খিলবিহীন শৌচাগারের দরজায় কলমই ভরসা
বিনায়েক রহমান প্রধান, তিতুমীর কলেজ || রাইজিংবিডি.কম
সরকারি তিতুমীর কলেজ
যাত্রাবাড়ী থেকে সকাল ৯টায় ক্যাম্পাসে এসেছেন সামিয়া আকতার। থাকবেন দুপুর ২টা পর্যন্ত। এর মধ্যে ক্লাস, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, খুনসুটি চললেও ওয়াশরুমে যাওয়ার প্রয়োজনের কথা মনে হলেই যেন তার মাথায় দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়ে যায়। এমনই হাজার হাজার শিক্ষার্থীর রোজকার দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সরকারি তিতুমীর কলেজের ওয়াশরুমগুলোর বেহাল দশা। এ যেন আতঙ্কের আরেন নাম।
রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত সরকারি তিতুমীর কলেজ ঢাকার সুনামধন্য কলেজগুলোর মধ্যে একটি। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরেই এখানকার হাজারো শিক্ষার্থী ওয়াশরুম ব্যবহারে ভোগান্তিতে পড়ছেন। ব্যবহারের অনুপযোগী এই ওয়াশরুমগুলোর দীর্ঘ দিন ধরে নেই কোনো সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ। ফলে প্রতিনিয়ত ভোগান্তি বাড়ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, নিয়মিত পরিষ্কার না করায় অপরিচ্ছন্ন ও নোংরা হয়ে আছে প্রতিটা ডিপার্টমেন্ট ও ভবনের ওয়াশরুমগুলো, ব্যবহার করার পরিবেশ নেই প্রায় সবকটি ওয়াশরুমেরই। অকেজো পানির কল, পানি সংকট, নেই পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাও। আবার কিছু কিছু ওয়াশরুমের পানির কলগুলো ভেঙে গেছে। লাইটিংয়ের ব্যবস্থা থাকলেও কোনো ওয়াশরুমে আলো নেই।
দেখা যায়, বেশিরভাগ লাইনেরই সুইচ নষ্ট কিংবা ভাঙা। বেশিরভাগ ওয়াশরুমেই নেই দরজা, আর থাকলেও সেটা ভাঙা কিংবা অকেজো। কলম দিয়ে চালাতে হয় দরজার ছিটকানি। এমনই জরাজীর্ণ অবস্থায় ব্যবহার করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সংস্কারের অভাবে এমনটি হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
এবিষয়ে সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী প্রমা শর্মা বলেন, ‘কলেজের ওয়াশরুমগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ, বেশিরভাগ সময়ই পানির সংকট কিংবা পানি থাকেই না বলা যায়। বেশিরভাগ ওয়াশরুমের লাইট নেই, ফলে অন্ধকারেই আমাদের যেতে হয়। বেসিনগুলোতে হাত ধোঁয়ার জন্য সাবান পর্যন্ত নেই। এ ছাড়াও স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের পর তা ফেলার জন্য যে ডাস্টবিনের প্রয়োজন হয়, সেটিও নেই কোনো ওয়াশরুমে। এ ছাড়াও ওয়াশরুমের পরিবেশ অনেক বেশি নোংরা ও অপরিচ্ছন্ন, যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষতিকর কিন্তু তারপরও বাধ্য হয়ে আমাদের এই ওয়াশরুম ব্যবহার করতে হচ্ছে।’
এবিষয়ে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেরুন্নেসা মেহের বলেন, ‘ক্লাসের বাইরে বাকি সময় আমরা কমনরুমে থাকি কিন্তু কমনরুমের ওয়াশরুমের অবস্থা এত খারাপ যে তা ব্যবহারের প্রায়ই অনুপযোগী। দরজার লক করা যায় না। ওযু করা তো দূরের কথা, প্রয়োজনীয় কাজই করা যায় না। এ ছাড়া, নিচতলার ওয়াশরুমেরও এত বেশি দুর্গন্ধ যে যাওয়াই যায় না। এমনকি মাঝে মাঝে ওয়াশরুমের মধ্যে কেঁচো ও বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড়ও দেখা যায়। এ ছাড়াও, ওয়াশরুমের অবস্থা এত নোংরা ও অপরিচ্ছন যে মাঝে মাঝে পা পিছলে পড়ে যাওয়ার অবস্থা হয়। খিলও নেই, কলম দিয়ে বানাতে হয়।’
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী জুনায়েদ হাসান বলেন, ‘বেশিরভাগ ওয়াশরুমের পানির ট্যাপ নেই, থাকলেও ভাঙা এবং জরাজীর্ণ। দরজা-জানালাও ভাঙা বেশিরভাগ ওয়াশরুমের। কমোডের ফ্ল্যাশগুলো অকেজো ভাঙা। ব্যবহারের অনুপযোগী।’
শিক্ষা প্রোকৌশল অধিদপ্তরের গাফিলতির কারণে এসব সংস্কার হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. মহিউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমরা ওয়াশরুম সংস্কারের ব্যাপারে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে আবেদন করেছি, কিন্তু আবেদনের কোনো সাড়া পাচ্ছি না। তবে কলেজ প্রশাসন থেকে কিছু কিছু ওয়াশরুমে সংস্কারের কাজ করা হয়েছে। এ ছাড়া, শিক্ষা প্রকৌশলের সাড়া পেলে আমরা শিগগিরই এসব সংস্কার করবো।’
/এইচএম/
আরো পড়ুন