ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘আমি ঢাবিয়ান না, তবুও ঢাবিয়ান’

স্বপ্নিল চৌধুরী  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১৭, ১ জুলাই ২০২২   আপডেট: ০২:২২, ১ জুলাই ২০২২
‘আমি ঢাবিয়ান না, তবুও ঢাবিয়ান’

ছবি: সংগৃহীত

গৌরবের ১০১ বছর...

শুভ জন্মদিন আমার অস্তিত্বে মিশে থাকা প্রিয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। 

অদ্ভুত এক মায়ার নাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। 

আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর ছাত্র না। তবুও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমার কাছে একটা ভালোবাসার নাম। ঢাবি’র সাথে আমার মিতালি অনেক দিনের। ঢাকা শহরে আমার সবচেয়ে বেশি সময় কেটেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়েই। 

ঢাবিতে এলে এখনও শাহবাগে বসে মানুষের জীবন-যাপন দেখতে ভাল লাগে। এখনও টিএসসির মোড়ে সন্ধ্যা বাদে চা আর ঝালমুড়ি খেতে আমার দিব্যি আনন্দ লাগে। যতক্ষণ—ই ঢাবিতে থাকি মনে হয় সবচেয়ে ভালো আছি। 

ঢাবিতে গেলে এখনও মাঝেমধ্যে বিভিন্ন হলে পরিচিতদের রুমে গিয়ে ঢুঁ মারি। হলের খাওয়া-দাওয়াও হয়েছে অনেক দিন। এত এত মানুষের সাথে বসে খেতে আলাদা একটা আনন্দ কাজ করে। খাবার যেমন মানের—ই হোক, সবসময় খাবারের মানটা বোধহয় ফ্যাক্ট না। 

আবেগ জিনিসটা আলাদা বিষয়, ঠিক তেমনি ঢাবির হলের খাবারও। আমি যদিও এআইইউ’য়ান ছিলাম, তবুও আমার ইউনিভার্সিটি লাইফের বেশিরভাগ দিনগুলোতে ঢাবির ফজলুল হক হলেই থেকেছি আমার বন্ধুর সাথে। কার্জন হলে আড্ডা মেরেছি-ক্রিকেট খেলেছি বন্ধুদের সাথে। আমাদের কতো দুরন্তপনার সাক্ষী এই ঢাবি।

রাতের নিস্তব্ধতায় নিজেকে কতবার খুঁজেছি শহীদুল্লাহ হলের পুকুর পাড়ে বসে। ভালো থাকার জন্য এর চেয়ে বেশি কিছু এক জীবনে লাগে না। একদম—ই না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে অনেককিছু শিখিয়েছে, অনেককিছু দিয়েছে। 

আমার লেখা প্রথম বই ‘জার্সি নম্বর ৯৬’ ফজলুল হক হলের ১৩৪ নম্বর রুমে বসে লেখা। আমার কত নির্ঘুম রাতের সাক্ষী এই ফজলুল হক হল! আমার লেখা বইয়ের প্রতিটি শব্দের সাথে মিশে আছে ঢাবি। 

রোকেয়া হলে দুজন বান্ধবী ছিল আমার। এরা আমাকে শিখিয়েছে, কীভাবে ভেঙে পড়ে যাওয়া থেকে উঠতে হয়। জীবনে সফল হওয়ার চাইতে ভালো মানুষ হওয়াটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এটাও ওদের সাথে না মিশলে বুঝতাম না। ওদের কাছ থেকেই শিখেছি, কীভাবে মায়ের জাতি মেয়েকে সম্মান দিতে হয়। তাদের অধিকার নিয়ে কথা বলতে হয়। কীভাবে মেয়েদের ওপর যেকোনও অন্যায়-অবিচার এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হয়। ওদের সাথে পরিচয় না হলে হয়তো জীবনের ষোলআনাই বৃথা যেত। লাইফে অনেক বন্ধু পেয়েছি। ওদের মতো কাউকে পাইনি। একদম—ই পাইনি। 

ও হ্যাঁ, টিএসসির বিকেলের আড্ডার কথা বাদ থাকবে কেন। টিএসসি, কলাভবন, কার্জন হল, ফজলুল হক হল, মধুর ক্যান্টিন, হাকিম চত্বর, মার্লো চত্বর, ডাস, রোকেয়া হল— এই সবগুলো আমার জীবনের সাথে মিশে থাকা সবচেয়ে বড় গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের নাম। 

প্রিয় ঢাবি, আজ তোমার ১০১তম জন্মদিন। ঢাবি, আমি তোমার না হয়েও অনেক ভালবাসি তোমাকে। ঢাবিয়ান না হওয়া এই আমার অনেকটা জুড়েই ঢাবি। প্রিয় ঢাবি, নিশ্চয়ই এরকম অনেক জনের—ই ভালোবাসা পাও তুমি। এটাও তোমার সার্থকতা। 

এখন মাঝে মাঝে খুব আফসোস হয় আমার। কেন প্রথম থেকেই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্নে বিভোর ছিলাম। কেন আরেকটু পরিশ্রমী হলাম না, আরেকটু মনোযোগ দিয়ে পড়লাম না। কেন ঢাবিতে এডমিশন টেস্ট দিলাম না! তাহলে হয়তো আজ তোমার ভাগীদার হতে পারতাম। তোমার পুরোটা জুড়ে থাকতে পারতাম। তাহলে বোধহয় আমার আক্ষেপের গল্পটা আজ লিখতে হত না। পরক্ষণেই এই ভেবে সান্ত্বনা খুঁজি ‘খুব প্রিয় কিছু আমাদের জীবনে সাময়িক অনুপস্থিত থাকাও হয়তো ভাল’। সাময়িক অনুপস্থিতিটা হয়ত একটা পরীক্ষা। এই সাময়িক অনুপস্থিতিটা না থাকলে বুঝা যায় না, ভালবেসেছি কিনা। 

ঢাবি তোমার সাময়িক অনুপস্থিতি আমাকে তোমার খুব কাছে টেনে এনেছে। তোমার জন্য ভালোবাসাটাও বাড়িয়ে দিয়েছে, আগের চেয়ে অনেক বেশি। তুমি এরকমই আজীবন ভালবাসা হয়ে থেকো আমার কাছে। তোমাকে নিয়ে আমার হাজারো স্মৃতি আছে, তোমার না হয়েও। 

কে বলেছে, ঢাবি তুমি আমার না? ঢাবি তুমি আমার খুব কাছের। আমার অস্তিত্ব, আবেগ, অনুভূতি, ভালোবাসাজুড়ে থেকে যাবে বাকি জীবন। 

ধন্যবাদ, আমার জীবনে ভালোবাসার এরকম অনুভূতি দেওয়ার জন্য। পুনর্জন্ম বলে যদি কিছু থেকে থাকে, তাহলে পরের জন্মে আমি ঢাবিয়ান—ই হতে চাই। ঢাবি আমি একান্ত তোমার হতে চাই। 

ঢাবিয়ান সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

তিমির ভেদি এনেছো আলো 
দিয়েছো মুক্তি হায়,
শতবর্ষে দাঁড়িয়ে আছ স্বমহিমায়।

ঢাকা/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়