কোনো ব্যবস্থা থাকতো খুব ভালো হতো। এরকম ভয়ের পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না।
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী রাজিফা ইয়াসমিন জয়া বলেন, যেহেতু যুগ বদলাচ্ছে সেহেতু নারী স্বাস্থ্য নিয়ে আমাদের খোলামেলা কথা বলা উচিত। এটা কোনো ট্যাবু নয়। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই এখন প্যাড ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন করা হচ্ছে। আমাদের এখানেও ব্যবস্থা করা হলে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হতো। এ ছাড়া বাথরুমেও যথাযথ ব্যবহারের উপায় নেই। প্রায় সময়ই অপরিষ্কার থাকে, ময়লার ঝুড়ি থাকে না। অধিকাংশ পানির ট্যাপগুলো ভাঙা। বেশ কয়েকবার বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীনও হতে হয়েছে। ফলে এসব দ্রুত ভালো হওয়া প্রয়োজন। অন্তত হাইজিনটুকু মেইনটেইন করা প্রয়োজন।
ফিজিওথেরাপি বিভাগের প্রধান নাসিমা আক্তার বলেন, আমার কাছে মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই বিষয়গুলো নিয়ে মাঝে মাঝে সেমিনার, কর্মশালা এসব করার ব্যবস্থা করা উচিত। ঋতুচক্র কী, এটা হলে শারীরিক ও মানসিক কী কী পরিবর্তন হয়- এসব বিষয়ে সবাই-ই অবগত হবে। কেননা বয়ঃসন্ধিকালে শুধু মেয়েদেরই পরিবর্তন হয় এমন তো না, ছেলেদেরও তো হয়। এটা আলাদা করে না দেখে তাদের উপস্থিতিতে এসব নিয়ে আলোচনা/সেমিনার করলে, ছেলে-মেয়ে উভয়ই শিখবে, জানবে। বিষয়টা তাদের কাছে স্বাভাবিক হবে। প্রত্যেকটা বিভাগে বাথরুমে, বাথরুমের সামনে ঋতুচক্র নিয়ে, এসময়ে সচেতনতা নিয়ে বিভিন্ন ব্যানার-ফেস্টুনের মাধ্যমে মেয়েদের বার্তা দেওয়া সম্ভব।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটা ফিমেইল টয়লেট পিরিয়ড ফ্রেন্ডলি হওয়া উচিত। সেখানে প্রয়োজনীয় ঝুড়ি ,টিস্যু, সাবান এসবের ব্যবস্থা থাকা উচিত। টয়লেট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি। প্যাড ভেন্ডিং মেশিনের ব্যবস্থা করা গেলে তো আরো ভালো। পিরিয়ড লজ্জার বিষয়, এই ট্যাগ লাইন দূর করতে হবে। ফার্মেসিগুলোয় স্যানিটারি ন্যাপকিনের প্যাকেটগুলো প্রথম সারিতেই সাজানো থাকে। তাহলে মানুষের মধ্যে এই জড়তাগুলো কেন থাকবে। সমাজের এই দৃষ্টিভঙ্গি পালটানো উচিত। জানা উচিত এবং মানা উচিত ঋতুচক্র শারীরিক পরিবর্তনের অংশ।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় আন্তরিক বলে জানান গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এস তাসাদ্দেক আহমেদ। তিনি বলেন, মেয়েদের স্বাস্থ্য ভালো থাকুক এটা আমরা সবসময় চাই। আমরা নারী দিবস পালন করি। মেয়েদের বাথরুমও আলাদা, তাদের স্বাস্থ্য ভালো থাকুক এটা আমরা চাই। ভেন্ডিং মেশিনের বিষয়ে আমরা খোঁজ খবর নেবো। এটা আমাদের ছাত্রীদের জন্য ভালো হলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা করার চেষ্টা করবো। শিক্ষার্থীদের ভালোর জন্য যা যা করতে হয় অবশ্যই করবো।
‘এ ছাড়া শৌচাগারগুলোর সার্বিক দায়িত্বে যারা আছে, যারা পরিষ্কারের কাজ করে; ট্যাপ ভাঙা-টাঙা থাকলে আমরা চাকরিই রাখবো না। এ বিষয়ে আমরা কঠোর পদক্ষেপ নেবো। এমন অবস্থা কেন থাকবে, আমরা প্রতিমাসে বেতন দিচ্ছি। প্রয়োজনীয় সবকিছু কিনে দিচ্ছি তারপরও খারাপ অবস্থা থাকলে আমি কঠোর পদক্ষেপ নিবো। তারপরও কোনো ধরনের সমস্যা থাকলে আমি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলবো তারা লিখিত অভিযোগ দিক, দরখাস্ত দিক এ বিষয়ে। তাহলে আমাদের জন্য সুবিধা হবে।’
তিনি বলেন, সব বাথরুমে গিয়ে তো খোঁজা সম্ভব না। এসবের জন্য আমাদের লোক আছে, তারা ফাঁকিবাজি তো করবেই। সেটা আমাদেরকে জানাতে হবে তো। শ্রেণিকক্ষ, শৌচাগার অপরিচ্ছন্ন থাকলে সেটা আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য ক্ষতিকর। আমরা মনিটরিং আরো বাড়ানোর ব্যবস্থা করবো, আমরা প্রত্যেক বিভাগে বিভাগে যাওয়া শুরু করছি। এতদিন করোনার জন্য যাওয়া হয়নি। আর যারা দায়িত্বে আছে তাদেরকেও আমরা সতর্ক করবো। পরিবেশ আরো হাইজেনিক রাখার ওপর জোরদার পদক্ষেপ দেবো।
সানজিদা জান্নাত/এনএইচ
আরো পড়ুন