ঢাকা     মঙ্গলবার   ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ১৮ ১৪৩১

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জাবিতে কনসার্ট, ভিড়ে অসুস্থ উপাচার্য

জাবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:২৮, ১১ নভেম্বর ২০২৪   আপডেট: ১৭:৪৪, ১১ নভেম্বর ২০২৪
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জাবিতে কনসার্ট, ভিড়ে অসুস্থ উপাচার্য

সিন্ডিকেটের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মুক্তমঞ্চে কনসার্টের আয়োজন করেছে মানিকগঞ্জ জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতি। এ আয়োজনকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে অবাধে বহিরাগত প্রবেশ করে। এতে ভেঙে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মুক্তমঞ্চের আশে-পাশে, খেলার মাঠ, সপ্তম ছায়ামঞ্চ সহ বিভিন্ন স্থানে বসে মাদক ও গাঁজার আসর।

এছাড়া আয়োজক কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনার কারণে অনুষ্ঠান দেখতে গিয়ে ভীড়ের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েন উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান। পরবর্তীতে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।

রোববার (১০ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে কনসার্টের আয়োজন করা হয়। এদিন বিকাল থেকেই কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, মুক্তমঞ্চ ও এর আশেপাশের এলাকায় জড়ো হতে থাকে সাভার ও আশেপাশের এলাকার মানুষ।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশের সুরক্ষায় এ ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজনে সিন্ডিকেট কর্তৃক নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজনের অনুমতি দেওয়া হলেও তা রাত ১০টার মধ্যে শেষ করার নির্দেশনাও ছিল। তবে মানিকগঞ্জ জেলা সমিতির এ অনুষ্ঠান নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে চলে রাত আড়াইটা পর্যন্ত।

এদিকে, বিভিন্ন বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা চলমান থাকায় কনসার্টের সাউন্ড বক্সের উচ্চ শব্দে বিপাকে পড়েন শিক্ষার্থীরা। মধ্যরাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ নিয়ে তারা ক্ষোভও প্রকাশ করেন।

প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সুলতানুল মুল্ক শুভ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লেখেন, ‘যারা এত রাত পর্যন্ত কনসার্ট চালালেন, কি লাভটা পেলেন, বলেন তো? কম অপ্রীতিকার পরিস্থিতি সৃষ্টি করেননি আজকে। রাতের আড়াইটা বাজে, এখনো সাউন্ড আসতেছে। অনেকগুলো ডিপার্টমেন্টের পরীক্ষা চলতেছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা এমএইচ হলের। আমার সিনিয়রদের রাত পোহালেই ফাইনাল পরীক্ষা আছে। ২টার দিকে এক ভাই বলছে না পারছি পড়তে, না পারতেছি ঘুমাতে, কালকে কি পরীক্ষা দিব!’

তিনি আরও লেখেন, ‘আপনারা খুশি করতে পেরেছেন সাভারবাসীকে। কিন্তু পুরো ক্যাম্পাসের ২০ হাজার স্টুডেন্ট সবাই এখন আপনাদের উপর ক্ষিপ্ত। কিছু স্টুডেন্ট আপনাদের উপর সামনে প্রশাসনিক ব্যবস্থাও নেবে। এত টাকা পয়সা খরচ করে কি লাভটা পেলেন? এই টাকা দিয়ে আপনার জেলা সমিতির অনেক স্টুডেন্টের জন্য মেধাবৃত্তি চালু করতে পারতেন।’

অন্যদিকে, অনুষ্ঠান চলাকালে বহিরাগতদের প্রকাশ্যে মাদক সেবনের রমরমা আসর বসাতে দেখা যায় মুক্তমঞ্চ সংলগ্ন এলাকায়। এছাড়া ছাত্রী হল এলাকায় বহিরাগতদের অবাধ বিচরণ ও ইভটিজিংয়ের ঘটনাও ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান ও উপাত্ত বিজ্ঞান বিভাগের ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী আয়মান সুস্মি ফেসবুকে লেখেন, ‘কনসার্টে আমি এবং আমার চার বান্ধবি অংশগ্রহণ করি। এমন সময় আমার এক বান্ধবি দলছাড়া হয়ে যায় এবং সে একটু সামনে এগিয়ে যায়। তখন এক বহিরাগত তার দিকে বাজে দৃষ্টিতে তাকায় এবং হেনস্তামূলক কথা বলে। এক ভলান্টিয়ার ভাইয়ের হস্তক্ষেপে সেই বহিরাগত প্রস্থান করে!’

তিনি আরও লেখেন, ‘আমরা কিছুদিন পর ক্যাম্পাস থেকে চলেই যাব! এই শেষ সময়ে এসে এ রকম অপ্রীতিকর ঘটনার সম্মুখীন হওয়া খুবই দুঃখজনক! এ রকম প্রোগ্রামে বহিরাগত অযাচিত প্রবেশ এবং হয়রানিমূলক আচরণের জন্য আমরা ক্যাম্পাসে কোনো প্রোগ্রাম উপভোগ করতে পারি না। নিরাপত্তা অনুভব করতে পারি না! বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, এখন সামান্য উত্যক্ত করছে, আগামীতে বড় কিছু হতে পারে। এখনই ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।’

গভীর রাত পর্যন্ত উচ্চশব্দে কনসার্ট চলায় সামগ্রিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

অনুষ্ঠানের সামগ্রিক অব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. সুলতানা আক্তার ফেসবুকে লেখেন, ‘আমি মানিকগঞ্জ জেলা ছাত্র কল্যাণ সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। আমি আজকের অনুষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত নই। গরীব, মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তির ব্যবস্থা করার উদ্দেশ্য নিয়েই আজ থেকে ১৫ বছর আগে মানিকগঞ্জ জেলা ছাত্র কল্যাণ সমিতি প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। ১৫ বছর ধরে সংগঠনের সাথে আছি কিন্তু আজ আমি ক্যাম্পাসে থেকেও এই অনুষ্ঠানে নেই। আমার সাথে এটা যায় না।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাবির অ্যাকাডেমিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় গত বছর র‍্যাগ ডে, ব্যাচ ডে, পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে পালনে নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ মুক্তমঞ্চে যে কোনো অনুষ্ঠান সীমিতকরণের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এখন ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় প্রধান নিবার্হী পরিষদ সিন্ডিকেট সভায় পাস হওয়া সে সিদ্ধান্তের তোয়াক্কা না করে ক্রমাগতভাবে দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের অনুমতি।

সুনির্দিষ্ট নিয়ম থাকার পরেও অনুমতির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর বলেন, ‘আমরা সবাই চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ, প্রকৃতি, পড়াশোনার পরিবেশ, আইন-শৃঙ্খলা বজায় থাকুক। গতকাল (রোববার) একটি ভুল হয়েছে। আমরা চাই না, সামনে এ রকম ভুল আরও হোক। এরই প্রেক্ষিতে আমরা আজ নতুন করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছি।’

উপাচার্যের অসুস্থতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গতকাল (রোববার) সারাদিন বিভিন্ন মিটিংয়ে অংশ নিয়ে তিনি স্ট্রেস ফিল করেন। ব্লাড প্রেশার জনিত কারণে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে মেডিক্যাল সেন্টার থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা সহায়তা গ্রহণ করেছেন তিনি। আজ উপাচার্য বেড রেস্টে আছেন।’

/আহসান/মেহেদী/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়