ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

কোন পথে শিক্ষাব্যবস্থা?

সুজন মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:২৭, ২ আগস্ট ২০২২  
কোন পথে শিক্ষাব্যবস্থা?

নড়াইলে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরানো, সাভারে আশুলিয়ায় কলেজশিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে হত্যা, রাজশাহীর গোদাগাড়ীর রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে পেটানো— এগুলো বিচ্ছিন্ন কোনও ঘটনা নয়। বিগত কয়েকবছর যাবত শিক্ষকদের ওপর শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অল্প কিছু ঘটনা মানুষের সামনে আসলেও অধিকাংশ থেকে যাচ্ছে লোকচক্ষুর অন্তরালে। শিক্ষার্থী, বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি, রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী শিক্ষক; বিশেষত স্থানীয় ‘পাতি নেতার’ দ্বারা প্রতিনিয়ত মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন মানুষ গড়ার কারিগররা। শহর পর্যায়ের ঘটনাগুলো মিডিয়াতে হইচই ফেললেও, গ্রামাঞ্চলের নিভৃতপল্লীতে অধিকাংশই অপ্রকাশিত থেকে যাচ্ছে। 

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটিগুলো এলাকার প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের অনেকটাই কুক্ষিগত। নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থের বাইরে তাদের শিক্ষা নিয়ে ভাবার সময় কোথায়! প্রতিষ্ঠানের স্বার্থের বিপরীতে গেলে যেসব শিক্ষক প্রতিহত করার চেষ্টা করেন, তাকেই নানাভাবে হেনস্তার শিকার হতে হয়। নীতি, আদর্শ বিবর্জিত কিছু শিক্ষক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থে শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করছেন, যা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার পরিবেশকে ধ্বংস করছে।

এসব সমস্যা সমাধানে সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও উদ্যোগের ঘাটতি রয়েছে। বছর বছর শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করা হচ্ছে। কিন্তু শিক্ষকদের নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পাঠদানে প্রশিক্ষিত করার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। ২০২৩ সাল থেকে যে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হতে যাচ্ছে সেখানে শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করা হয়েছে। এই শিক্ষাক্রম সফলভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে হয়ত শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে। কিন্তু তা বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষকদের কি যথাযথ প্রশিক্ষণ-দক্ষতা আছে? মাধ্যমিক পর্যায়ের কয়েকজন শিক্ষকের বরাতে জানতে পারলাম, নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের জন্য এ ধরনের কোনও প্রশিক্ষণ তারা পাননি। ফলে শিক্ষকদের দক্ষতার অভাবে নতুন এই শিক্ষাক্রম যে মুখ থুবড়ে পড়বে সে আশঙ্কা অনেকাংশেই থেকে যায়। 

শিক্ষায় সরকারের বাজেট শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতির জন্য যথেষ্ট নয় একথা সর্বজনবিদিত। দেশের শিক্ষাবিদরা অনেক দিন যাবত শিক্ষাখাতে মোট বাজেটের ২০ শতাংশ এবং জিডিপির ৬ শতাংশ দাবি করে আসছেন। ইউনেস্কোর পরামর্শও ছিল, একটি দেশের মোট জিডিপির ৬ শতাংশ শিক্ষা খাতে ব্যয় করা উচিত। কিন্তু ২০২২-২৩ অর্থবছরে শিক্ষাখাতে বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে মোট বাজেটের ১২.০১ শতাংশ এবং জিডিপির ১.৮৩ শতাংশ। শিক্ষাক্ষেত্রে এই বাজেট কোনও দেশের শিক্ষার উন্নতির জন্য যথেষ্ট নয়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এই বরাদ্দ সর্বনিম্ন। কোনও দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন অবশ্যই প্রয়োজন তবে মানবসম্পদ উন্নয়নকে অবহেলা করে নয়। নীতিনির্ধারকেরা এদেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে চিন্তিত নন, বরং তাদের ছেলে-মেয়েদের উচ্চশিক্ষার জন্য পশ্চিমাদেশগুলোতে পাঠিয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচেন। 

একটি জাতির মূল ভিত্তিই গড়ে ওঠে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে। তাই জাতিগত উন্নয়নের জন্য সরকারকে এখনই শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কারে মনযোগী হতে হবে। এজন্য একদম গোঁড়া থেকেই নতুন করে গড়তে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটিতে যোগ্য ও শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের জায়গা দিতে হবে। শিক্ষাখাতে বাজেটের পরিমাণ বাড়াতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার পরিবেশ সুনিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে নোংরা রাজনীতিতে যেন শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত না হয়, সেটি নিশ্চিত করা জরুরি। গবেষণায় পর্যাপ্ত বরাদ্দ বাড়ানো ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরকে গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সমস্যার কারণ ও যথাযথ প্রতিকার খুঁজে বের করতে পারলেই শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তনের মাধ্যমে ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়ন করা সহজ হবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। 
 

ঢাকা/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়